কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে বিএসআরআইয়ের ১০ দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে
-2024-06-27-20-11-02.png) 
                                অবশেষে জিজ্ঞাসাবাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের সিন্ডিকেট করে শতকোটি টাকা আত্নসাৎকারী ১০ কর্মকর্তাকে। প্রতিষ্ঠানটির সীমাহীন দূর্ণীতি ও সিন্ডিকেট নিয়ে দি-ডেইলি ম্যাসেঞ্জার পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ইনিষ্টিটিউটের কর্মকর্তাদের দেয়া অভিযোগ ও পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্র ধরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল বিষয়টি নথিভুক্ত করেছে। ইনিষ্টিটউটটির গত প্রায় ৮ বছরের বিভিন্ন প্রকল্প, প্রকল্পে জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে যে সমস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেই সকল কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাবসহ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর আগে কখনো কর্মকর্তাদের এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। 
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল থেকে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, এ বিষয়গুলোর ওপর আমরা নজর রাখছি। 
তবে ইনিষ্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ওমর আলী বলেন, পূর্বে কি হয়েছে এটা আমার বিষয় না। আমি চেষ্টা করেছি দূর্ণীতিমুক্ত রাখতে। আর আমারও মেয়াদ প্রায় শেষ হতে যাচ্ছে এখানে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ সিন্ডিকেটের প্রধান হলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান হাসিবুর রহমান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দ্বায়িত্বে) ও বিভাগীয় প্রধান প্রশাসন আবু তাহের সোহেল সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। তাদের সহযোগীরা হলেন, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দ্বায়িত্বে) ও বিভাগীয় প্রধান প্রশাসন বিভাগ (অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে) তোফায়েল আহমেদ, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুল হক, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল আজিম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রাশেদুর রহমান রাজিব এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইনচার্জ সঞ্জিত মন্ডল, হিসাব ও অডিট বিভাগের প্রধান আব্দুলাহ বাকি। 
অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরনের গবেষণা প্রকল্প ও প্রকল্পে জনবল নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। প্রকল্পের শুরুতে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ ও প্রকল্প শেষ হলে রাজস্বখাতের নেয়ার জন্য বিপুল অঙ্কের ঘুষ নেয়া। বিভিন্ন বিষয়ে প্রকল্পের ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা তসরুপ। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর ধরে এ সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা লোপাট করে আসছে। 
জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে ইনিষ্টিটিউটটিতে মহাপরিচালক হিসেবে ডা. কামাল হুমায়ন কবির যোগদানের পর থেকে টাকা লোপাট শুরু হয়। কোটি টাকার কাঠের গাছকে মরা গাছ হিসেবে ভুয়া টেন্ডার দিয়ে বিক্রি করা হয়। প্রায় ৫০ লাখ টাকার গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। যে সকল প্রকল্পে ব্যাপকভাবে দূর্ণীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে তার মধ্যে তাল, গোল ও খেজুর পাতা উন্নয়ন প্রকল্পে (২০১০-২০১৫)। ৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে টেন্ডার ও জনবলের মাধ্যমে প্রায় অর্ধেক টাকাই লোপাট করা হয়েছে। সুগার বিট প্রকল্প (২০১০-২০১৪) আনুমানিক ৭/৮ কোটির টাকার পাইলট প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদন কৌশলের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে চিনি গুড় তৈরী করা যেত। এটি খুবই সম্ভাবনাময় ছিল। লুটপাটের কারণে এটি আলোর মুখ দেখেনি। এ প্রকল্পের বেশিরভাগ টাকাই নানাভাবে নয়ছয় করে লোপাট করা হয়েছে। বায়োটেকনোলজি প্রকল্পে (২০১০-২০১৪ )। ৮/১০ কোটি টাকার প্রকল্প, টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের উন্নয়ন প্রকল্প (২০১০-২০২২)। বৃহত্তর চট্রগ্রাম অঞ্চলে ইক্ষু চাষ করে আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন(পার্বত্য অঞ্চলে উক্ষু চাষ ১৫/২০ কোটি (তিন ধাপে)। এই প্রকল্পেও আখের চারা আহরণ থেকে শুরু জনবল নিয়োগে বেতমন কম দিয়ে বেশি করে দেখানোয় টাকা আত্নসাৎ করা হয়েছে। পরিচ্ছন্ন ও রোগ মুক্ত ইক্ষু বীজ উৎপাদন ও বিস্তার (২০২০-২০২৪) ২৫ কোটি টাকার কার্যক্রমে অনিয়ম। বিশেষ করে কেনাকাটা, নিয়োগ বানিজ্য, অপ্রয়োজনীয় অফিস ভাড়া দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। সাথী সফল চাষ প্রকল্প (২০২০-২০২৪) ১৫ কোটি টাকার কাজে ও ব্যাপক অনিয়ম করে অর্থ লোপাট করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে ইক্ষু চাষ কর্মসূচি (আনুমানিক ৩ কোটি টাকা), তাল খেজুর উৎপাদন কর্মসূচি (আনুমানিক ২ কোটি) । ৬৭ কোটি টাকার সমন্বতি গবেষণা ও ২০ কোটি টাকার রংপুর অঞ্চলে ইক্ষু চাষ উৎপাদন প্রকল্প। 
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১০ -২০২২ সকল নিয়োগ বাণিজ্যে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এই গত ১০ বছরে অন্তত ১০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই নিয়োগগুলো প্রকল্প, রাজস্বখাতে বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী। এই নিয়োগে অন্তত ৫ কোটি টাকা সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ইনিষ্টিটিউটের ভেতরেই মহাপরিচালক ড. খলিলুর রহমানের গাড়ি চাপায় মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল্লাহ গাড়ি চাপায় নিহত হলে এই সিন্ডিকেট মহাপরিচালককে এক প্রকার জিম্মি করে ফেলে। মূলত এরপর থেকে যতজন ডিজি এসেছেন এদের প্রত্যেককেই এক প্রকার জিম্মি করে লুটপাট চালানো হচ্ছে। বর্তমান মহাপরিচালকও তাদের আজ্ঞাবহ। তার চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষ। সিন্ডিকেটটি তার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। মন্ত্রণালয়ে নানা তদবির চালাচ্ছেন। 
এদিকে প্রকল্প শেষ হলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে এনে তাদের চাকুরি জাতীয়করন করা হয়। কিন্তু কয়েকটি প্রকল্পের অন্তত ২০ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে শুধুমাত্র ঘুষ না দেয়ায় চাকুরি হতে দেয়নি সিন্ডিকেট। যার কারণে তারা মানবের জীবনযাপন করছেন।
তাদের অভিযোগ, হাসিবুর রহমানের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট একেকজনের নিকট থেকে ৫/৭ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। এই টাকা না দেয়াতে চাকুরি স্থায়ীকরণ হয়নি। 
জানা যায়, অতি সম্প্রতি কর্মকর্তারা এ সকল বিষয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দূর্ণীতি দমন কমিশন এবং নিয়ন্ত্রনকারী বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ নিয়ে দি ডেইলী মেসেঞ্জারসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে তদন্ত ও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষি গবেষণা কাউন্সিল।

 
                 
                                                    -2019-06-05-12-27-15.jpg) 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                        -2024-09-02-09-55-40.jpg) 
                                                         
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            