আধুনিক প্রযুক্তিতে বিকাশ প্রতারণা

দেশে ক্রমেই মোবাইল ফিনানসিয়াল সার্ভিস জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই প্রতিনিয়ত এই সেবা উন্নত হচ্ছে। আর এই সুযোগে প্রতারক চক্রও আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার করছে। সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসারের (ডিওএস) সহযোগিতায় নম্বর ক্লোন করে বিকাশের এজেন্টকে ফোন দিয়ে একাউন্ট আপডেটের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। এমন অভিযোগে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- বিকাশের ডিএসও শাহরিয়ার নাফিজ ওরফে মিন্টন, মো. রিপন মিয়া, মো. ইউসুফ মিয়া এবং এই চক্রের মূলহোতা মাহবুব কাজী। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে নয়টি মোবাইল ফোন এবং ছয়টি সিম, বিকাশ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত আরো ৫১টি বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমকার্ড জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল মাসুদ বলেন, বিকাশের ডিএসওদের সহযোগিতায় ডিএসওদের নম্বর ক্লোন করে ডিএসওর কর্ম এলাকার আওতাধীন বিকাশের এজেন্টকে ফোন দিয়ে একাউন্ট আপডেটের কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে এই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।
সিপিসির এই বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে (সিপিসি) একজন বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে অভিযোগ আসে যে, তার দোকানের এলাকার ডিএসওর নম্বর থেকে তার কাছে ফোন করে বলেছে যে, বিকাশের প্রধান কার্যালয় থেকে তাকে ফোন করা হবে। তাই তিনি যেন তাদের চাহিদামতো তথ্য দেয়। কিছুক্ষণ পরেই একটি নম্বর থেকে ভুক্তভোগীর ফোন করে বিকাশের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীর বিকাশ এজেন্ট একাউন্টটি আপডেটের কথা বলে কৌশলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ওটিপি সংগ্রহ করে ভুক্তভোগীর বিকাশ এজেন্ট নম্বর থেকে এক লাখ ৭০০ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় একটি প্রতারক চক্র।
সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল মাসুদ বলেন, সাইবার পুলিশ সেন্টার ওই অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়। এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গত ২৪ আগস্ট দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালায়। অভিযানে জামলাপুর থেকে বিকাশের প্রাক্তন ডিএসও শাহরিয়ার নাফিজ ওরফে মিন্টন ও মো. রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য মতে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মো. ইউসুফ মিয়া নামের আরেকজনকে এবং ফরিদপুরের মানিগ্রাম থেকে এই বিকাশ প্রতারণার চক্রের মূলহোতা মাহবুব কাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিপিসির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, এই চক্রের মূলহোতা মাহবুব কাজী একজন পেশাদার বিকাশ প্রতারক। বিকাশে প্রতারণা করার জন্য তিনি একদিন ফোন করেন গ্রেপ্তারকৃত শাহরিয়ার নাফিজ মিল্টনকে। পরে কথায় কথায় তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে মাহবুব কাজীর চাহিদা মোতাবেক মিল্টন তার ডিস্ট্রিবিউটর হাউজের আওতাধীন বিকাশ এজেন্ট নম্বর মাহবুব কাজীকে সরবরাহ করে। বিনিময়ে তিনি মাহবুবের কাছ থেকে কমিশন পেতেন। পরবর্তীতে শাহরিয়ার নাফিজ ওরফে মিন্টনের মাধ্যমে বিকাশের আরেক ডিএসও রিপন মিয়াও এই কাজে জড়িয়ে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল মাসুদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মাহবুব কাজীর দেয়া বক্তব্য এবং তার কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, তিনি এই কাজে খুবই পারদর্শী এই ভুক্তভোগী ছাড়া আরো অনেক বিকাশ এজেন্ট ও বিকাশ ব্যক্তিগত নম্বর থেকে এই বিকাশ প্রতারক চক্র গত তিন মাসের মাসে অনুমান প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই কাজের জন্য তারা পেইড ভার্শন ক্লোনিং এ্যাপস ব্যবহার করে বিকাশের ডিএসওদের নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন এজেন্টদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে আসছে।
তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ২০১৮ আইনের ২৩(২)/২০ (২)/৩০ (২)/৩৪(২)/৩৫(২) ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রাজিবুল হাসান এবং আজাদ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
cid, Bkash, Froad, Police, nagad