ঢাকা শনিবার, ২৭শে জুলাই ২০২৪, ১৩ই শ্রাবণ ১৪৩১


টস বিতর্কের পর বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন


৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:১৫

সংগৃহিত

সাডেন ডেথের পর আকস্মিক টস। সেই টসে ভারত জিতে। তবে বাংলাদেশ এতে আপত্তি জানায়৷ এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর দুই ঘন্টা অপেক্ষা ছিল ফলাফল ঘোষণার জন্য। রাত সাড়ে দশটার পর পুরস্কার প্রদান মঞ্চে সাফ সেই জটিলতার নিরসন করে। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় পক্ষকে সন্তুষ্ট করে যুগ্ম শিরোপা ঘোষণা করে সাফ।

টস অনুযায়ী ভারত চ্যাম্পিয়ন। বাইলজ অনুযায়ী টস হয় না, সাডেন ডেথে খেলা চলবে। ম্যাচ কমিশনার ভুল স্বীকার করে ভারতকে খেলায় ডাকে। তারা খেলায় আর আসেনি। এই নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা৷ কিন্তু টসে ভারত জেতায় এবং সিদ্ধান্ত হওয়ায় ম্যাচ কমিশনার ও সাফ মিলে মাঝামাঝি সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে অমীমাংসিতভাবে শেষের পর ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়। প্রথম পাঁচ শটের সবকটিতে বাংলাদেশ ও ভারত জালের দেখা পায়। সাডেন ডেথ টাইব্রেকারেও দুদলের পাঁচ শট লক্ষ্যভেদ হয়। দুই দলের গোলরক্ষকরাও নিশানাভেদ করলে ব্যবধান দাঁড়ায় ১১-১১। এ সময় ম্যাচ অফিসিয়ালের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে টস নামক ভাগ্য পরীক্ষায় মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায় লাল-সবুজের দল।

ম্যাচ শেষে ভারতের মেয়েরা আনন্দে মাতলেও স্বাগতিক দলের ফুটবলার কোচিং স্টাফ ও অফিসিয়ালরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ম্যাচ অফিসিয়াল সিলভা জয়সুরিয়া দিলন ও রেফারিদের সঙ্গে তর্কে জড়ান।

টাইব্রেকারে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম পাঁচ শটে লক্ষ্যভেদ করেন অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার, সুরমা জান্নাত, জয়নব বিবি রিতা, স্বপ্না রানি ও মুনকি আক্তার। ভারতের হয়ে বল জালে জড়ান নেহা, অধিনায়ক নিতু লিন্ডা, শিবানী দেবী, ললিতা ও চানু তইজাম।

সাডেন ডেথ টাইব্রেকারে বাঘিনীদের হয়ে নিশানাভেদ করেন ইতি খাতুন, সুলতানা আক্তার উমেলাহ মারমা, মোসাম্মৎ সাগরিকা ও কানন রানি বাহাদুর। প্রতিপক্ষের হয়ে বল জালে পাঠান সুলাঞ্জনা রাউল ভিক্ষিত বারা,পূজা, হেনা খাতুন ও সোনিবিয়া দেবী। এর মাঝে হেনার শট বাংলাদেশি গোলরক্ষক স্বর্ণ রানি মন্ডল লাফিয়ে ঠেকালেও তার স্থান থেকে সরে আসায় রেফারি আবার কিকের নির্দেশ দেন। ফিরতি শটে হেনা লক্ষ্যভেদ করেন। এরপর দুই দলের গোলরক্ষক স্বর্ণা ও আনিকা দেবীও বল নিশানাভেদে সক্ষম হন।

রেফারি টাইব্রেকার চালিয়ে যেতে চাইলেও ম্যাচ অফিসিয়াল তাকে ডেকে নিয়ে টসের সিদ্ধান্ত জানান। তাতে ভারত জেতার পর উল্লাসে মাতলেও বাংলাদেশ তোলে তীব্র আপত্তি।

