ঢাকা রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১


জামালপুরে ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরি মিললো ৭১ জনের


১১ জুলাই ২০১৯ ০১:৩৭

জামালপুরে অস্বচ্ছল দিন মজুর-রিক্সা চালক, আইসক্রীম ও ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতার ছেলে-মেয়েদের পুলিশ কনস্টেবল পদে ঘুষ ছাড়া চাকুরী দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন জামালপুরের পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন। শুধু ১০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফটসহ মাত্র ১০৩ টাকা খরচ করে সোনার হরিণ খ্যাত সরকারি চাকুরী পেয়ে খুশী হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানরা।

শনিবার রাতে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে মাইকে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার সময় চাকুরী প্রত্যার্শীরা মা-বাবা ও স্বজন ছাড়াও নিয়োগ কর্তা পুলিশ সুপারকে জড়িয়ে ধরে অজোরে কাঁদতে শুরু করেন। এ সময় পুরো হল রুমে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এক এক করে ৭১ জনের নাম ঘোষণা পর তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান জামালপুরের পুলিশ সুপার নিয়োগ কর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন। সোনার হরিণ চাকরী পেয়ে তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশ সদর দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাছাড়া স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জামালপুর পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেনের এমন দৃষ্টান্তে ইমেজ ক্রাইসিসের এ সময় পুলিশ বিভাগ ব্যাপক প্রশংসার দাবিদার।

ইসলামপুর উপজেলার পূর্ব বাহাদুরপুর গ্রামের মিনারা বেগম জানান, তার বাবা মনোয়ার হোসেন একজন দিন মজুর মা অন্যের বাড়িতে ঝি’র কাজ করে। জামালপুর জেলার পুলিশ লাইন্সে যাতায়াতের খরচ পর্যন্ত তার কাছে ছিলনা। তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে ২৫০ টাকা ধার করে এখানে এসেছে। তার চাকুরী পাওয়ার বিষয়টি সে এখনও বিশ্বাস করতে পারছেনা।

সরিষাবাড়ি উপজেলার হাবিবা জান্নাত বলেন, তার বাবা আঃ সামাদ একজন দিন মজুর। অন্যের ক্ষেত-খামারে কাজ করে যা পায় তাই দিয়েই তাদের সংসার চলে। সে গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। সংসারের তাগিদেই তার চাকুরী পাওয়াটা খুবই জরুরি ছিল।

একই উপজেলার ডোয়াইল গ্রামের আফরোজা খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, তার বাবা আবুল হোসেন একজন রিক্সা চালক। যে কারণে সহপাঠিদের কাছে তার মাথা নিচু ছিল। তার ইচ্ছা ছিল নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবাকে একটি ব্যবসা ধরিয়ে দেয়ার। আল্লাহ তার আশা পুরণ করেছে।

ওই উপজেলার করগ্রামের সিএনজি চালক নুরুজ্জামানের মেয়ে তাসরিন আক্তার বান্ধবীর সঙ্গে এসে দাঁড়িয়েছিলেন লাইনে। শনিবার রাতে পুলিশ লাইন্স থেকে কান্নাজড়িত ভরাট কণ্ঠে মোবাইল ফোনে বাবা-মাকে চাকুরী পাওয়ার খবর জানায়। এ সময় তার মা-বাবাও আনন্দে কেঁদে ফেলেন।

মাদারগঞ্জ উপজেলার ভ্রাম্যমান আইসক্রীম ও সবজি বিক্রেতা প্রাণতোষ বর্মণের মেয়ে ঋতু রানী জানায়, আমার চাকুরী পাওয়ার বিষয়টি স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

নিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় জামালপুরে ৭১টি পদের বিপরীতে আবেদন করে ১ জুলাই প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় অংশ নেন দুই হাজার প্রার্থী। শারীরিক যোগ্যতায় প্রাথমিক বাছাইয়ে টেকে ৫২২ জন। ২ জুলাই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৮৫ জন। একই দিন অনুষ্ঠিত হয় মৌখিক পরীক্ষা। এ থেকে চূড়ান্ত হয় ৭১ জন। তিন সদস্যের এই নিয়োগ বোর্ডের প্রধান ছিলেন জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন পিপিএম বার ও বিপিএম। বোর্ডের সদস্য ছিলেন পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইশতিয়াক আহমেদ।

পুলিশ সুপার মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের আস্থা বাড়াতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল, মেধা যোগ্যতা ভিত্তিতে ও শততার সঙ্গে চাকুরী দেওয়ার। তাছাড়া এবার রাজনৈতিক কোন চাপ না থাকায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত ৭১ প্রার্থীর বেশিরভাগ হতদরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের সন্তান। ঘুষ-দুর্নীতির উর্ধে থেকে কোনো প্রকার ব্যত্যয় না ঘটিয়ে নিয়োগ সম্পন্ন করতে পেরে খুব ভাল লাগছে।