কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল

কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক ছোট-বড় আবাসিক হোটেল ও কটেজ দেশি-বিদেশি পর্যটকে ভরে গেছে। হোটেলে রুম পাচ্ছেন না অনেকে। পেলেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। রুম না পেয়ে সৈকতেই রাত কাটাচ্ছেন কেউ কেউ।
সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি শুক্র ও শনিবার। সঙ্গে যোগ হয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটি। সব মিলিয়ে তিন দিনের টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে কক্সবাজারে।
করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি ভ্রমণপিপাসুদের এমন ঢলে পর্যটন নগরীর সাড়ে চার শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে এখন ঠাঁই নাই অবস্থা।
দেশি-বিদেশি পর্যটকে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে সমুদ্রসৈকত। বেশি টাকা দিয়েও হোটেলে রুম পাচ্ছেন না অনেকে। পেলেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। রুম না পেয়ে অনেকে আবার সৈকতেই কাটাচ্ছেন রাত।
চট্টগ্রাম থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আয়াজ জানান, অনেক বিড়ম্বনার পর তাদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। ভাড়াও দিতে হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ।
সিলেট থেকে আসা আরেক পর্যটন সাফি উদ্দিন বলেন, ‘কক্সবাজারে এসে খুব ভালো লাগছে। কক্সবাজারে অনেকবার ভ্রমণে এসেছি, কিন্তু এবার সাধারণ হোটেল ভাড়ার দ্বিগুণ দিয়েও রুম না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।’
হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে পর্যটকদের সেবা দিচ্ছেন তারা। বেশির ভাগ হোটেলেই আগে থেকে বুকিং করে অবস্থান করছেন পর্যটকরা। এ কারণে কোথাও কোনো রুম খালি নেই।
এমন ভিড়ে অবশ্য খুশি হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। করোনার কারণে গত বছর এ মৌসুমে পর্যটনশূন্য থাকলেও এবার নিষেধাজ্ঞা নেই। এতেই স্বস্তি তাদের। এক বছরের বেশি সময় ধরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠার আশা করছেন তারা।
হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে, এই সিজনে তা কিছুটা পুষিয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
হোটেলের পাশাপাশি পর্যটকদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরাও। তারা জানান, করোনা মহামারির দীর্ঘ সময়ে ব্যবসায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কখনও কাটানো সম্ভব না। তবে পর্যটকদের এবারের সাড়ায় সেই ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যাবে।
এদিকে বাড়তি পর্যটকের কারণে কক্সবাজার শহরের কলাতলী, সুগন্ধা, বাজার ঘাট, বার্মিজ মার্কেট এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এ কারণে পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
তবে বেশি ভাড়া ও ভোগান্তিতেও পর্যটদের উচ্ছ্বাস কমেনি। করোনা মহামারির চাপ আর নগর জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেয়ে বাঁধভাঙা আনন্দে মেতেছেন তারা।
সৈকত ছাড়াও হিমছড়ি, দরিয়া নগর, পাটুয়ার টেক, ইনানী, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধবিহারসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাচ্ছেন তারা। মাতছেন সাগরের নীল জলরাশিতে।
অতিরিক্ত পর্যটক সমাগমে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। পর্যটকদের নিরাপত্তায় বাড়তি প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান।
এসপি জানান, পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন তিনটি বেসরকারি সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে আগত পর্যটকদের নিরাপদে রাখতে জেলা পুলিশ অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশও সক্রিয় রয়েছে।