ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২

নুরুল ইসলামের নিষিদ্ধ ‘জলসাঘর’এ ম্লান গুলশান-২ চত্বরের আভিযাত্য


২৮ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৫৬

সংগৃহিত

রাজধানীর অন্যতম অভিযাত এবং কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান বনানী। এলিট এলাকা হিসেবেও এর পরিচিত। আর এ কারণে এই এলাকার নিরাপত্তা অন্যান্য এলাকার চাইতে অনেকটাই বেশি। বিশেষ করে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি, এপিবিএন এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্বপালন করে থাকেন। অভিযাত এলাকাকে ঘিরে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। বিশেষ করে অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকান্ড ম্লান করে দিচ্ছে এ এলিট এলাকার বিশেষত্ব। বাসা বাড়ি কিংবা বাণিজ্যিক ভবন ভাড়া করে যেভাবে চলছে অনৈতিক কর্মকান্ড তা ভাবিয়ে তুলছে এ এলাকায় বসবাসকারীদের। চোখের সামনেই এ ধরনের ঘটনা চলতে থাকলেও তারা কিছু বলতেও পারছেনা। অনেকটা মানসম্মানের ভয়েও বছরের পর বছর ধরে তারা নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। এ ধরনের কর্মকান্ড নিরাপত্তার জন্যও হুমকি বলে মনে করছেন তারা।

 
গুলশান বনানীর স্পা’র আড়ালে বেসামাল অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব-

গুলশান -২ চত্বর। অভিযাত এলাকার অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা। বিদেশিদের নিকট এ যেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। দেশি বিদেশি কোম্পানির প্রধান কার্যালয় তেমনি বড় বড় শো-রুমে ঠাসা। রয়েছে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটও। গুলশান-২ চত্বরের পশ্চিমাংশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় দেশের দূতাবাসও। উত্তরের দিকের একটু সামনেই ওয়েস্টিন হোটেল। আর এর পাশেই রয়েছে বাটার শো-রুম। বিল্ডিংটি নতুনভাবে ফার্নিশও করা হয়েছে। বাটার শো-রুমের লিফটের ৬ তলায় এ যেন অসামাজিক কার্যকালাপের হাট। হাট এ কারনেই বলা এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিনি হাজার হাজার লোক যাতায়াত করে। লোকলজ্জার ভয়ডরহীন ভাবে চলছে স্পার আড়ালে অনৈতিক কর্মকান্ড। এক কথায় জলসাঘর। আর এটি পরিচালনা করছেন নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।

লোকলজ্জার বালাই ছাড়াই অনেকটাই প্রকাশ্য উঠছেন যুবতী নারী ও খদ্দের। বিষয়টি সবাই জানে। কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস কারও নেই। অদৃশ্য শক্তির মদদে নুরুল ইসলামের এ জলসা ঘরে বাধা দেয়ার সাহস কারও নেই। বছরের পর বছর নুরুল ইসলাম তার সেই অদৃশ্য শক্তির বলে প্রতিদ্বন্দীহীন।
সরেজমিন দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ ও ডিপ্লোমেটির এরিয়ার একেবারে কেন্দ্রস্থল হলেও যেন এসবের কোন বালাই নেই। বাটা শো-রুমের সামনে পুলিশেরও ডিউটি। কিন্তু সব জেনেও যেন কেউ কিছু জানেনা, দেখেও না।

স্থানীয় দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, এসব দেখে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম একটু লজ্জা লাগলেও এখন সয়ে গেছে।

তারা বলেন, প্রকাশ্যই এ ব্যবসাগুলো এলাকার জন্য অনেক হুমকি। দিনের বেলা তারা যেভাবে কার্যক্রম করে তা সত্যি অবাক করার মত। রাতে অনেকে মদ খেয়ে মাতলামি করে উপরে উঠানামা করে তখনকার পরিস্থিতি না দেখলে বর্নণা করা যাবেনা। গুলশান-২ চত্বরকে ঘিরে এ ধরনের কর্মকান্ড নানা প্রশ্নের জন্মদিলেও আমরা নিশ্চুপ। কোন কথা বললে উল্টো আমাদেরই থাকা দায় হবে।

গুলশান-২ চত্বরে যেভাবে এ ধরনের কর্মকান্ড তা সত্যি অবাক করার মত। কোন প্রকার রাক-ঢাক না করে অনৈতিক ও অসামাজিক এ ব্যবসা কার শক্তিতে করতে পারে সেটিই বড় প্রশ্ন। এখানে প্রশাসন সবজেনেও কেন চুপ সেটিও বড় প্রশ্ন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলশান বনানীতে যাদের হাত ধরে অসামাজিক ও অনৈতিক ব্যবসা শুরু হয়েছে তার মধ্যে নুরুল ইসলাম অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরেই এ এলাকায় অনৈতিক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। বনানী তার এই কর্মকান্ড চলার আস্তানায় এক নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনাও রয়েছে। বিশেষ কোন উপলক্ষে প্রশাসনের চাপে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া কখনো তার এ ব্যবসা বন্ধ হয়নি। গুলশানের যে কয়েকজন ব্যক্তি এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তার মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালীও সে। আর এ কারণে গুলশান ২ নম্বরের একেবারে চত্বরে সে জলসাঘর খুলে বসেছে। জলসাঘরে অনৈতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি রয়েছে মাদকের বিশাল ব্যাপকতা। মাদকগ্রহনের অন্যতম নিরাপদ স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে এটি।

লোকজন বলছেন, গুলশানের আভিযাত্য এবং ডিপ্লোমেটিক এরিয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে অন্তত এ রকম জনাকীর্ণ এলাকায় এ ধরনের ব্যবসা কি বার্তা দিচ্ছে ? প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট দ্রুত এ ধরনের অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকালাপ বন্ধের দাবি তাদের।


পরের প্রতিবেদন --হাসির জলসাঘরের অতিথি কারা