রেলের জমি বেচে খাচ্ছে আ.লীগ নেতা!

বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব প্রথম রেলস্টেশন কুষ্টিয়ার জগতি রেলস্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে তাকালেই চোখে পড়ে বিস্তীর্ণ সবুজ আখের ক্ষেত। এরই এক পাশে চেঁচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের মাঠসংলগ্ন জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে তিন কক্ষের একটি আধাপাকা বাড়ি।
স্থানীয়রা জানান, যে জায়গায় বাড়িটি নির্মিত হয়েছে, সেটি রেলের জমি। রেলের কাছ থেকে দুই একর জমি লিজ নিয়ে কিছু অংশ আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় ওই বাড়ির মালিক সিদ্দিকের স্ত্রী আসমার সঙ্গে। তিনি বলেন, গত রমজান মাসে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ইমদাদুল হকের কাছ থেকে তিন কাঠার কিছু বেশি পরিমাণ জমি কিনেছি। প্রতি কাঠা জমির দাম পড়েছে ৮০ হাজার টাকা করে।
এ সময় পার্শ্ববর্তী জমির দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে অনেক জমিই বিক্রি হয়ে গেছে। ১০০ বছরের জন্য এই জমির কাগজ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন আসমা খাতুন।
তিনি বলেন, রেলের জমি হলেও নেতা ইমদাদুল পাকশী থেকে কাগজপত্র করে দিয়েছেন আমাকে। তবে এখনো সেই কাগজপত্র আমি হাতে পাইনি।
এদিকে ভিন্ন কথা বলছেন ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, যে জায়গায় বাড়িটি নির্মিত হয়েছে, এক সময় সেই জমি আমার দখলে ছিল। সেটি রেলের কাছ থেকে লিজ নেয়া দুই একর জমির মধ্যে পড়ে না। আমি জমিটি ছেড়ে দেওয়ার পর তাদের কাগজপত্র করে নিতে বলেছি। এখানে কোনো ধরনের কেনাবেচা হয়নি।
ইমদাদুল হকের লিজ নেয়া দুই একর জমিতে বর্তমানে চাষাবাদ করেন কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন বাবলু। তিনি বলেন, বাড়ির জমিটি আমার চাষের অংশেই ছিল। বাড়ির মালিক সিদ্দিক এক সময় ইমদাদুলের বাড়িতে কাজ করতেন। সেই সূত্রে ইমদাদুল তাকে বাড়ি করার জন্য জমিটি দিয়েছেন। কেনাবেচার বিষয়টি জানি না।
ভূসম্পত্তি বিভাগ বাংলাদেশ রেলওয়ের পোড়াদহ ফিল্ড কানুনগো সহিদুজ্জামান বলেন, যে জমিতে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে, তার দাগ নম্বর ৩৮৫। জমিটি ভূসম্পত্তি বিভাগ বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশীর অন্তর্গত। ওই জমির দুই একর অংশের লিজ পেয়েছেন ইমদাদুল। জগতি রেলস্টেশনের পাশে প্রায় ১২ একর কৃষিজমি রয়েছে রেলের। তবে সেসব জমিতে বাড়ি নির্মাণের ঘটনা এবারই প্রথম। পার্শ্ববর্তী জমিতে আমবাগান, ভুট্টা ও আখের ক্ষেত রয়েছে।
সহিদুজ্জামান আরো বলেন, আধাপাকা ওই বাড়িটি রেলের জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। এভাবে রেলের জমি কেনাবেচার কোনো সুযোগ নেই। শিগগির ওই জমিতে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (পশ্চিম) রাজশাহী রেজাউল করিম মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পার্থ প্রতিম শীল বলেন, রেলের কোনো জমিই বিক্রি করা সম্ভব নয়। এগুলোর কাগজপত্রও হবে না। অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।