ঢাকা শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

স্বর্ণ চোরাকারবারী ধরতে বিশেষায়িত ‘ডগ স্কোয়াড’


৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:১৮

সংগৃহিত

# ফ্লাইট কিংবা লাগেজ স্বর্ণ যেখানে থাকুক সনাক্ত হবে
# দিন ফুরিয়ে আসছে শাহজালাল কেন্দ্রিক চোরাকারবারীদের
# গোয়েন্দা তথ্য বা ম্যানুয়ালির জন্য পরিশ্রম করতে হবে না কর্মকর্তাদের। প্রশিক্ষণ শেষ পর্যায়ে, ডেপ্লয়মেন্টের অপেক্ষা-জিয়াউল হক পলাশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এপিবিএন

যাত্রীর লাগেজ কিংবা ফ্লাইটের অভ্যন্তরীন স্বর্ণ খুঁজে খুঁজে খুঁজে বের করার দিন শেষ হচ্ছে কর্মকর্তাদের। এছাড়াও ম্যানুয়ালি গোয়েন্দা তথ্যের ওপর আর আর নির্ভর করতে হবেনা। এখন থেকে শাহজালালে অবতরণ করা ফ্লাইটে স্বর্ণ আসলে তা ধরে দেবে ‘ডগ স্কোয়াড’। অবিশ^াস্য মনে হলেও এটিই ঘটতে যাচ্ছে স্বর্নের খনি নামে খ্যাত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। থার্ড টার্মিনালে থাকবে বেল্ট স্ক্যানার আর ১ ও ২ এ ডগ স্কোয়াড। অর্থাৎ এতদিন স্বর্ণ চোরাকারবারীরা বিভিন্ন উপায়ে স্বর্ণ বের করে ফেলতো। তবে এখন আর সেই সুযোগ থাকছেনা। শাহজালাল বিমানবন্দর কেন্দ্রিক চোরাকারবারীদের দিন ফুরিয়ে আসছে।

এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক পলাশ বলেন, বিমানবন্দরে চোরাকারবারী ধরতে এতদিন ম্যানুয়ালি পদ্ধতি ব্যবহার করতে সবাই। মূলত গোয়েন্দা তথ্য কিংবা ফ্লাইট র‌্যামেজিং (তল্লাশি) করে স্বর্ণ উদ্ধার করা হতো।

বর্তমানে সেই দিন দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। স্বর্ণ চোরাকারী ধরতে প্রস্তুত হচ্ছে ডগ স্কোয়াড। বিশে^র কয়েকটি দেশের ডগ পরিচালনাকারী এক্সপার্টরা প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছে ডগ স্কোয়াডদের। প্রশিক্ষণও প্রায় শেষ পর্যায়ে।

তিনি বলেন, পাঁচটি ডগ প্রস্তুত করা হচ্ছে। যারা স্বর্ণ ধরবে। এই ডগ স্কোয়াডদের বৈশিষ্ট হচ্ছে স্বর্ণ নিয়ে যাত্রী ফ্লাইট থেকে নামলেই সঙ্গে সঙ্গে ডগ স্কোয়াড তাকে সনাক্ত করবে। এছাড়াও ফ্লাইটের ভেতরেও স্বর্ণ থাকলেও তা তারা সনাক্ত করতে পারবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফ্লাইট ল্যান্ড করার স্থান থেকে কিছু অদূরেই থাকবে ডগ স্কোয়াড। এ কারণে এ দুই স্বর্ণ চোরাকারীরা সহজেই সহজেই ধরা পড়ে যাবে। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে সেখানে বেল্টেই অত্যাধুনিক স্ক্যানার বসানো রয়েছে। সুতরাং ওই টার্মিনাল দিয়ে পার করা একেবারে অসম্ভব। সবমিলিয়ে আমরা বলতে পারি শাহজালাল কেন্দ্রিক স্বর্ণ চোরাকারবারীদের দিন ফুরিয়ে আসছে।

