ঢাকা বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের আত্মীয় পরিচয়ে রাজিবের দুর্নীতির পাহাড়!


৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:২৫

ফাইল ফটো

শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের আত্মীয় পরিচয়ে গণপূর্ত ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এখন নিজেকে বঞ্চিত দাবি করে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে লিপ্ত হচ্ছেন। শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পূর্তভবনে মিছিল ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ভিন্ন একটি পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। রাজিবুল ইসলাম যেসময়ে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে সে সময়ে তার দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। আভ্যন্তরীণ তদন্তের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রাজিবুল ইসলাম বর্তমানে রাজউকের অথরাইজড অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গণপূর্তের গোপালী সিন্ডিকেটের মূল হোতা তিনবারের চুক্তিতে ৭ বছর সচিবের দায়িত্বে থাকা শহীদুল্লাহ খন্দকারের সহযোগী রাজিব দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তি অর্জন করেছে। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীসহ নানা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশে অনেক বিনিয়োগ করেছেন। গণপূর্ত নিয়ে এখন যেসব নিউজ বিভিন্ন মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তার নেপথ্যের ইন্দনদাতা এই রাজিবুল ইসলাম।

রাজিবুল ইসলাম শেরেবাংলানগর-৩ বিভাগের অধীনে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণে জিকে শামীমের লুটপাটের অন্যতম অংশীদার ছিলেন। ৩০ তলা প্রস্তাবিত ভবনের ১০ তলা সম্পন্ন হলেওে এর বেইসমেন্ট করা হয়েছে ৩০তলার। যেখানে জিকে শামীম পুরো প্রকল্পের ৯০ শতাংশ টাকাই তুলে নিয়েছেন ভবন মাটির উপরে দৃশ্যমান হওয়ার আগেই। যাতে সহযোগিতা করেছেন এই রাজিবুল ইসলাম। জাতীয় রাজস্ব ভবনের এই বেসমেন্ট ৭ ফুট ঢালাইয়ের কথা থাকলেও তা হয়নি। এখান থেকেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শহীদৃল্লাহ খন্দকারের আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে। পরবর্তীতে তারই আর্শীবাদে গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নেয়।

নগর গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী লুটপাট করে সেইফ এক্সিট নেয়া শওকত উল্লাহ ক্যাডার পরিবর্তন করে প্রশাসন ক্যাডারে চলে গেলে দীর্ঘদিন এই পদটির অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন এই রাজিবুল ইসলাম। এ সময়ে তিনি একটি জুন ফাইনালসহ চলমান অনেকগুলো প্রকল্পের প্রায় ৪০ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টাকা ঘুষ নিয়ে। কোন ঠিকাদার এই টাকা দিতে না চাইলে সরেজমিনে দেখে বিল দিবেন বলে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করে নিতেন। বিশেষ স্লিপে তিনি ঠিকাদারদের টাকা পরিশোধের গ্রীন সিগন্যাল দিলেই চেক ইস্যু করতো ডিভিশন। এই স্লিপের কয়েকটি ছবি রয়েছে এ প্রতিবেদকের কাছে।

ডিভিশন-১ থেকে স্বেচ্ছায় তিনি রাজউকে অথরাইজড অফিসার হিসেবে বদলি বাগিয়ে নিয়েছেন মূলত: টাকা বানানোর মেশিন হিসেবে রাজউককে ব্যবহার করতে। এ ক্ষেত্রেও তাকে সহযোগিতা করেন শহীদুল্লাহ খন্দকার। রাজউকের প্রতিটি বোর্ড মিটিংয়ে নিয়ম বহির্ভুত নকশা অনুমোদন করিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। তিনি পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা হলেও রাজউকে গিয়েছেন ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে। তার দায়িত্ব পালনকালীন এলাকায় যতোগুলো ভবনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে তার সবগুলো থেকে উচ্চহারে উৎকোচ আদায় করেছেন। সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা যাবে তার এলাকার বেশিরভাগ ভবনই পাশ হওয়া নিয়মে করা হয়নি। আর এগুলো ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলে প্রতিটি ভবন থেকে অনেক টাকা আদায় করে নিয়েছেন। এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি তাকে প্রেষণ থেকে ফেরত আনার বিষয়েও আলোচনা চলছে। রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বপদে বহাল রেখে রাজিবের দুর্নীতি তদন্ত করা অসম্ভব হয়ে উঠবে।

এ ব্যাপারে রাজিবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে গণপূর্তের এক পিও’র মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ না করা এবং আগের প্রকাশিত সংবাদ সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানান।