ঢাকা শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১


সরকারি পুকুরে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি


৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২৮

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় দীর্ঘ আট বছর ধরে ৫১৮.৪৪ একরের ৮৩৭টি সরকারি খাস পুকুর টেন্ডার ছাড়াই মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে দখল নিয়ে স্থানীয়ভাবে গোপনে টেন্ডার দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দুস্কৃতকারীরা।

এতে রাষ্ট্র যেমন বঞ্চিত হচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে তেমনি আয়-রোজগার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত মাছ চাষীরা।

তানোরের এসিল্যান্ড আব্দুল্যাহ আল মামুন নতুন সময়কে বলেন, ২০১০ সাল থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে পুকুরগুলোর সরকারি টেন্ডার কার্যক্রম বন্ধ আছে। তবে অবৈধভাবে দখল হওয়া এসব পুকুর উদ্ধারে দ্রুত আইনি ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

তানোর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জানা যায়, তানোরে ৮৩৭ টি (এর মধ্যে তৈলু মৌজা, দাগ-৬৯ এর ২.৪৮ একর, জোতগোকুল মৌজা, দাগ-৬৮ এর ৩.৭৩ একর এবং জুমারপাড়া মৌজা, দাগ-৪০২ এর ৩.৪৫ একর এভাবে ছোট বোড় মোট ৮৩৭ টি পুকুর) ১ নং সরকারী খাস পুকুর আছে। যার মোট আয়তন হল ৫১৮.৪৪ একর। যার মধ্যে বাধাইড় ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি খাস পুকুর আছে।

ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, অসৎ উদ্দ্যেশে ২০১০ সালে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক পুকুরগুলোর টেন্ডার নোটিসের বিপরীতে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে তৎকালীন ২ নং বাধাইড় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। যার রিট হল নং ৩২৮২/২০১০। এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পুকুরগুলোর সব ধরনের টেন্ডার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু মহামান্য হাই কোর্টের নির্দেশকে অমান্য করে স্থানীয় দুস্কৃতকারীরা অবৈধভাবে পুকুরগুলো সাব-টেন্ডার দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

বর্তমানে খাস পুকুরগুলো দখলে আছে এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে প্রভাবশালী বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সাব-টেন্ডার নিয়ে মাছ চাষ করছে।

তবে গোপন সুত্রে জানা যায় উপজেলার দুটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এবং সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা (যখন যারা ক্ষমতায় থাকে) এই সমস্ত পুকুরের সাব টেন্ডারের সাথে জড়িত এবং সরেজমিনে বাধাইড় ইউনিয়নে এসব কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেছে।

এই বিষয়ে পাচন্দর ইউপি চেয়ারম্যান মতিনের সাথে যোগাযোগ উদ্দ্যেশে কয়েকবার মোবাইল করলেও যোগাযোগ করা যায়নি।

তানোরের ইউএনও গোলাম রাব্বীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মাত্র কয়েক দিন আগে এই উপজেলায় যোগদান করেছি। তবে সরকারি কোনো খাস পুকুর কেউ অবৈধভাবে দখল করে টাকা হাতিয়ে নিলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে তানোরের এসিল্যান্ড আবদুল্যাহ আল মামুন বলেন, এই রিটের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আমরা দ্রুত যোগাযোগ করবো। এর আগে কয়েক দিনের মধ্যেই অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে আমরা পুকুরগুলো মুক্ত করবো।

রিট আবেদনকারী সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, খাস পুকুরগুলো যারা টেন্ডার নিয়ে মাছ চাষ করছিল তারা স্থানীয় জনগণকে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পানি ব্যবহার করতে দিত না। বেশীরভাগ পুকুর টেন্ডারকারী ছিল তানোর উপজেলার বাইরের লোক। এর পরিপেক্ষিতে আদালতের সরণাপন্ন হয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করি।

তিনি জানান, এই রিটের ব্যাপারে আদালতের সাথে বর্তমানে তার কোনো যোগাযোগ নাই।

একেএ