জানা গেছে, স্বর্ণ চোরাকারবারী সনাক্তকারী ডগ ছাড়াও এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের হাতে রয়েছে প্রশিক্ষিত আরো ২২ টি ডগ। এ পাঁচটি যোগ হলে ২৭টিতে দাঁড়াবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে বিমানবন্দরে এপিবিএনর যাত্রা শুরুর পর ২০১৬ সালে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কেনাইন ইউনিট যাত্রা শুরু করে। প্রথমে ২ টি ল্যাবরাডর, ২ টি জার্মান শেফার্ড এবং ৪ টি বেলজিয়ান ম্যালানয়িজ জাতের কুকুর দিয়ে যাত্রা শুরু করে এই কেনাইন ইউনিট। শুরুতে শুধুমাত্র বিস্ফোরক শনাক্তকারী ডগ কাজ করতো। ধীরে ধীরে পরিবর্তিত পরস্থিতিতে মাদক শনাক্তকারী ডগ সংযুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে এপিবিএন কেনাইন ইউনিটে ৬ টি নারকোটিক্স ডিটেকশন ডগ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রস্তত করা হয়। মাদক শনাক্তকারী ৬ টি ডগের মধ্যে ৩ টি জার্মান শেফার্ড এবং ৩ টি ল্যাবরাডর জাতের কুকুর। এদের নাম দেয়া হয়েছে অলি, সিভাক, সেপি, ডিয়েগো, নায়রা ও স্কোকো।

এই ৬ টি ডগের ৬ জন প্রাথমিক ডগ হ্যান্ডলার রয়েছেন যাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ২ জন নারী হ্যান্ডলার। এদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ইউএস এম্বাসির সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। ইউএস এম্বাসি, বাংলাদেশের এর সহায়তায় এয়ারপোর্ট এপিবিএন কেনাইন ইউনিট এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন এবং নারকোটিক্স ডিটেকশন ডগের প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, নেপাল ও দক্ষিন আফ্রিকা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ কেনাইন প্রশিক্ষকগন প্রশিক্ষন পরিচালনা করেন।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি কোকেনের বড় চালান জব্দ হওয়ার পর নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি সামনে আসে। বিশেষ কায়দায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের এ মাদক বিশেষ এমন এক কায়দায় নিয়ে আসা হয় যা স্ক্যানিংয়েও ধরা পড়েনা। আর এ কারনেই প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিক মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে বিমানবন্দরে কার্গো স্ক্রিনিং, বিমানবন্দর মূল প্রবেশ পথে চেক পোস্ট এলাকায়, পার্কিং এলাকায়, ক্যানোপি, পেরিফেরি দেয়াল, বিমানবন্দর পোস্টাল সার্ভিস, লাগেজ বেল্ট এলাকায় এপিবিএন কেনাইন কাজ করছে।

এছাড়াও রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার ঘোষিত যে কোনো ভিভিআইপি নিরাপত্তায়ও কাজ করে এয়ারপোর্ট এপিবিএন কেনাইন ইউনিটের সদস্যরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। বিমানবন্দরে এ ব্যবস্থা থাকলে অবৈধ বা চোরাচালান করার কথা স্বপ্নেও ভাববেনা কারবারীরা। বিশে^র উন্নত দেশের বিমানবন্দরে যে রকম শতভাগ চোরাচালানমুক্ত বাংলাদেশের বিমানবন্দর চোরাচালানমুক্ত থাকবে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল আলম বলেন, আমাদের থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে বর্হিবিশে^ শাহজালালের গুরুত্ব অনেক বাড়বে। থার্ড টার্মিনালে কাঠামোতেই বেল্টে স্ক্যানার লাগানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। সেহেতু এখানে বেল্টেই স্ক্যানার থাকছে। অন্যদিকে ওই দুটি টার্মিনাল ডগ স্কোয়াড দিয়ে পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আমাদের জন্য বড় সহায়ক হবে। রাজস্বও আরো বাড়বে।