ঢাকা রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১


ভয়াবহ জালিয়াতি: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ


২৩ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৩৯

প্রতিকি

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হতে ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে ‘এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লি:’ নামের অসৎ ওষুধ কোম্পানি। অন্যের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানির নামে দেখানো এবং কোম্পানির পেইড অফ ক্যাপিটাল প্রশ্নবিদ্ধ উথ্যান। কোম্পানির বিরুদ্ধে পূঁজিবাজার থেকে শতকোটি কোটি টাকা উঠানোর এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র লিপ্ত বলে জানা গেছে।

কারওয়ান বাজার মৌজাস্থিত ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ সম্পত্তিটির মালিক রাজধানীর ১১/৮/সি, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট নিবাসী একেএম খোরশেদ আলম। সম্পত্তির ওপর রয়েছে ৮তলা ভবন। এটি বন্ধক রেখে অগ্রণী ব্যাংক আমিনকোর্ট শাখা থেকে ঋণ নিয়েছেন তিনি। যে দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তিটি অগ্রণী ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখেছেন সেটির নম্বর-৩৩৫২। দলিলটি সম্পাদিত হয়েছে ২০১৩ সালে তেজগাঁও সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। তৎকালিন সাব-রেজিস্ট্রার এসএম সোহেল রানা মিলনের স্বাক্ষরে দলিলটির নিবন্ধন হয়। দলিলটি ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ হওয়ায় সম্পত্তির মূল্যমান ছিল অনির্ধারিত।


এই দলিলের সম্পত্তিই ‘নিজের’ দাবি করে ইনিশিয়াল পাবলিক অফার (আইপিও) ছাড়ছে ‘এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লি:’ নামের ওষুধ কোম্পানি। তবে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উঠেছে জালজালিয়াতির অভিযোগ। সম্পত্তির অবিশ্বাস্য অতিমূল্যায়নের অভিযোগও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে আইপিও ছেড়ে ৯৫ কোটি টাকা তুলে নেয়ার আনুষ্ঠানিকতা এখন চূড়ান্ত। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে নেয়া হবে আইপিও আবেদন। চলবে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রসপেক্টাসের তথ্যমতে, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৫০ টাকা। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই ৫০ টাকার ৩০% ডিসকাউন্ট অর্থাৎ ৩৫ টাকা অথবা ২০ টাকা, যেটি কম সে মূল্যে শেয়ার পাবেন। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের প্রতিটি শেয়ার ২০ টাকা করে কিনতে পারবেন।
অভিযোগ উঠেছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটিকে গত ৩১ আগস্ট বিডিংয়ের অনুমতি দেয়। কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ৯৫ কোটি টাকা তুলবে। তবে প্রায় শত কোটি টাকা সংগ্রহ কিংবা লুণ্ঠন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয় ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে। এতে অন্যের সম্পত্তি নিজের বলে দাবি করা হয়। সে অনুযায়ী বিশ্বাসযোগ্যভাবে সৃজন করা হয় সম্পত্তির দলিলপত্রও। গুরুতর এই অভিযোগ সত্ত্বেও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লি:-এর আইপিও অনুমোদনপ্রাপ্তিসহ সব ধরনের সহায়তা করে মার্চেন্ট ব্যাংক ,বিএসইসি, অডিট ফার্ম একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে আইপিও ছাড়ার অনুমোদন গ্রহণের ক্ষেত্রে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড সম্পত্তির মূল্য দেখিয়েছে ১৪ গুণ অতিরিক্ত। পুঁজিবাজারের নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্যেই প্রিমিয়াম বেশি আদায় ও বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করতে পারিবারিক ওষুধ কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে অতিরঞ্জিত ও ভুয়া তথ্য। অসদুদ্দেশ্য বাস্তবায়নে চাহিদানুগ আর্থিক প্রতিবেদনটি তৈরি করে দেয় ‘আশরাফউদ্দিন অ্যান্ড কোং’ নামের একটি অডিট প্রতিষ্ঠান। আর শেয়ার ইস্যু করেছে ‘শাহজালাল ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট’ নামক আরেক বিতর্কিত পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লি:-এর আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ৯৩ লাখ টাকা পেইডআপ ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে হঠাৎ করেই ৮৭ কোটি টাকা মূলধনের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। অর্থাৎ মাত্র ২ বছরে ওষুধ কোম্পানিটির মূলধন বেড়ে যায় ৮৭ গুণ। কীভাবে ঘটল মূলধনের এই স্ফীতি? প্রসপেক্টাসে অবিশ্বাস্য এই পুঁজি বৃদ্ধির কোনো ব্যাখ্যা নেই।

