ঢাকা শুক্রবার, ১৬ই মে ২০২৫, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভৈরব সার্কেলের দুই কর্মকর্তাসহ ৪ জনের শাস্তি


১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৩:১৪

ছবি সংগৃহিত

মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে অর্থ আদায় , মাদকের স্পট থেকে মাসোহারা নেওয়া, অভিযানের নামে ঘরে রক্ষিত টাকা ও স্বর্নালংকার হাতিয়ে নেয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভৈরব সার্কেলের সদস্য বিশেষ করে এস আই সেন্টু রঞ।জন নাথ , সিপাহী মায়নুল ইসলাম ও সিপাহী সুফিয়ার বিরদ্ধে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও আটক বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। ফলে সার্কেল ইন্সপেক্টর মাসুদুর রহমানসহ দু’জন সিপাহীকে শোকজ করা করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে সময় বেধেঁ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সেন্টু রঞ্জন নাথ নামে একজন সাব ইন্সপেক্টরকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে। শনিবার ১৭ আগষ্ট দুপুরে মুঠোফোনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাবীব তৌহিদ ইমাম।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলা নিয়ে ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিস। এই সার্কেল অফিস থেকে ভৈরবসহ কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, নিকলী, অষ্টগ্রাম ও কটিয়াদী উপজেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তাছাড়া সড়ক, রেল ও নৌ-পথে অবাদ যাতায়াতের কারণে মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ভৈরবকে ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা। ফলে জেলার বাইরে ভৈরবে দেশের দ্বিতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিস স্থাপন করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভৈরবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিস থাকলেও শহরের কমলপুর, পঞ্চবটি, চন্ডিবের, কালিপুরসহ উপজেলার শ্রীনগর, আগানগর, সাদেকপুর, গজারিয়া, শিবপুর, শিমুলকান্দি ও কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় মাদকের ছড়াছড়ি। ফলে হাত বাড়ালেই মেলে মরণ নেশা ইয়াবা নামক ট্যবলেট। শুধু তাই নয়, শহরের পাওয়ার হাউজের হরিজন কলোনী এবং চান্দানী টিলায় প্রতিদিন শত শত লিটার চোলাই মদ তৈরী হলেও নজর নেই সার্কেল অফিসের। অভিযোগ রয়েছে ঐ খান থেকে মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে থাকেন তারা। এছাড়াও শহরের আমলা পাড়ায় খোদ সার্কেল অফিসের চারপাশে মাদকের ছড়াছড়ি থাকলে যেনো দেখার কেউ নেই। ফলে নির্বিগ্নে প্রকাশ্য দিবালোকে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। গত ১৯ মে পুকুরপাড় এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আলমের বাড়িতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভৈরব সার্কেল সদস্যরা। এ সময় ১৬ বোতল ফেনসিডিলসহ সামছুন্নাহার (৬৫) নামে এক মহিলাকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় সামছুন্নাহারকে প্রধান আসামী করে ঐ মামলায় আলম ও তার বোন প্রবাসীর স্ত্রী সেলীকে পলাতক আসামী করা হয়। আলমের বাড়িতে অভিযান চালানোর ৫ মিনিট পূর্বে মায়নুল ইসলাম সোর্স আবু কালামের মাধ্যমে আলমকে খবর পৌছায় । কারণ মায়নুল ইসলাম আলমের কাছ থেকে প্রতি মাসে আট হাজার টাকা করে নিয়ে থাকেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের নামে। ঘটনার দিন সেলী বেগম জানান, আমার ভাই আলম তার বাড়িতে ব্যবসা করে । আমার বাড়িতে এসে ঘরের সমস্থ আসবাব পত্র তছনছ করে দেয়। তল্লাশীর নামে সেন্টু রঞ।জন নাথ ও সুফিয়া আমার ঘরের আলমারিতে রক্ষিত ৮১ হাজার টাকা ও স্বর্নালংকার নিয়ে যায়। তখন আমার মেয়ে তাদেরকে টাকা ও স্বর্নালংকার নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেয়। তখন সুফিয়া ও সেন্টু রঞ্জন নাথ আমার মেয়েকে মারধর করেন। ঐ সময় আমি ঘরে ছিলামনা। গত ৪ ফেব্র“য়ারী শহরের সম্ভুপুর গ্রামের কালা মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় পঞ।চাশ গ্রাম গাজা উদ্ধারসহ কালা মিয়াকে আটক করা হয়। তখন তল্লাশীর নামে কালা মিয়ার মেয়ে শান্তা বেগমের বেতনের এগার হাজার চারশত টাকা সেন্টু রঞ্জন নাথ ও সুফিয়া নিয়ে যায়। টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিতে চাইলে সুফিয়া ও সেন্টু রঞ্জন নাথ শান্তাকে মারধর করে। তাদের এমন আচরণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে । এ ব্যপারে গত ৭ ফেব্র“য়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মহা পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে বলে জানায় শান্তা। এর কিছু দিন পুর মানিকদী নয়াহাটি এলাকায় এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদক উদ্ধার করতে পারেনি উপরোন্ত বাড়ির লোকজনকে হয়রানি করতে থাকে। তখন এলাকাবাসি জড়ো হলে ঐমুহুর্তে কয়েকজন সাংবাদিকদের আসতে দেখে তারা তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। মূলত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভৈরব সার্কেলের আটক বানিজ্যের মূল হোতা ও আটকের নামে চরম নির্যাতনকারি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল সেন্টু রঞ।জন নাথ, মায়নুল ইসলাম ও সুফিয়া। মূলত আটককৃতদের মারধর করে আতংক তৈরি করে তারা তাদের অপকর্ম ঢাকতে চায়। এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে উল্লেখিত সদস্যদের বিরুদ্ধে। এসকল অভিযোগের বিষয়ে সেন্টু রঞ।জনের সাথে সাংবাদিকরা কথা বলতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে অসাধাচারন করে থাকেন প্রায়ই। অফিসের ভেতরে বসে বেশির ভাগ সময়ই বাহির গেটে তালা ঝূলিয়ে রাখেন। যা এলাকাবসির কাছে রহস্য জনক। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সাইনবোর্ড না থাকার কারণে দূর থেকে এটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভৈরব সার্কেল অফিস কিনা বুঝার কোনো উপায় নেই। মাদকের টাকা যোগার করতে শহরে বাড়ছে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা। ফলে প্রায়ই ঘটছে হতাহতের ঘটনাও।

এ ব্যপারে কিশোরগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাবীব তৌহিদ ইমাম মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ইতিমধ্যে ভৈরব সার্কেল ইন্সপেক্টর মাসুদুর রহমানসহ দু’জন সিপাহীকে শোকজ করা করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সাব ইন্সপেক্টর সেন্টু রঞ্জন নাথকে অন্যত্র বদলী করেছে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভৈরব সার্কেল পরিদর্শক মাসুদুর রহমান বলেন, সেন্টু রঞ।জন নাথকে অন্যত্র বদলী করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে তিনিসহ দুই সিপাহীর শোকজের বিষয়ে বলেন এখনো আমরা কোন শোকজের নোটিশ পাইন।