ঢাকা সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


নিরাপত্তা হেফাজতে মা হলো কিশোরী, আসামি দুই পুলিশ


১০ জুলাই ২০১৯ ০৬:৩৫

পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে ধর্ষণের শিকার হয়ে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে এক নাবালিকা। এ ঘটনায় ঢাকার কোতয়ালি থানায় দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি।

বর্তমানে ওই কিশোরী ও তার ছেলে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর শিশু উন্নয়ন (মহিলা) কেন্দ্রে রয়েছে।

ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে গত ২৫ জুন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (মহিলা) তত্ত্বাবধায়ক তাসনিম ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলা নম্বর-২৯ (৬) ১৯।

আসামিরা হলেন, গাজীপুর জেলা পুলিশ লাইনসে কর্মরত নায়েক সাইফুল ইসলাম ও কনস্টেবল রোকসানা এবং ঢাকা জেলার ধামরাই থানার ধুনি গ্রামের আবদুল হাইয়ের ছেলে নাঈম হাসান। মামলাটির তদন্ত করছেন কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মওদুদ হাওলাদার।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজধানীর কাফরুলের একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে ছাত্রীর বাবা ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল কাফরুল থানায় মামলা করেন।

২০১৮ সালের ১৭ মার্চ বাদীর স্ত্রী তার মেয়েকে স্কুলে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। মেয়েকে অনুষ্ঠানস্থলে রেখে স্ত্রী বাথরুমে যান। ফিরে এসে মেয়েকে আর পাননি। পরে জানতে পারেন আসামি নাঈম হাসান ও জনৈক মোতালেবসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন তাদের মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে।

পরে বাদীর মেয়েকে গত বছর ১৬ এপ্রিল উদ্ধার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত তখন তাকে গাজীপুরের শিশু উন্নয়ন (মহিলা) কেন্দ্রে নিরাপদ হেফাজতে পাঠায়।

কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল সামী আদালতকে জানান, ওই নাবালিকা ২৭ সপ্তাহের গর্ভবতী।

ওই নাবালিকা জানায়, ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ফেরার সময় রাজধানীর কোতয়ালি থানার একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। সেখানে আসামি নাঈম হাসানের সঙ্গে তার দেখা হয়। ওই রেস্টুরেন্টেই তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়।

নাবালিকার বাবা গত ১২ মার্চ ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল জড়িতদের চিহ্নিত করতে শিশু উন্নয়ন (মহিলা) কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেয়।

তদন্ত করে ৭ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালকে জানায়, ঘটনার দিন ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই ভিকটিম নাবালিকাকে নায়েক সাইফুল ও কনস্টেবল রোকসানা আদালতে নিয়ে আসেন। তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায়ই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরপর ২০ মে ট্রাইব্যুনাল অপহরণ মামলার আসামি নাঈম হাসানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করতে আদেশ দেয়।

এ ছাড়া নাবালিকাকে আদালতে নিয়ে আসা নায়েক সাইফুল ও কনস্টেবল রোকসানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নির্দেশ দেন।

সেই আদেশ অনুযায়ী গত ২৫ জুন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক তাসনিম ফেরদৌস বাদী হয়ে ধর্ষণের মামলাটি করেন। মামলায় আসামি তিনজন গ্রেপ্তার হননি।

ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর ফোরকান মিয়া জানান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল ঘটনাটি জানার পর তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মওদুদ হাওলাদার বলেন, এই মামলায় কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। আদালতের নির্দেশে পিও (ঘটনাস্থল) শনাক্ত করেছি। পিও হচ্ছে সূত্রাপুর থানায়। পরে আমি আদালতে আবেদন করছি মামলার নথিপত্র সূত্রাপুর থানায় পাঠানোর জন্য। ইতোমধ্যে আদালত আদেশ থানা পরিবর্তনের আদেশও দিয়েছে। ওই আদেশের কপি আমার কাছে আসলে আমি মামলার নথিপত্র সূত্রাপুর থানায় পাঠিয়ে দেব।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যদের কারণ দর্শাতে বলেছে আদালত। তারা জবাব দিলে বিরুদ্ধে আদালত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলবে। তবে এটা দেখবেন গাজীপুরের জেলা পুলিশ।

মামলার বাদী ও গাজীপুর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক তাসনিম ফেরদৌস বলেন, এই মামলার ভিকটিম ও তার ছেলে আমাদের এখানেই রয়েছে। তারা ভালো আছে, আগামী ১৭ জুলাই দিন রয়েছে। ওইদিন জানা যাবে আদালত কী আদেশ দেয়।

আসামি নাঈম হাসানের আইনজীবী আহসান হাবীব বলেন, এই মামলায় আদালত থেকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কী না সেটা আমার জানা নেই।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মামলা করার নির্দেশ দেওয়ার পর কোতয়ালি থানায় মামলা হয়। গর্ভবতী হওয়া নাবালিকা গত ২৭ এপ্রিল শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল হাসপাতালে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। মা ও শিশু এখনও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেই রয়েছে।