প্রসপেক্টাসের ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় পরিশোধিত মূলধনের কিছু তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ১৯৭০ সালে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের পেইডআপ ক্যাপিটাল ছিল ১ হাজার টাকা। ১৯৯৮ এটি উন্নীত হয় ৭০ হাজার ৩৫০ টাকায়। অর্থাৎ ২৮ বছর প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়েছে ১০০০ টাকা মূলধন নিয়ে। ২০০৫ সালে পেইডআপ ক্যাপিটাল হয় ৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ইনিশিয়াল প্রাইমারি পাবলিক অফারিংয়ের অনুমোদন পেতে হঠাৎ করেই কোম্পানিটি মূলধন দেখায় ৮০ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার ৬৫০ টাকার নগদ ডিপোজিট। সাড়ে ৬ কোটি টাকার বোনাস শেয়ার দিয়ে মূলধন হয়ে যায় ৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এ ক্ষেত্রে মালিকানাধীন সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয় ওই সময়ে সংশ্লিষ্ট মৌজা মূল্যের চেয়ে অন্তত ১৪ গুণ বেশি। ২০১৪ সালে গাজীপুর কালিয়াকৈরে মৌজাদর ছিল কাঠাপ্রতি ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা করে কাঠা মূল্য ধরে দলিল করে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লি:। এভাবে ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত কালিয়াকৈর মৌজায় মোট সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয় ১১ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। শুধু কি তাই? ২০১৬ সালেই গাজীপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মূল্যতালিকায় কালিয়াকৈর ঠাকুরপাড়া মৌজায় এক ডেসিমেল জমির সর্বোচ্চ দাম ছিল ৪৫ হাজার ৬৭৬ টাকা। ওই মৌজায় ৫৪২ ডেসিমেল জমি দেখায় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। এর মধ্যে ২০১০ সালে ২৫০ ডেসিমেল জমির মূল্য দেখায় ৫ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে খরিদকৃত ১৩২ ডেসিমেল জমির দলিল মূল্য দেখানো হয় ২ কোটি ৯০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। একই বছর মার্চে কেনা হয় ৯৪ ডেসিমেল জমি। মে মাসে কেনা হয় ৬৬ ডেসিমেল জমি। এ দু’টির মূল্য যথাক্রমে ২ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ১ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। ওই সময় গাজীপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন দলিলে একেক কাঠা জমির মূল্য ১৩ থেকে ১৪ গুণ বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৬ সালে টঙ্গীর মাছিমপুর মৌজায় এক ডেসিমেল জমির সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ১৬ লাখ ২৯ হাজার ৩১৮ টাকা। কিন্তু এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ এখানকার জমিগুলোত ক্রয় মূল্যের ব্যবধান রয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকা। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পএলাকায় প্রতি ডেসিমেল জমির মৌজা রেট ছিল ৩৪ লাখ ৪ হাজার ৮০০ টাকা। এ হিসেবে ৩৩ ডেসিমেল জায়গার দাম ১১ কোটি সাড়ে ২৩ লাখ টাকা। কিন্তু এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ দেখিয়েছে ৩২ কোটি টাকা। তেজগাঁওয়ের এই সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে বিরাট প্রশ্ন।
প্রসপেক্টাসে জমির যে দলিল নম্বর (৩৩৫২) এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদিত হয়েছেÑ মর্মে উল্লেখ রয়েছে সেটির প্রকৃত মালিক জনৈক একেএম খোরশেদ আলম। এটি ছিল হাবিব ব্যাংকের সম্পত্তি। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট অর্ডার মূলে সম্পত্তিটি জাতীয়করণ করা হয়। ওই ব্যাংক সম্পত্তিটি নিলামে তুললে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার শোলা গ্রামের মরহুম মৌলভী গগন আলী খানের পুত্র একেএম খোরশেদ আলম সম্পত্তিটি কেনেন। এই সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। দলিল লেখক দলিলটি পেশ করলে তৎকালিন সাব- রেজিস্ট্রার এসএম সোহেল রানা ১৬/০৭/২০১৩ তারিখ স্বাক্ষর করেন।

