নামিদামি ব্র্যান্ডের প্যাকেটে নিম্নমানের সেমাই

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের আশরাফবাদ এলাকায় অনুমোদন নিয়ে চলছে কর্ণফুলী সেমাইয়ের বিশাল কারখানা। ধুলাবালি ও শ্রমিকদের ঘামে অপরিচ্ছন্নভাবে তৈরি হচ্ছে এখানকার সেমাই। তবে এ সেমাই কর্ণফুলীর নামে প্যাকেটজাত হচ্ছে না, হচ্ছে দেশের নামি-দামি কিছু ব্র্যান্ডের প্যাকেটে। ডেকো ও একমির মতো প্রতিষ্ঠান এ অপরিচ্ছন্ন সেমাইকে নিজেদের স্বয়ংক্রিয় মেশিনে তৈরি বলে বাজারে চালিয়ে দিচ্ছে। একই সেমাই পাঁচ কম্পানির নামে প্যাকেটজাত করে ছাড়া হচ্ছে বাজারে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আশরাফবাদ এলাকার সেমাই, জুস ও সফট ড্রিংকসের কারখানায় র্যাবের বিশেষ অভিযানের সঙ্গে থেকে দেখা যায় এমন একাধিক দৃশ্য।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিএসটিআই থেকে হাবীবা ফুড প্রডাক্টস লি. কর্ণফুলী সেমাইয়ের অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করছে নিম্নমানের সেমাই। তাদের তৈরি সেমাই প্যাকেটে ঢোকানোর পর হয়ে যাচ্ছে একমি সেমাই, ডেকো সেমাই, শাহী মদিনা সেমাই ও বোম্বে সেমাই। সস্তা এসব সেমাই দামি ব্র্যান্ডের প্যাকেটে ঢোকানোর পর বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মোহাম্মদ রুবেল বলেন, ‘এখান থেকে শুধু একমি আর ডেকো নয়, প্রাণ কম্পানিরও পণ্য যায়। কেউ চাইলে আমরা দেব না কেন? আমাদের কম্পানির নামে ছাড়লে মানুষ কিনতে চায় না।’ আশরাফবাদ স্কুলের পশ্চিমে আরো একটি সেমাই কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সেমাইয়ের ওপর ময়লা পড়ে আছে। এই সেমাই কারখানাকে অপরিচ্ছন্নতার কারণে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত এক লাখ টাকা জরিমানা করেন।
আশরাফবাদের বড়গ্রাম ৫ নম্বর গলির ৩৫৭ নম্বর বাড়িতে আব্দুল কাদের ফুড লিমিটেডের কারখানায় পাওয়া যায় আম, লিচু, কমলাসহ বিভিন্ন ফলের স্বাদের জুস। নাকে আসে কাঁচা আমের গন্ধ। কিন্তু কোনো আম ছিল না। বোতলে লেখা আছে ‘নকল হইতে সাবধান’, ‘বিএসটিআই তালিকাভুক্ত পণ্য নহে’। জানা যায়, জুসজাতীয় এসব পণ্য তৈরিতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের দরকার হয় না। ভ্রাম্যমাণ আদালতে অংশ নেওয়া বিএসটিআইয়ের ফিল্ড কর্মকর্তা সিকান্দার জানান, এগুলো মূলত জুসের মধ্যেও পড়ে না। কেমিক্যাল, ঘন চিনি, সোডিয়াম, স্যাকারিন ব্যবহার করা হচ্ছে, যা শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বাচ্চাদের পেট ব্যথা এমনকি কিডনিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তারা যে পানি ব্যবহার করছে, সেটাও স্বাস্থ্যকর নয়।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, নিজেদের নামে কারখানার অনুমতি নিয়ে অন্য কম্পানির জন্য নিম্নমানের সেমাই বানিয়ে পাইকারি দেওয়া একধরনের প্রতারণা। অভিযানে রং ও বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা একটি জুস কারখানার প্রায় ৪৫ লাখ টাকার পণ্য জব্দ করা হয়েছে। অন্য একটি সফট ড্রিংকস কারখানার প্রায় ২৫ লাখ টাকার পণ্য জব্দ করা হয়েছে। মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
নতুনসময়/আইকে