ঢাকা শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ২০শে বৈশাখ ১৪৩২


৩ জঙ্গী গ্রেপ্তার


২ অক্টোবর ২০১৮ ০৬:৫৯

জঙ্গী গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি জঙ্গী সংগঠনের নারী শাখার প্রধানসহ তিন জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১।

সোমবার (০১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শাহনাজ আক্তার সাদিয়া ওরফে শাহানা (২৫), রেজাউল করিম (২৮) ও জহিরুল ইসলাম ওরফে পলাশ (২৭)।

এর আগে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মাদানী নগর এলাকায় রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করে রেজাউল করিম ও জহিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ সময় রেজাউলের হেফাজত থেকে দুইটি বিদেশি পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী লিফলেট ও জহিরুলের কাছ থেকে একটি চাকু, উগ্রবাদী বই ও লিফলেট জব্দ করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে ডেমরার পশ্চিম হাজী নগর এলাকা থেকে একই দিন রাতে অপর একটি অভিযান পরিচালনা কওে বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই ও লিফলেটসহ জেএমবির নারী শাখার ঢাকা দক্ষিণের সমম্বয়কারী শাহনাজ আক্তারকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া শাহনাজ আক্তার রাজধানীর দক্ষিনখানস্থ একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং ২০১০ সালে গাজীপুর টঙ্গীর একটি মাদ্রাসা হতে আলিম পাশ করে। অত:পর ২০১৩ সালে ঢাকাস্থ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসী বিভাগে ২য় বর্ষ পর্যন্ত পড়াশুনা করে। এরপর ২০১৫ সালে আননিসা কালেকশন নামক অনলাইন ভিত্তিক একটি বোরকার ব্যবসার সাথে জড়িত হয়। উক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ২০১৬ সালে র‌্যাব-৪ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত জেএমবির সদস্য আকলিমা আক্তারের মাধ্যমে সে জেএমবির নারী শাখায় যোগদান করে। পরবর্তীতে আকলিমাসহ ইসতিশনা আক্তার (ঐশী), ইশরাত জাহান (মৌ) ও খাদিজা আক্তার (মেঘনা) নামের আরো ৩ সহপাঠী গ্রেপ্তার হলে সে কৌশলে কিছুদিন আতœগোপনে থাকে। এরপর সাদিয়া তার অনলাইন ব্যবসার আড়ালে জেএমবির নারী শাখাকে সংগঠিত করার প্রচেষ্ঠা অব্যহত রাখে। সে নারীদেরকে কৌশলে সংগঠনে যোগদানের জন্য দাওয়াত প্রদান করে থাকে।

র‌্যাবের দাবি, সাদিয়া বিভিন্ন সময়ে জেএমবি ও অন্যান্য উগ্রবাদী সংগঠনের গ্রেপ্তারকৃত সদস্যদের মহিলা আত্বীয় স্বজনদের টার্গেট করে জেএমবিতে অন্তর্ভূক্ত করছিল। সে ফেইসবুক গ্রুপের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জেএমবির জন্য অর্থ সংগ্রহ করে সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে সাদিয়া আরো জানায়, সাদিকা জেএমবির নারী শাখার ঢাকা দক্ষিণের সমম্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছে। এখানে উল্লেখ্য যে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে র‌্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত জেএমবির সদস্য বুলবুল হাসান মাহমুদ ও তার স্ত্রীর (সাদিকার বান্ধবী) মাধ্যমে সাদিয়া রেজাউল করিম ও জহিরুল ইসলামের সাথে জেএমবির সাংগঠনিক যোগাযোগ বজায় রাখতো।

এদিকে রেজাউল করিম ২০০৭ সালে বরিশালের একটি স্থানীয় স্কুল থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনার পর অটো রিক্সা চালানো শুরু করে। ২০১৪ সালে ফেইসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে বিভিন্ন উগ্রবাদী বয়ানের মাধ্যমে উগ্রবাদীতায় আকৃষ্ট হয়। ২০১৫ সালে অটো রিক্সা চালানোর সুবাদে গ্রেপ্তারকৃত জেএমবির সদস্য বুলবুল হাসানের সাথে তার পরিচয় হয়। বুলবুল বরিশালের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিল। বুলবুল তাকে বিভিন্ন জিহাদ সম্বলিত লিফলেট ও বই প্রদান করে জেএমবিতে যোগদান করতে বললে সে সম্মত হয়। এরপর সে বরিশালে বিভিন্ন জায়গায় জেএমবির গোপন হালাকায় বুলবুলের সাথে অংশগ্রহন করে জেএমবির দাওয়াতি কার্যক্রম চালানোর কৌশল রপ্ত করে। ক্রমান¡য়ে সে জেএমবির দাওয়াতী শাখা থেকে সামরিক শাখায় অন্তর্ভুক্ত হয়। চাকুরীর সুবাদে উক্ত প্রকৌশলী বুলবুল হাসান গাজীপুরে বদলী হওয়ার প্রেক্ষিতে বুলবুলের আহবানে রেজাউল ঢাকায় এসে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ী চালানোর চাকুরী নেয়। এর পাশাপাশি জেএমবির সাংগঠনিক কর্মকান্ড অব্যহত রাখে।

অপরদিকে জহিরুল ইসলাম বরিশালের স্থানীয় একটি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে যথাক্রমে ২০০৮ ও ২০১০ সালে এএসসি ও এইচএসসি পাশ করে ঢাকার একটি স্বনামধন্য কলেজ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করে। সে ঢাকায় বিবিএ পড়াকালীন অধিকাংশ সময়ে বরিশালে অবস্থান করত। ২০১৬ সালে বরিশালের একটি সালাফি মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়ে বুলবুল হাসান ও রেজাউল করিমের সাথে জহিরুল ইসলামের পরিচয় হয়। এরপর বুলবুল হাসান পলাশকে ঈমান-আকীদ্বার দাওয়াত দেয়। ধীরে ধীরে বুলবুলের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় পলাশ হানাফী মাজাহাব থেকে সালাফীতে দ্বিক্ষিত হয় এবং এক পর্যায়ে পলাশ জেএমবিতে যোগদান করে। জেএমবিতে যোগদানের পর থেকে পলাশ জেএমবির দাওয়াতী কাজ করে আসছে। এর পাশাপাশি সে সরোবর নামক অনলাইন ভিত্তিক কোম্পানীতে খন্ডকালীন চাকুরী করত। বুলবুলকে গ্রেপ্তারের পর হতে পলাশ ও রেজাউল বিভিন্ন জায়গায় গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে জেএমবির সাংঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার জন্য প্রচেষ্ঠা চালায়।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এখনও যারা গ্রেপ্তার হয়নি তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য অব্যাহতভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

একেএ