ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২

বছরেও শেষ হয়নি মাওলানা ফারুকী হত্যার তদন্ত


২৭ আগস্ট ২০২৩ ১৬:১২

ছবি সংগৃহীত

নয় বছরে আগে এই দিনে (২৭ আগস্ট) আলোচিত ইসলামী বক্তা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নুরুল ইসলাম ফারুকী নিজ বাসায় খুন হন। এতো বছরেও হত্যার কারণে জানতে পারেনি পরিবার। তবে শেষ হতে যাচ্ছে ফারুকীর পরিবারের অপেক্ষা। মামলার তদন্ত শেষের দিকে। দ্রুতই আদালতে চার্জশিট জমা দিবে সিআইডি।

২০১৪ সালের এই দিনে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ফারুকীর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে ফয়সাল ফারুকী মামলা দায়ের করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে সিআইডি। সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত ২৮ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। 

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ সুপার কাশেম খান বলেন, তদন্ত শেষের দিকে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাড়াতাড়ি মামলার চার্জশিট দিয়ে দিবো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদালতে চার্জশিট জমা দিবো।

কত জন ঘটনায় জড়িত এমন প্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এটা এখন বলতে চাচ্ছি না। পরে সব জানানো হবে।

মামলা সম্পর্কে নুরুল ইসলাম ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী বলেন, ৯ বছর হলো বাবা খুন হয়েছেন। কিন্তু এখনো মামলার তদন্তই শেষ হলো না। থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে এখন মামলার তদন্তে আছে সিআইডি। একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হচ্ছেন কিন্তু তদন্ত শেষ হচ্ছে না। আমরা পুরো পরিবার হতাশ। এটা নিয়ে আমরা ব্যথিত।

তিনি বলেন, সিআইডি এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছে মামলার তদন্ত শেষ করতে। আমরা চাচ্ছি, বিষয়টা শেষ হয়ে যাক। কিন্তু এতোদিনেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। বাবাকে কেন খুন করা হলো তা জানতে পারলাম না। আমরা হতাশ তবুও আশায় আছি। এর একটা সুরাহা হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাত ৯টার দিকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার ছেলে ফয়সাল ফারুকী শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নুরুল ইসলাম ফারুকীর বাসায় কলিং বেল চাপে দুর্বৃত্তরা। দরজা খুললে দুই জন লোক বাসায় প্রবেশ করে নুরুল ইসলামের সঙ্গে ড্রয়িং রুমে বসে। এর কিছুক্ষণ পর আরও ৬/৭ লোক বাসায় প্রবেশ করে। বসার স্থান সংকুলান না হওয়ায় ফয়সাল ফারুকীর মামাতো ভাই মারুফ হোসেন ভেতর থেকে চেয়ার আনতে যান। সে ফিরে এসে দেখে নুরুল ইসলামের মাথায় পিস্তল ও চাপাতি ধরে রেখেছে আসামিরা। পরে তারা বাসার সবাইকে বেঁধে নুরুল ইসলাম ফারুকীতে হত্যা করে। আসামির বাসা থেকে নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার, ক্যামেরা নিয়ে যায়।

নিহত ফারুকী চ্যানেল আইয়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’, মাই টিভির লাইভ অনুষ্ঠান ‘সত্যের সন্ধানে’ এর উপস্থাপক ছিলেন। এছাড়া, তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পাদক, সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব ছিলেন।

এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন- হাদিসুর রহমান সাগর, আবু রায়হান, আব্দুল গফ্ফার, মিঠু প্রধান, খোরশেদ আলম, রিয়াজ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজ, তারিকুল ইসলাম ওরফে মিঠু, কাজী মো. ইব্রাহিম, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব গান্ধী, জাহিদুল ইসলাম সোহাগ, বাপ্পী মিয়া, আব্দুল্লাহ আল তাসনিম, রাইসুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজ, তরিকুল ইসলাম, আলেক ব্যাপারী, মোস্তফা আহমেদ ও মোজাফ্ফর হোসেন ওরফে সাঈদ।