জিম্মি ডিজি, বিএসআরআই লুটেপুটে খাচ্ছে হাসিবুরের সিন্ডিকেট
 
                                মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দূর্ঘটনার মৃত্যুকে পূঁজি করে প্রায় শতকোটি টাকা তসরুপের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে তৎকালীন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল্লাহ ইনিষ্টিটিউটের ভেতরেই তৎকালীন মহাপরিচালক ড. খলিলুর রহমানের গাড়ি চাপায় নিহত হন। মূলত ওই ঘটনায় ডিজি কর্মকর্তা হাসিবুর সিন্ডিকেটের নিকট জিম্মি হয়ে যান। ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে প্রকল্পের টাকা তসরুপ শুরু হয়। পাবনার ঈশ্বরদিতে অবস্থিত দেশের একমাত্র এই ইনিষ্টিটিউট এক প্রকার লুটেপুটে খাচ্ছেন তারা। বর্তমানে মহাপরিচালক ড. ওমর আলী মেয়াদকাল প্রায় একমাস রয়েছে। এরই মধ্যে তাকেই পূণরায় ডিজি হিসেবে এক্সটেনশন করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেটটি। শুরু করেছে দৌড়ঝাঁপ। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের মধ্যে শুরু হয়েছে অসন্তোষ। দূর্ণীতবাজ এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করে শাস্তিও চেয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর লিখিত দিয়ে সেই দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইনিষ্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ওমর আলী বলেন, আমার চাকরি আর কয়েকদিন আছে। অনেকে অসন্তুষ্ট হয়ে এগুলো বলতে পারে। তৎকালীন সময়ে কি হয়েছে তা বলতে পারবোনা। আমার সময়কালীন আমি চেষ্টা করেছি দূর্ণীতি বন্ধ করতে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আর থাকতেও চাইনা বা আমার ইচ্ছেও নেই। এখন যদি সরকার রাখে তাহলে সেটা অন্য ব্যাপার। কারা চেষ্টা করছে, কি কারণে করছে এসব বিষয় আমি কিছু জানিনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ইনিষ্টিটিউটের ভেতরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তৎকালীন মহাপরিচালক ড. খলিলুর রহমান। ওই গাড়িতেই ছিলেন ড. আমজাদ হোসেন ও ড. সমজিৎ কুমার পাল। গাড়ি চালানোর এক পর্যায়ে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড., আব্দুল্লাহকে গাড়ি চাপা দেন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ড. আব্দুল্লাহ। মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে আসেন হাসিবুরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। তারা এটিকে ধামাচাপা দিতে শুরু করেন নানা তৎপরতা। মারা যাওয়ার পরও তারা একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করেন। নাটোর লালপুর পর্যন্তও তারা নিয়ে যান। এরপর পূণরায় সেটিকে ইনিষ্টিউটে নিয়ে আসেন। এরপর পরিবারকে খবর দেয়া হয়। পরিবার যেন মামলা কিংবা লাশের পোষ্টমার্টেম না করে তার জন্য নানা প্রলোভন দেখানো শুরু করেন। এক পর্যায়ে সেটিই হয়। এছাড়া পুলিশসহ প্রভাবশালীদের মুখবন্ধ করতে খরচ হয় অন্তত কোটি টাকা। সেই টাকা খরচ করা হয় ৬৭ কোটি টাকার সমন্বিত গবেষণা প্রকল্প হতে।
জানা যায়, ওই ঘটনার পর নিহত ড. আব্দুল্লাহর পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহায়তা ও প্রকল্পের দৈনন্দিন হাজিরা হিসেবে নিয়োগও দেয়। কিছু দিন পর সেটিও বন্ধ করে দেয়। এই ঘটনাটিকে পূঁজি করে মহাপরিচালক খলিলুর রহমানকে জিম্মি করে তারা। বিভিন্ন প্রকল্পে শুরু হয় হরিলুট। ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের ইচ্ছেমত কাজ করতেও বাধ্য করেন হাসিবুরসহ তার সহযোগীরা। এমনকি তারা প্রকল্পের টাকায় বিদেশ সফরও করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার কর্মকর্তারা বলেন, ড. খলিলুর রহমানের অবসরের পর মহাপরিচালক হন ড. আমজাদ হোসেন। ড. আব্দুল্লাহ যে গাড়ির চাপায় নিহত হন সেই গাড়িতে তিনিও ছিলেন। এ কারণে সিন্ডিকেট তাকেও এক প্রকার জিম্মি করে ফেলে। সিন্ডিকেট গাড়িতে থাকা ড. সমজিৎ কুমার পালকে দিয়েও নানা ফায়দা লুটতে থাকে। তাদের অব্যাহত নানা হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে তিনিও মৃত্যুবরণ করেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৬ সালের পর এই গত প্রায় ৮ বছরে অন্তত শতকোটি টাকার ওপরে প্রকল্প করা হয়েছে। এর মধ্যে সমন্বতি গবেষণা প্রকল্পেই ৬৭ কোটি টাকা। রংপুর অঞ্চলে ইক্ষু চাষ উৎপাদন প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এছাড়াও আরও কয়েকটি ছোট ছোট প্রকল্পে অন্তত ৩০ কোটি টাকার মত। মহাপরিচালক হাতে থাকার কারণে হাসিবুরের নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেটটি সরকারী বরাদ্দের টাকাগুলো তসরুপ করে চলেছেন।
কর্মকর্তাদের দাবি এই সিন্ডিকেট বর্তমান ডিজির মেয়াদ বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্নস্থানে তারা তদবির করে বেড়াচ্ছেন।েএমনকি মহাপরিচালক না চাইলেও তাকেই রাখতে সিন্ডিকেট এ দৌড়ঝাঁপ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান হাসিবুর রহমান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দ্বায়িত্বে) ও বিভাগীয় প্রধান প্রশাসন আবু তাহের সোহেল সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। তাদের সহযোগীরা হলেন, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দ্বায়িত্বে) ও বিভাগীয় প্রধান প্রশাসন বিভাগ (অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে) তোফায়েল আহমেদ, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুল হক, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল আজিম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রাশেদুর রহমান রাজিব এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইনচার্জ সঞ্জিত মন্ডল, হিসাব ও অডিট বিভাগের প্রধান আব্দুলাহ বাকি। হিসাব ও অডিটের প্রধান হওয়ার কারণে সকল বিল ভাউচারে অনুমোদন দিয়ে সিল দিয়ে দেন। আর এর পরে মহাপরিচালক সেটিও অনুমোদন দিয়ে দেন।
সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর নুরুল কাশেম বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে কারা দূর্ণীতিবাজ এটি সবারই জানা। যারা এগুলো বিষয়ে মুখ খুলবে তাদের কোনঠাসা করে রাখবে, বদলি করবে এমনকি চাকরি পর্যন্ত চলে যেতে পারে। এ কারণে ভয়ে কেউ কিছু বলতে চায়না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। ড. আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে এমনকি এই টাকা দিয়ে বিদেশ সফরও করেছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
জানা যায়, সিন্ডিকেটের মূল হোতা হাসিবুরসহ বাকিরা অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। তৎকালীন ডিজি আামজাদ হোসেনও এর সুবিধাভোগী। সেও ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডিজি থাকাকালীন সময়ে ১০ কোটি টাকার মত হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান হাসিবুর রহমান বলেন, আসলে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। বর্তমান সরকারও ক্ষমতায়। এ কারণে আমার পেছনে কিছু লোক লেগে গেছে। এরাই নানা জায়গায় আমিসহ আমার কিছু সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যা মিথ্যা।
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দ্বায়িত্বে) ও বিভাগীয় প্রধান প্রশাসন বিভাগ (অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভালো কাজ করলে কিছু লোক পেছনে লাগে। এটি তারই একটি অংশ। এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

 
                 
                                                    -2019-06-05-12-27-15.jpg) 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                        -2024-09-02-09-55-40.jpg) 
                                                         
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            