কোম্পানির প্রসপেক্টাসে তেজগাঁওয়ের সম্পত্তিটির ‘দলিল মূল্য’ উল্লেখ করেছেন ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রসপেক্টাসের বিভিন্ন স্থানে অন্তত : ৭টি সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে এসবের মূল্যমান উল্লেখ করে। এর মধ্যে রয়েছে গাজীপুর কালিয়াকৈর, ঠাকুরপাড়ায় ২৫০ ডেসিমেল জমি (দলিল নং-৬৪৯১, মূল্য-৫০০০০০০০ টাকা), একই এলাকায় ১৩২ ডেসিমেল জমি (দলিল নং-৬৪৮৮, মূল্য-২৯০,৪০০০০ টাকা), ঠাকুরপাড়ায় ৯৪ ডেসিমেল জমি (দলিল নং-১৮৮৯, মূল্য-২০,৬৮০০০০ টাকা), একই মৌজায় ৬৬ ডেসিমেল জমি (দলিল নং-৬৫০০, মূল্য-১৪,৫২০০০০ টাকা), টঙ্গির মাছিমপুর মৌজায় ৯২.৮ ডেসিমেল জমি (দলিল নং-১১৮০৫, মূল্য-৪১৭৯০০০০০ টাকা), টঙ্গির একই মৌজার ০.৬ ডেসিমেল জমি (দলিল নং-১৯০৮০, মূল্য-২,৭০০০০০ টাকা) এবং ঢাকার তেজগাঁও মৌজায় ৩৩ ডেসিমেল জমি (দলিল নং-৩৩৫২, মূল্য-৩২৫০০০০০০ টাকা)। কোম্পানির উল্লেখিত সব সম্পত্তির মোট মূল্য দেখানো হয়েছে ৮৫ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর বাইরে রয়েছে রেজিস্ট্রেশন খরচ-৯৪,৫৭৭,৪৪৯ টাকা। জমির উন্নয়ন খরচ-৩৬৮,৬০৩,০২৪ টাকা। এভাবে কোম্পানির মোট সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয়েছে ১৩২ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার ৪৭৩ টাকা। ৩০৪ পৃষ্ঠার এই প্রসপেক্টাসের ৯৯ নম্বর পৃষ্ঠায় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের সম্পত্তির এই মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই সম্পত্তির এই হিসেবকে গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি একচেঞ্জ কমিশন। প্রতিষ্ঠানটিকে ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও) ছাড়ার অনুমোদনও দিয়েছে।

অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় প্রতিবেদক একেএম খোরশেদ আলম খানকে খুঁজে বের করেন। এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড’র প্রসপেক্টাসে নিজ দলিলের উল্লেখ দেখে তিনি আকাশ থেকে পড়েন। খোরশেদ আলম বলেন, এটি কেমন করে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের সম্পত্তি হলো? দলিলে উল্লেখিত তফসিলভুক্ত সম্পত্তির মালিক আমি। এটি এখন অগ্রণী ব্যাংকে বন্ধক রয়েছে। ভুক্তভোগী খোরশেদ আলম খান কোনো জালিয়াতচক্রের খপ্পরে পড়েছেন-নিশ্চিত হন। আইনগত পদক্ষেপ নিতে তিনি তৎক্ষণাৎ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ছুটে যান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে থানা-পুলিশ তার সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত গ্রহণ করেনি।

