ঢাকা সোমবার, ৫ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২


পল্লবীতে নাজনী’র অত্যাচারে অতিষ্ঠ বিহারিরা


৭ জানুয়ারী ২০২৩ ০৯:৫৪

রাজধানীর পল্লবীর ১০ নম্বর সেকশনের বিহারিদের মুসলিম ক্যাম্পে জেলা প্রশাসক কর্তৃক অনুমোদিত বিহারিদের নন-লোকাল রিলিফ কমিটির সেক্রেটারি আনোয়ার আলমের মেয়ে নাজনী আক্তার সাগুফতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ক্যাম্পের সাধারণ বাসিন্দা ও বিহারি নেতাসহ স্থানীরা।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, পল্লবীর ১০ নম্বর সেকশনের বিহারিদের মুসলিম ক্যাম্পের একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদে মোটরচালিত মেশিন স্থাপন করেছেন তিনি। এতে বাধা দেয়ায় নাজনীর হাতে নাজেহাল হতে হয়েছে প্রতিবেশী ও বিহারি নেতৃবৃন্দের।

ক্যাম্পটির এক বাসিন্দা জানান, ১০ নম্বর সেকশনের ব্লক এ'তে অবস্থিত মুসলিম ক্যাম্পে ৫০ থেকে ৬০ বছর পুরানো একটি পরিত্যাক্ত স্কুল রয়েছে। সে স্কুলে এখন সুবিধাবঞ্চিত প্রায় ৩৫টি পরিবার বসবাস করে। সে ক্যাম্পের ঝুঁকিপূর্ণ ছাদে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে মোটরচালিত টুইনিং মেশিন স্থাপন করেন আনোয়ার আলমের মেয়ে নাজনী। ক্যাম্পবাসীরা বাধা দিলে আনোয়ার সেক্রটারি, তার মেয়ে নাজনী, তার মাসহ তাদের সাথে থাকা সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পবাসীদের ওপর হামলা চালায়। ক্যাম্পে বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে।

এসময় বিহারিদের বৃহত্তর সংগঠন এসপিজিআরসি মিরুপর ১০ নং শাখার সভাপতি মোঃ সেলিম ইউসুফ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করলে তাকেও নাজেহাল করেন নাজনী ও তার মা।

এসময় নাজনী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রতিবেশী মনিরের বাড়ির দেয়াল হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলে এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত ক্যাম্পের নারী, শিশু ও নেতাদের ওপর হামলা চালায়।

এ ঘটনায় উল্টো পল্লবী থানায় এসপিজিআরসির নেতা সেলিম ইউসুফকে মাদক ব্যবসায়ী উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করে নাজনী। এছাড়া আদালতে ভুক্তভোগী মনির,স্থানীয় মুরুব্বি ফখরুল, সাবির, ইকবাল ও মুন্নার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে।

এ বিষয়ে এসপিজিআরসি মিরুপর ১০ নং শাখার সভাপতি মোঃ সেলিম ইউসুফ বলেন, সাগুফতা আক্তার নাজনী একজন বেয়াদব মহিলা। কথায় কথায় ক্যাম্পবাসীদের ওপর নির্যাতন চালায়। নারী হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়না। আমি ও ক্যাম্পের মুরুব্বিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু নাজনী ও তার মা আমাদের গালাগালি করেছে। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাকে মাদক ব্যবসায়ী উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার ও আমার সংগঠন ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে।

নাজনী তার ফেসবুকে লিখেছে, আমি সভাপতি হওয়ার পর নাকি আমাকে সংগঠনটির অফিসে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তার বাবা আনোওয়ার আলমের কথায় আমাকে অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানাওয়াট ও মনগড়া বক্তব্য। আমি এসব মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সরকার আমাদের ক্যাম্পে ফ্রি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। আনোওয়ার আলমের মেয়ে সে ক্যাম্পে মোটরচালিত মেশিন স্থাপন করতে চায়। এছাড়া ক্যাম্পের সেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। সেই ভবনের ছাদে এতো ভারি মেশিন স্থাপন করলে ছাদ ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর বিদুৎ সাশ্রয়ের ঘোষণা বাস্তবায়ন ও ক্যাম্পবাসীদের নিরপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে সে ক্যাম্পে মোটরচালিত কোনো মেশিন স্থাপন করতে দেব না।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে রিলিফ কমিটির সেক্রেটারির পদের প্রভাব বিস্তার করে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, ক্যাম্পের ফ্রি বিদ্যুত প্রদানের জন্য ক্যাম্পবাসীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিলের নামে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে নাজনীর বাবা ও জেলা প্রশাসক কর্তৃক অনুমোদিত বিহারিদের নন-লোকাল রিলিফ কমিটির সেক্রেটারি আনোয়ার আলমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে এক আবাসন প্রতিষ্ঠানের চুক্তি করে রাজধানীর অভিজত এলাকর একটি প্লট নিজের নামে করে প্রতিষ্ঠানটিকে হস্তান্তর করেছেন সেক্রেটারি আনোওয়ার। এর বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা ও ফ্ল্যাট পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি যাদের নেতৃত্ব দেন সেই জনগোষ্ঠীর কোনো উন্নয়ন হয়নি। উল্টো মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা করে এ অবহেলিত জনগোষ্ঠীর যুবকদের ঠেলে দিয়েছেন অন্ধকার পথের দিকে।

ক্যাম্পবাসীরা জানান, বর্তমানে অসুস্থতার কারণে রিলিফ অফিসে সময় দিতে পারছেন না আনোয়ার। এজন্য সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে নিজের মেয়ে নাজনী আক্তার সাগুফতাকে রিলিফ কমিটির সেক্রেটারি ঘোষণা করেন তিনি। তবে তার এ ঘোষণা মানতে নারাজ সাধারণ ক্যাম্পবাসী ও রিলিফ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।

তারা বলছেন, বিহারি ক্যাম্পের রিলিফ কমিটি দেওয়ার ইখতিয়ার শুধু জেলা প্রশাসকের। কিন্তু মাদক ও বিদ্যুতের ব্যবসা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই আনোয়ার নিজের মেয়েকে সেক্রেটারি ঘোষণা করেছেন আনোয়ার আলম। তবে তার এ ঘোষণা প্রত্যাখান করেছে ক্যাম্পের বাসিন্দারা।