ঢাকা সোমবার, ৫ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২

ধর্ষন মামলার বাদীকে মীমাংষার চাপ পুলিশের !


২২ নভেম্বর ২০২০ ১৮:৫৩

সংগৃহিত

ধর্ষন মামলার বাদীকে টাকা নিয়ে ধর্ষকদের সঙ্গে মীমাংষা করে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে। এসআই মতিন আলোচিত ধর্ষণ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। গত ১১ নভেম্বর বাদী আরএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি তদন্ত করছেন আরএমপির ক্রাইম ও ভিটটিক সাপোর্ট সেন্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারি কমিশনার (এসি) সোনিয়া পারভিন। এসআই

মতিনের বিরুদ্ধে আরও দুটি অভিযোগের বিভাগীয় তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। মামলার বাদী অভিযোগে বলেছেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তার ছোট বোনকে (১৬) ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে পালাক্রমে ধর্ষণ করে নগরীর মিয়াপাড়ার আফজাল হোসেনের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন বাবু ও তার অফিসের প্রহরী জুয়েল। আসামিরা ধর্ষণের সময় মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও ধারণ করেন। পরে ধর্ষণের ভিডিও ভিকটিমের পরিচিতজনদের কাছে পাঠিয়ে আসামিরা মোটা টাকা দাবি করেন। এর ফলে বাদী গত গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯

(১) ও ২০১২ সালের পর্ণোগ্রাফি আইনের ৮ ( ১) (২) ধারায় একটি মামলা করেন। মামলা নং-১০২ তাং-২৯/২/২০২০ ইং। পুলিশ মামলা রেকর্ডের পর দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেন। তারা জেলহাজতে রয়েছেন। এদিকে আলোচিত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান থানার এসআই আব্দুল মতিন। বাদী তার লিখিত অভিযোগে আরও বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মতিন ধর্ষক ও তাদের পৃষ্টপোষকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে মামলাটি মীমাংষা করার জন্য অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে

যাচ্ছেন। এছাড়া এসআই মতিনের সঙ্গে ঘুরাঘুরি করে এমন কয়েকজন ব্যক্তিও আমাদেরকে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে অথবা মীমাংষা না করলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে। আসামি পক্ষের ভয়ভীতি ও হুমকির বিষয়ে এসআই মতিনকে জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। অভিযোগকারী আরও বলেন, এসআই মতিন আমাকে একাধিকবার ডেকে বলেছেন, মামলাটি মীমাংষা করে নাও। তোমরা গরীব মানুষ। আসামিদের কাছ থেকে ভালো টাকা পাবে। তা নিয়ে তোমার বোনের বিয়ে দিয়ে দেবে। বাদীর আরও অভিযোগ, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মতিন আসামিদের

দ্বারা প্রভাবিত হওয়ায় মামলাটির চার্জশিট দিতেও কালক্ষেপন করছেন। বাদী তার, তার ভিকটিম বোনের ও পরিবারের নিরাপত্তাসহ ধর্ষন মামলাটির চার্জশিট প্রদানের জন্য আরএমপি কমিশনারের কাছে জোর অনুরোধ জানিয়েছেন। এই বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মতিন বাদীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। তিনি ভিকটিমসহ তার পরিবারকে টাকা পয়সা দিয়েও সাহায্য করেছেন। বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি-নিবারণ চন্দ্র বর্মন বলেছেন, পর্ণগ্রাফি সংক্রান্ত ফরেনসিক প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় মামলাটির চার্জশিট দিতে বিলম্ব ঘটেছে। তবে দ্রুতই চার্জশিট দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। যদিও রাজশাহীর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বলেছেন, ধর্ষণ ও পর্ণোগ্রাফি সংক্রান্ত মামলা দায়েরের তিনমাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এদিকে আলোচিত এসআই আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে আরও দুটি গুরুতর অভিযোগের বিভাগীয় তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, গত ১৯ অক্টোবর

রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক ইসমাইল হোসেনকে বাড়ি থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নগরীতে এনে পুকুরে ডুবিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। পরদিন তার কাছ থেকে হেরোইন উদ্ধার দেখিয়ে মাদক আইনে মামলা দিয়ে চালান করা হয়। ইসমাইলের স্ত্রী রোকসানা বেগমসহ এলাকাবাসী গত ২২ অক্টোবর আরএমপি কমিশনারের কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদন করেন। ইসমাইলের পরিবারসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, গোদাগাড়ী কেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী মাদক চক্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ও ইসমাইলকে দিয়ে নাম বলিয়ে অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায়ের লোভে এসআই মতিন নিরপরাধ একজন নির্মাণ শ্রমিককে গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে এনে মাদকের মামলা দিয়েছে। এসআই মতিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি তদন্ত করছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার (এসি) রাকিবুল ইসলাম । এসি রাকিব বলেন, এসআই মতিনের বিরুদ্ধে আনীত এই অভিযোটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। অন্যদিকে গত ১ অক্টোবর কাতার ফেরত দুই প্রবাসী শ্রমিকের কাছ থেকে চারটি সোনার বার উদ্ধারের পর দুটি আত্মসাতের অভিযোগ উঠে এসআই মতিনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর আরএমপি কমিশনার ঘটনা তদন্তে একটি বিভাগীয় কমিটি গঠন করেন। তবে এই বিষয়ে তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। ফলে এসআই মতিনের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, এই তিনটি অভিযোগ ছাড়াও এসআই মতিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক শৈথিল্য ও তার অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয়ের অভিযোগ উঠেছে কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীসহ

জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। লোকজনকে তুলে এনে টাকা আদায় থেকে শুরু করে , তুচ্ছ কারণে হয়রানি ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী নানান কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে এসআই মতিনের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য এসআই মতিন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আরএমপিতে রয়েছে। এসআই মতিনের বিষয়ে উঠা বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আরএমপির কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, অভিযোগগুলির তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।