দুর্নীতি অনুসন্ধানে তথ্য চেয়ে পূর্বাঞ্চল রেলের জিএমকে চিঠি দুদকের

রেলওয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে কর্মচারী, ঠিকাদার ও নিয়োগ প্রার্থীদের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পূর্বাঞ্চলে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সৈয়দ ফারুক আহমদের বরাবরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আগামী ১৫ মে’র মধ্যে তথ্যগুলো সরবরাহের জন্য।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাহী নিয়োগ (১৮৫) এবং আগুগঞ্জে গম বোঝাই ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতের ঘটনায় দুদকের আরো পৃথক দু’টি তদন্ত টিম কাজ করছেন। তবে ইতোমধ্যে সিপাহী নিয়োগের বিষয়ে নানাবিধ প্রাথমিক তদন্তে জিএম সৈয়দ ফারুক আহমেদ (চূড়ান্ত অনুমোদনকারী) ও নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক চীফ কম্যান্ডন্ট ইকবাল হোসেনসহ কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এ বিষয়ে আরো তদন্ত চলছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে রেলওয়ের যেসব কর্মচারী ও ঠিকাদারের মধ্যে যাদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে তারা হলেন, প্রধান বাণিজ্যিক দপ্তরের সহকারী দাবি পরিদর্শক (এসিআই) মো. অলী উল্লাহ সুমন (বহিষ্কৃত), তার ভাই ট্রাক সাপ্লাইয়ার অফিসের ইউডিএ জামায়াত সমর্থিত সংগঠনের নেতা আবুল বশর, তূর্ণা-নিশীথা ট্রেনের জেনারেটর রুমে কর্মরত পোর্টার খোকন মিয়া, মো. তুষার আলম, সরোয়ার আলম, মো. বাদল, রফিকুল আলম, লাকসামে কর্মরত সমর দে, নিয়োগ প্রার্থী মিজানুর রহমান, ঠিকাদার হাসান, আলমগীর, ঢাকা বিমানবন্দরের ফাস্টফুড শপের মালিক আকতারুজ্জামান।
দুদক চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ২০১২ সালের রেলের দুর্নীতিসহ কয়েকটি অভিযোগে সুমন ও তার ভাই আবুল বশরের নাম এসেছে। তারা দুই ভাইসহ রেলের একটি সিন্ডিকেট মিলে খালাসী, আয়া, টিকেট চেকার পদে ৩০-৪০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। বাকি ৩০০ জনের অধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ১২ কোটি টাকার মতো টাকা-পয়সা নিয়েছে। এগুলোসহ সম্প্রতি আরো কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মূলত এসব তদন্তের স্বার্থে আমি রেলে চিঠি দিয়েছি। এতে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এখানে আরো কেউ জড়িত আছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও দুদকের দেয়া চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ২০০৪ সাল হতে অদ্যাবধি ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জে কারা যোগদান করেছেন তাদের যোগদান পত্রের নথি, ২০১২ সালে নিয়োগকৃত মো. তুষার আলম, সরোয়ার আলম, মো. বাদল, রফিকুল আলম ময়মনসিংহ, রাজশাহীসহ অন্য কোনো জায়গায় চৌকিদার, ট্রলিম্যান, খালাসী, ট্রেন নাম্বার ট্রেকার পদে কর্মরত তালিকা থাকলে তাদের নথি, নিয়োগপ্রাপ্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এবং লাকসাম রেলওয়ের সমর দের ব্যক্তিগত নথি দুদকের কাছে ১২মের মধ্যে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি রেলের ঠিকাদার হাসান, আলমগীর, ঢাকা বিমান বন্দরের ফাস্টফুড শপের মালিক আকতারুজ্জামান নামীয় কোনো ঠিকাদার রেলওয়েতে তালিকাভুক্তির তথ্য এবং তাদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা সরবরাহসহ অতীতে কোনো নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিল কিনা এসব বিষয়ে তথ্য চেয়েছে দুদক।
জানা যায়, অলি উল্লাহ সুমনের বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৮ সালের ৪ জুলাই রেলওয়ের এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় সুমনকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও গত ৪ সেপ্টেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা দায়ের করে দুদক।
সম্প্রতি আরএনবির সিপাহী পদের নিয়োগ নিয়ে চীফ কমান্ডেন্ট মো. ইকবাল হোসেনের দুর্নীতির তদন্ত করছে দুদক। এছাড়াও আশুগঞ্জে গম বোঝাই রেলের বগি লাইনচ্যুতের ঘটনায় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুদক গেলেও কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না তিনি।
নতুনসময়/আইকে