দাবিকৃত সম্পত্তির ভুয়া দলিল, সম্পত্তির অতিমূল্যায়ণ এবং অস্বাভাবিক পেইডআপ ক্যাপিটাল বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হয় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মনির আহমেদের সঙ্গে। তবে কোম্পানি সচিব ইশতিয়াক আহমেদ এ বিষয়ে কোন ব্যখ্যা দিতে পারেননি।

এদিকে প্রসপেক্টাসে দাবিকৃত সম্পত্তির মালিকানা নিশ্চিত না হয়ে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লি:-কে কি করে আইপিও ছাড়ার অনুমোদন দেয়া হলোÑ জানতে চাওয়া হয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)র কাছে। জবাবে সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি ততোটা ওয়াকিবহাল নই। এটি ক্যাপিটাল ইস্যুর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ভালো বলতে পারবেন। বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক (ক্যাপিটাল ইস্যু, মার্কেট সার্ভিলেন্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স, মুখপাত্র) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিএসইসি সাধারণত: প্রত্যাশী কোম্পানির সরবরাহকৃত ডকুমেন্ট এবং অডিট ফার্মের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইপিও অনুমোদন দেয়। জাল-জালিয়াতি কিংবা সম্পত্তির অতিমূল্যায়ণ হয়ে থাকলে দায়-দায়িত্ব অডিট ফার্মের। দাখিলকৃত ডকুমেন্ট যাচাই করার সক্ষমতা বিএসইসি’র নেই। এটি সময়সাপেক্ষও বটে। কেউ যদি কোনো কোম্পানির ডকুমেন্টের বিষয়ে আপত্তি কিংবা অভিযোগ দেনÑ আমরা সেটি খতিয়ে দেখি।

এদিকে মার্চেন্ট ব্যাংক ‘শাহজালাল ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লি:’ ভুয়া দলিল ও অতিমূল্যায়িত সম্পত্তির ভিত্তিতে কি করে এশিয়াটিকের শেয়ার ইস্যু করেছে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। জবাবে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আফজাল হোসেন প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত ৩৩৫২ ডিড নম্বরের সম্পত্তি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লি:’-এর মালিকানাধীন দাবি করে কোম্পানির পক্ষে পরিশোধিত খাজনা পরিশোধের রসিদ ও ডিসিআর সরবরাহ করেন। তবে উল্লেখিত দলিলটির কোনো কপি তিনি দাখিল করতে পারেননি।

সম্পত্তির ভুয়া তথ্য, অতিমূল্য দেখিয়ে আইপিও ইস্যু প্রসঙ্গে ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল’ (এফআরসি)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হামিদ উল্লাহ ভুঁইঞা এ প্রতিবেদককে বলেন, ফলস, ফেব্রিকেটেড ডকুমেন্টের ভিত্তিতে আইপিও ইস্যু হচ্ছে কি-না, সেটি ভেরিফাই করার দায়িত্ব বিএসইসি’র।

প্রথমত: কোম্পানিগুলো রিকগনাইজ কোনো ফার্ম দিয়ে অডিট করায় না। আইপিওতে আসার আগে তাদের অনেক রেপুটেড অডিটর থাকে। কিন্তু আইপিওর সময় অন্য অডিটর নিয়োগ দেয়। যাতে তাদের রিপোর্টে সাইন করে দেয় এবং অনিয়মের বিষয়ে কোনো আপত্তি না তোলে। এভাবে কৌশলে অনেক মিথ্যা তথ্য প্রসপেক্টাসে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অথচ আর্থিক প্রতিবেদন যাচাইয়ের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে এফআরসি। বিএসইসি যখন প্রতিবেদন হাতে পায়, তখন এফআরসিকে দিয়ে যাচাই করে নিলেই ঝুঁকি থাকে না। কিন্তু তারা সেটি করে না। সত্যি বলতে কেউ পাওয়ার ডেলিগেট করতে চায় না। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়েগকারীরা বার বার প্রতারিত হচ্ছেন।