নাশকতার পরিকল্পনা আঁটছে আনসার আল ইসলাম

# ‘আস-শাহাদাত’ নামে নতুন গ্রুপ করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠন
শক্তি সঞ্চয় করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। ফন্দি আঁটছে নাশকতারও। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সংগঠনের সদস্যরা একত্রিত হতে কাজ করছে। এ জন্য তারা ‘আস-শাহাদাত’ নামে নতুন একটি গ্রুপও তৈরী করেছে। অফলাইন কিংবা অনলাইন দুটোতে আগের যে কোন সময়ের তুলনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ সবংগঠনের কর্মীদের। এমন অবস্থায় নজরদারীও বৃদ্ধি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব তাদের নজরদারী বৃদ্ধি করেছে। অতি সম্প্রতি সংগঠনের অন্তত ১০ শীর্ষ নেতাকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার থেকে বৃহস্পতিবার ৩ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) পুলিশ সুপার ব্যারিষ্টার মাহফুজুল আলম রাসেল বলছেন, নাশকতা চালানোর মত ওই ধরনের শক্তি আপাতত দৃষ্টি নাই বলেই আমরা মনে করছি। তবে তারা যে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে এটা সত্য। আমরা আমাদের নজরদারী বৃদ্ধি করেছি। অনলাইন কিংবা অফলাইন দুটোতে নজরদারী চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপনে সংগঠিত হওয়ার খবর আমাদের নিকট আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আনসার আল ইসলামের সদস্যরা জামিনে বেরিয়েও পূণরায় সংগঠনের কাজে লিপ্ত হচ্ছে এমন তথ্যও রয়েছে। আমরা এই বিষয় নিয়ে কাজ করছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে নেত্রকোনার একটি বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরবর্তীতে সেখানে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের খবর আগে পেয়ে যাওয়ায় জঙ্গি সদস্যরা পালিয়ে গেলেও ওই বাসা থেকে বড় ধরনের নাশকতার কাজে ব্যবহৃত দুটি বিস্ফোরক (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস আইইডি)। ডিভাইস দুটি ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করেছেন বোমা বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা। এ ছাড়া প্লাস্টিকের তৈরি ২০টি ডামি রাইফেল, ছয়টি অব্যবহৃত সিসি ক্যামেরা, ইলেকট্রিক করাত, ফ্লাশ লাইট, সিলিকনের তৈরি মানবাকৃতির পাঞ্চিং বক্স, একটি ল্যাপটপ, এক জোড়া হ্যান্ডকাফ, দুটি অত্যাধুনিক কম্পাস, পাঞ্চিং ব্যাগ, মার্শালাইড ড্রেস, রামদাসহ ৮০টি সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ওই বাড়িটি মূলত জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। আর এ কারণেই তারা সেখানে প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমান ডামি জিনিষপত্র মজুদ করে। একই সঙ্গে তারা সেখানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আইডিও রেখেছিল।
তিনি বলেন, জঙ্গিরা যে সংগঠিত এবং নাশকতার পরিকল্পনা করছে এটি তার প্রমান। এ বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধান এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিরা সুযোগ পেলেই অঘটন ঘটায়। ঢাকার আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মত বড় ঘটনার তারা জন্ম দিয়েছে। তারও আগে মংমনসিংয়ের ত্রিশালে পুলিশকে হত্যা করে জঙ্গি ছিনতাই তারা করেছে। ঘাপটি মেরে থাকা মানে এই নয় যে তারা তাদের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। আমাদের নজরদারী সবসময় থাকে এখনও রয়েছে।
জানা যায়, বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠণের অন্তত অর্ধশতাধিক সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। র্যাব, এটিইউ, সিটিটিস এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আনসার আল ইসলাম ও হুজিসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ৩ হাজারের অধিক এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ২ হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার থেকে আনসার আল ইসলামের ৩ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র্যাব। আটককৃতরা হলো জাকারিয়া মন্ডল, নেয়ামতুল্লাহ ও ওজায়ের।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, আনসার আল ইসলামের নামে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নাশকতারও পরিকল্পনা করছে। এ জন্য ‘আস-শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই গ্রুপটি পার্শ্ববর্তী একটি দেশ হতে পরিচালিত হচ্ছে এবং এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৮৫-১০০ জন। এই গ্রুপটির উদ্ভাবক হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হাবিবুল্লাহ এবং কথিত আমির সালাহউদ্দিন। এছাড়াও তারা বাংলাদেশকে এই সংগঠনের একটি শাখা বলে দাবী করে। এই গ্রুপটির বাংলাদেশের আঞ্চলিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ছিলেন র্যাব কর্তৃক পূর্বে গ্রেফতারকৃত ইসমাইল হোসেন। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা আনসার আল ইসলামের নাম ব্যবহার না করে ‘আস-শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদি পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম ও বিপ গ্রুপের মাধ্যমে সরবরাহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা ধর্মীয় স্থাপনা, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো। গ্রেফতারকৃতরা তাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নতুন গোপনীয় এ্যাপস এর মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতো এবং সংগঠনের সকল প্রকার নির্দেশনা এই এ্যাপসের মাধ্যমে প্রদান করতো বলে জানা যায়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডর আরাফাত ইসলাম বলেন, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, অতি সম্প্রতি জঙ্গি সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা চোখে পড়ছে। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে কোন একটা কিছু ঘটিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কারণে সেটা সম্ভব হয়ে উঠছেনা।
তিনি বলেন, আমাদের জঙ্গি বিরোধী সেলের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারীর মধ্যে রাখছে এদের নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব হচ্ছে।