বেনাপোলে এনএসআইয়ের তথ্য মিথ্যা ঘোষণায় আনা বিপুল পরিমান শুটকি জব্দ

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর তথ্যের ভিত্তিতে বেনাপোল বন্দরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ফিসমিলের মধ্যে কয়েক হাজার টন শুঁটকি মাছ জব্দ করেছে।
চালানটি বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে বেনাপোল বন্দরের ৩১ নম্বর সেড থেকে
এগুলো জব্দ করা হয়।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, শামীম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে ৫০ মেট্রিক টন ফিশ মিল ঘোষণা দিয়ে পণ্য চালানটি আমদানি করেন। পণ্য চালানটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের ইনোভেটিভ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। পন্য চালানটি কাস্টম থেকে ছাড়ের জন্য প্যারেন্টস ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টার নামে এক সিএন্ডএফ এজেন্ট বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। ভারতীয় তিনটি ট্রাকে করে গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পন্য চালানটি বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। যার ট্রাক নম্বর ডব্লিউ এফ ২৫-৭৭২৩, ডব্লিউ এফ ২৫-ঈ-১২৪১ও, ডব্লিউ-২৫-ঈ-১৬৯২। খালাসকৃত সিএন্ডএফ এজেন্ট প্যারেন্টস ইন্টারন্যাশনাল বিজিনেস সেন্টার বেনাপোল। পণ্যচালানটির এলসি নং০৯১৪২৪০১০৪৬৪ তারিখ ২১/১০/২০২৪ ম্যানিফেস্ট নং ৬০১২০২৪০০৩০০০৮৬১৭ তারিখ ২৮/১০/২০২৪ বিল অব এন্ট্রি নং ৯৩৪৮৩ তারিখ ২৪/১০/২০২৪। পণ্য চালানটির প্যাকেজ ২০১৪ বস্তা। গ্রোজ ওয়েট ৫০ হাজার ১৬৪ কেজি নিট ওয়েট ৪৮ হাজার ১৫০ কেজি। পণ্যর মুল্য এইচ এস কোড অনুযায়ী ১৯ হাজার ২৬০ মার্কিন ডলার।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা(এনএসআই)মারফত কাস্টমস করতে জানতে পারে, উক্ত তিনটি ট্রাক মাছের খাবার নিয়ে বেনাপোল স্থল বন্দরে প্রবেশ এর পর খবর আসে ট্রাক তিনটিতে মোট ৫০ টন পণ্য আছে। মাছের খাবারের মধ্যে শুটকি মাছ আছে সে মোতাবেক তারা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিলে পণ্য চালানটি কায়িক পরীক্ষনের জন্য আটক করা হয়।
সরেজমিনে বেনাপোল স্থল বন্দরের ৩১ নং ইয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে কাস্টমসের জেসি হাফিজুর রহমান, ডেপুটি কমিশনার অথৈলা চৌধুরী ও রেভিনিউ অফিসার (আরও) জাহিদ হোসেন,এআরও আরমানসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সম্মুখে ট্রাক থেকে পণ্য চালানটি নামিয়ে পরীক্ষা করছেন। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান উক্ত পণ্য চালানটি চিনার জন্য শুটকি মাছের বস্তাগুলি পাটের সুতালি দিয়ে মুখ বাঁধা অপরদিকে ফিস মিল এর বস্তাগুলি প্লাষ্টিকের সুতা দিয়ে মুখ বাধা। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে সে অনুযায়ী শুটকি মাছ পাওয়া। শুল্ক চোরেরা তাদের পণ্য দ্রুত চেনার উপায়ের জন্য ভারতের কোলকাতা থেকে রপ্তানি প্রতিষ্ঠানে বসে এ পন্থা অবলম্বন করে।
বেনাপোল কাস্টমস এর ডেপুটি কমিশনার অথৈলা চৌধুরী বলেন, ফিস মিল আমদানি পণ্য চালানের ভিতর ৭০০০ কেজি শুটকি পাওয়া যায়। বেনাপোল কাস্টমসের পরীক্ষন গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান জানান, বুধবার দুপুরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর তথ্যের ভিত্তিতে ডেপুটি কমিশনারের নির্দেশ ক্রমে ফিশ মিল ঘোষনায় আমদানি করা পন্য চালানটি পরীক্ষন করা হয়। পরীক্ষণ করে তিনটি গাড়িতে ৫০ টন ফিশ মিলের মধ্যে ঘোষণা বহির্ভূত প্রায় ৭ টন শুটকি মাছ পাওয়া যায়। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ফিশ মিলের ভিতরে শুটকি মাছ আমদানি করায় পন্য চালানটি সাময়িক জব্দ করা হয়েছে। ফিশ মিলের কোন শুল্ক কর দিতে হয় না। তবে শুটকি মাছের শুল্ককর ৫৮.৬০ শতাংশ। বেনাপোল কাস্টমস হাউজে প্রতি কেজি শুটকি মাছের শুল্কায়ন মূল্য ২ ডলার এবং শুল্কহার, ৫৮.৬০ শতাংশ। ঘোষণা বহির্ভূত শুঁটকি মাছের মূল্য ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পন্য চালানটিতে ডিউটি ফাঁকি দেয়া হচ্ছিল প্রায় ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সে ক্ষেত্রে আমদানি কারক মিথ্যা ঘোষণায় আনিত পন্যের মূল্যের উপর ২০ লক্ষ টাকার জরিমানা করার এখতিয়ার কাস্টমস কমিশনার এর। আমদানি কারকের নিকট থেকে জরিমানা সহ মোট ৩০ লক্ষ টাকার রাজস্ব আদায় হবে। আমদানি কারক এবং সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স এর উপর মামলা দায়ের করা হবে। পণ্য চালানে ঘোষণা বহির্ভূত শুটকি মাছ আমদানি করায় পন্য চালানটি সাময়িক জব্দ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী জানান, ‘আমদানিকৃত ফিশ মিলের ভিতরে ঘোষণা বহির্ভূত শুটকি মাছ পাওয়াই পন্য চালানটি সাময়িক আটক করা হয়েছে। ফিস মিল আমদানি পণ্য চালানের ভিতর ৭০০০ কেজি শুটকি পাওয়া গেছে। জব্দকৃত পণ্যচালনে প্রায় ১০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁসি দেয়া হচ্ছিল।
কাস্টমস আইন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ বর্তমানে সিএন্ডএফ এর মালিক তারেক বাবুল পলাতক রয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দরে যে সমস্ত পণ্য আমদানি করা হয় আমদানি কৃত পন্যে যেন কোন প্রকার অনিয়ম বা শুল্ক ফাঁকি না হয় এবং অবৈধ পন্য প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বিজিবি ও কাস্টমস যথারীতি তদারকি সম্পন্ন করে থাকেন তবে বিগত তিন বছর যাবত জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা বেনাপোল স্থল বন্দর শাখার সদস্যরা শুল্ক ফাঁকি রোধে ব্যাপক তদারকির মাধ্যমে অবৈধ পণ্যের বড় বড় চালান আটক করে সরকারের অতিরিক্ত রাজস্ব আয় আহরণে ভূমিকা রেখে চলেছে।