ঢাকা সোমবার, ৫ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২

সব নির্দেশ লন্ডনের !


২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৭:১৭

ফাইল ছবি

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে রিমান্ডে থাকা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নানা বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন তিনি। এর মধ্যেই বেরিয়ে এসেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগের তথ্য। আর সেই যোগাযোগের সূত্র ধরে সরকার পতনের পরিকল্পনার কথাও বের হয়ে এসেছে মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদে। তবে মামুনুল বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছেন।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। ওই ঘটনার আগে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে বাবু নগরী ও মামুনুল হকের একাধিক বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়াও তারপর থেকে যতগুলো ঘটনা সবগুলোর নির্দেশ এসেছে লন্ডন থেকে। অর্থাৎ হেফাজতের কর্মসূচি ঠিক করতো বিএনপির কয়েকজন নেতা। এরমধ্যে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান সরাসরি মামুনুল ও বাবুনগরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।

সূত্র জানায়, হেফাজতের এসকল কর্মসূচিতে বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়েছে পাকিস্থান ও ইউরোপে বসবাসরত বিএনপি নেতারা। আর তাদের টাকাতেই সারাদেশে তান্ডব চালায় হেফাজত।

সূত্র বলছে, এ সকল তথ্যের দালিলিক প্রমান গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ সকল তথ্য প্রমান সামনে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন কিছুই অস্বীকার করছেন না মামুনুল হক। তার নিকট থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো আটক করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবু আলম সাংবাদিকদের জানান, লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের সঙ্গে মামুনুল ও বাবুনগরীর যোগাযেগ ছিল। নরেন্দ্র মোদি সফরের একমাস আগে তারা তান্ডব চালানোর পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনায় সরকারী অফিস, আওয়ামী লীগ নেতা, থানা- ফাঁড়ি আক্রমনের সিদ্ধান্ত হয়। আর এই সিদ্ধান্তও আসে লন্ডন থেকে।

তিনি আরও বলেন, এদের টাকা জুগিয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পলাতক বিএনপি নেতারা। তারেক রহমানের নির্দেশে একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা তারা অর্থের জোগান দিয়েছে।

এদিকে, ৩ এপ্রিল, বিকেল ৩টা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্ট। নারীসহ জনতার হাতে অবরুদ্ধ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তার দাবি, আটক নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তাকে বিয়ে করেছেন। সব তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এরপর সাংবাদিক, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন এসে মামুনুলের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে রাত আটটা পার হয়ে যায়। পুলিশ যাচাই-বাছাই শেষে হয়তো ছেড়েও দিতো তাদের। কিন্তু তার আগেই মামুনুলের অনুসারীরা এসে মূল গেটসহ পুরো রিসোর্টে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এবং এক পর্যায়ে তারা মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এদিকে ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিতে থাকে মামুনুল। অনুসারীরা তার কথা মতো সারাদেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সরগরম হয়ে ওঠে হেফাজতের সমর্থকরা। রিসোর্টে হামলার ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। ঘটনার পর থেকে বেশকিছু গা-ঢাকা দিয়ে ছিল মামুনুল। এক পর্যায়ে মোহাম্মদপুর থানার একটি চুরির মামলায় মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

 

এদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সম্প্রতি হেফাজতের নাশকতার ঘটনায় ১৮টি এবং ২০১৩ সালের পাঁচটিসহ মোট ২৩টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। ডিবিরি রিমান্ড শেষ হলে আগামী সপ্তাহে সোনারগাঁওয়ের নাশকতার মামলায় মামুনুল হককে গ্রেফতার দেখাতে পারে সিআইডি।

সিআইডি প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এরইমধ্যে রিসোর্টে হামলার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। সোনারগাঁও থেকে স্থানীয় হেফাজতের যেসব নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন তারাও বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। মামুনুল হককে খুব শিগগিরই গ্রেফতার দেখানো হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হতে পারে রিমান্ডে। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলতে পারে।

বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সিআইডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রিসোর্টে হামলার শুধুমাত্র ভিডিও ফুটেজ নয় বরং হামলার আগে কীভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেই কল রেকর্ডও উদ্ধার করা হয়েছে। পরিকল্পনার মূলে কে ছিল, কীভাবে হেফাজত সমর্থকরা একজোট হয়ে রিসোর্টে হামলা করল। হামলার নেতৃত্বে কে কে ছিলেন- তার সবই বের করা সম্ভব হয়েছে। এখন শুধু গ্রেফতার দেখানোর পালা।’