এর আগে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৫ মিনিটে প্রায় মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে ছুটে ডি বক্সে ঢোকেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। বাঁ প্রান্ত দিয়ে এ ফরোয়ার্ড ক্রস নিলে সেটি পা দিয়ে ক্লিয়ার করতে গিয়ে ভুল করে বসেন চানু তইজাম। বল সরাসরি গোলরক্ষক বরাবর যাওয়ায় ভারত নিজেদের জালে বল জড়ানো থেকে বেঁচে যায়।

রক্ষণভাগ ফাঁকা থাকায় অষ্টম মিনিটেই গোল হজম করে বসে লাল-সবুজের দল। মাঝ মাঠ থেকে ভারতের অধিনায়ক নিতু লিন্ডার লম্বা পাসে বল নিয়েই গোলরক্ষককে একা পেয়ে প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান শিবানী দেবী।

মিনিট তিনেক পর বল ধরার সময় পুরোপুরি তা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি ভারতের গোলরক্ষক আনিকা দেবী। ওই সময় তার সামনে থাকা মুনকি আক্তার সামনে থাকলেও শট নিতে না পারায় বাংলাদেশ সমতায় ফেরেনি।

সুলাঞ্জনা রাউলের পাসে বল পাওয়া শিবানীর কোণাকুণি শট ১৭ মিনিটে পোস্টের উপর দিয়ে যাওয়ায় ব্যবধান দ্বিগুণ হয়নি।

স্বপ্না রানির কর্নার কিকে উড়ে আসা বলে ২১ মিনিটে হেড নিয়েছিলেন সুরমা জান্নাত। বল পোস্টের খানিক উপর দিয়ে যাওয়ায় সাইফুল বারী টিটুর মেয়েদের গোলের অপেক্ষা বাড়ে।

৩০ মিনিটে রাউলের পাসে বাংলাদেশের ডি বক্সে ঢোকা শিবানীর শট বলের লাইনে থাকায় ধরতে সক্ষম হন গোলরক্ষক স্বর্ণা রানি মন্ডল। পাঁচ মিনিট পর টিম ইন্ডিয়ার দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে স্বপ্নার নেয়া দূরপাল্লার শট সামান্যর জন্য জালের দেখা পায়নি ।

মুনকির অ্যাসিস্টে বল নিয়ে ৩৮ মিনিটে ডান পায়ে স্বপ্না জোরালো শট নিলেও বল ধরে ফেলেন আনিকা।

যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে শিবানীর ক্রসে বল নিয়ে নেহা শট নিলেও তা ঠিকঠাক না নিতে পারায় এক গোলের লিড নিয়ে ভারত বিরতিতে যায়।

মুনকির ব্যাক পাসে ৪৬ মিনিটে রুমা আক্তারের দূরপাল্লার শট পোস্টের উপর দিয়ে যায়। গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। খেলার ৫৪ মিনিটে নেহা ডি বক্সের ভেতরে শট নেয়ার আগ মুহূর্তে সামনে ঝাঁপিয়ে বল ধরেন স্বর্ণা। যদিও বেজেছিল অফসাইডের বাঁশি।

মুনকি ৮৩ মিনিটে বল নিয়ে অনেকটা ছুটে গেলেও আফঈদা খন্দকারকে পাস না দিয়ে নিজেই দুর্বল শট নেন। তাতে স্বাগতিকদের গোলের সম্ভাবনা নষ্ট হয়। স্বপ্নার নেয়া কর্নার কিক ৮৭ মিনিটে বারপোস্টের উপরের অংশে লেগে ফিরলে দর্শকদের হতাশা বাড়ে।

৮৯ মিনিটের মাথায় নেহার শট ক্রসবারের উপরে লাগায় ভারত এ যাত্রায় গোল পায়নি।

যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে বদলি খেলোয়াড় কানন রানি বাহাদুরের লম্বা পাস দেন। ডি বক্সে হেডে বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন ভারতের অধিনায়ক নিতু লিন্ডা। সুযোগ কাজে লাগিয়ে বল দখলে নিয়ে ডান পায়ের মাটি কামড়ানো শটে নিশানাভেদ করে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান সাগরিকা। টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ।