ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


অর্থ সংকটে বিদেশফেরত শ্রমিকরা


১৩ মার্চ ২০২১ ১৭:৩৯

ফাইল ছবি

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সরকার বিদেশফেরত শ্রমিকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ৭০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও কোনো কাজে আসেনি। চলতি অর্থবছরের আর তিন মাস বাকি থাকলেও প্রণোদনা প্যাকেজের মাত্র ২০ ভাগও দিতে পারেনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এদিকে বিদেশফেরত দুই লাখের বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী এখন দিন কাটাচ্ছেন চরম অর্থ সংকটে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীর জন্য প্রণোদনায় ৪ শতাংশ সরল সুদে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিশেষ পুনর্বাসন ঋণের সুবিধা তারা পাননি।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিদেশফেরত অভিবাসীদের জীবন ও জীবিকায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর আগেই করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য খাতের মতো অভিবাসীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। ঘোষিত প্রণোদনার ৭০০ কোটি টাকার মধ্যে গত বছর জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০৯ কোটি টাকার ঋণ সরবরাহ করতে পেরেছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এর মধ্যে অভিবাসন ঋণ, পুনর্বাসন ঋণ ও বঙ্গবন্ধু বৃহৎ পরিবার ঋণ বাবদ ৭৭ কোটি এবং বিশেষ পুনর্বাসন ঋণবাবদ ৩৯ কোটি টাকা সরবরাহ করা হয়েছে। এতে বিদেশফেরত প্রায় দুই লাখের বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ১২৭ জন অভিবাসী এ সুবিধা পেয়েছেন।

এদিকে এক সমীক্ষায় দেখে যায়, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত কর্মীদের মধ্যে ৯১ শতাংশই সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা পাননি। ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীদের ৮৭ শতাংশেরই দেশে কোনো আয়ের উৎস নেই। ৭৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা এখন প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। ৩৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশফেরত অভিবাসীরা ঘোষিত প্রণোদনার জন্য ঋণ নিতে এলেও বিভিন্ন সিদ্ধান্তহীনতায় তারা আর বেশিদূর অগ্রসর হন না। বিদেশফেরত ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ কর্মীরই দেশে ব্যবসা বা নতুন কিছু করার অভিজ্ঞতা নেই। যেজন্য তারা যে কাজের জন্য ঋণ নিতে আসেন সেই কাজে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণও নেই। ফলে প্রকল্প বিবেচনায় তাদের ঋণ দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে চলতি অর্থবছরে প্রথমদিকের তুলনায় এখন প্রণোদনার ঋণ নেওয়ার হার বেড়েছে। তারপরও চলতি অর্থবছরের শেষে বিদেশফেরত কর্মীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ৭০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের বেশিরভাগ অর্থই পড়ে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক গবেষণায় দেখা যায়, বিদেশফেরত অভিবাসীদের প্রায় ৭১ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এসব অভিবাসীর দিন কাটছে ধারদেনায়। তারা না পারছেন জীবিকা চালাতে, না পারছেন বিদেশ যেতে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করোনার প্রকোপ কমলে ৮৭ শতাংশই আবার বিদেশে ফিরতে চান। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে বিদেশফেরত অভিবাসীদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ২০ ভাগ বেড়ে ৭১ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রথম ধাপের গবেষণায় এই হার ছিল ৫০ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অভিবাসীদের অর্ধেকের বেশি লাখ টাকার ওপরে ঋণের বোঝা টানছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসীরা ঋণ করে বিদেশ গেছেন এবং করোনার কারণে দেশে ফিরেও ঋণ পরিশোধে তারা আবারো টাকা ধার করেছেন। কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন করতে চেয়েছেন ৬০ শতাংশ বিদেশফেরত অভিবাসী। অভিবাসীরা বলছেন, অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান ও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে টাকা ধার করা, খরচ কমানো এবং অর্থ সহায়তার ওপর তারা নির্ভরশীল। এ কাজে বিদেশফেরত ৫০ শতাংশ অভিবাসী অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন। তাদের ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালের জুনের চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে বেড়েছে। এছাড়া বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেক চাকরি খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়ছেন। যদিও প্রথম ধাপের গবেষণার চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে এসে বেকারত্ব ৭৪ শতাংশ থেকে কমে ৬৪ শতাংশে নেমেছে। মূলত লকডাউন তুলে দেওয়া, সাধারণ কর্মকাণ্ড উন্মুক্ত হওয়া এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ উঠে যাওয়াতেই বেকারত্ব কিছুটা কমেছে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার টাকা যদি বিদেশফেরত কর্মীরা সময়মতো ও জটিলতায় ছাড়ায় পেত, তাহলে তাদের আর ধার-দেনায় জর্জজিত হতে হতো না। এক্ষেত্রে সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।