আজ থেকে ডিএমপির জঙ্গিবিরোধী গণসংযোগ শুরু

আজ থেকে জঙ্গিবিরোধী জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণসংযোগ সপ্তাহ শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ গণসংযোগ সপ্তাহ চলবে আগামী ৪ মে।
এর অংশ হিসেবে ডিএমপি’র ৫০টি থানায় সংশ্লিষ্ট বিট অফিসার এলাকাবাসীকে নিয়ে উঠান বৈঠক করবেন। কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে সভার আয়োজন করা হবে। পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওই সভার আয়োজন করবেন। সভায় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলে পুলিশের পদক্ষেপ ও জনগণের করণীয় বিষয়ের উপর আলোচনা করবেন।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় সংঘটিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং বাংলাদেশে ইতোপূর্বে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনার পেছনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অনুসঙ্গ রয়েছে যার ব্যাপ্তি ও পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। এ রকম একটি সমস্যা শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা নিরসন করা সম্ভব নয়। সর্বসাধারণের ব্যাপক এবং সক্রিয় অংশ গ্রহণের মাধ্যমেই একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব। বর্তমানে ডিএমপিতে ৩০২টি বিটকে সক্রিয় ও কার্যকর করে ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য এ গণসংযোগ চলবে সপ্তাহব্যাপী।
উগ্রবাদ প্রতিরোধে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম, এনজিও ও সিভিল সোসাইটির সদস্যসহ কমিউনিটির প্রত্যেকের কার্যকর ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে।
এ লক্ষ্যে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ডিএমপি:
এগুলো হল, পরিবার থেকে সন্তানদের নৈতিকতা, মানবিকতা, সহনশীলতা ও সহাবস্থানের চর্চা শেখানো; দেশপ্রেম, বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণদের উদ্বুদ্ধ করা; সকল মাধ্যমের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে অন্তর্ভূক্ত করা; খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও উগ্রবাদ বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত করা; পাড়া-মহল্লায় ক্লাব, পাঠাগার, ক্রীড়ানুষ্ঠান ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমের সুবিধা নিশ্চিত করা; প্রাপ্ত বয়স্ক না হলে সন্তানদেরকে ব্যক্তিগতভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের আচরণগত পরিবর্তনের প্রতি লক্ষ্য রাখা ও অভিভাবকের সাথে মতবিনিময়; পরিবারের সদস্য বিশেষ করে সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করা, ছোটবেলা থেকেই ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা ও ধর্মের ইতিবাচক দিক তুলে ধরা; মিডিয়াতে ব্যাপক হারে উগ্রবাদ বিরোধী প্রচারণা চালানো এবং টিভি চ্যানেলসমূহে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার; ইমাম ও খতিবদের উগ্রবাদের বিপক্ষে বক্তব্য প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ; আন্তঃধর্মীয় মানুষের পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়;
এছাড়া নিজের সন্তানের মধ্যে বিশেষ কোন পরিবর্তন যেমন: উগ্রবাদ ও সহিংস গোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শন, ধর্মগ্রন্থের ‘আক্ষরিক’ ও উগ্র ব্যাখ্যা গ্রহণে আগ্রহ, ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ, পুরনো বন্ধুদের এড়িয়ে চলা, পারিবারিক ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান বর্জন, বিনোদনমূলক কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকা, বাঙালি সংস্কৃতিকে ইসলামের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো, সরকারী অনুদানে তৈরী মসজিদে নামাজ না পড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত হওয়া, অনুপস্থিতির হার বৃদ্ধি ও ক্লাসে অমনোযোগিতা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ধর্মীয় আচারের বিষয়ে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করা, কথায় কথায় ভিন্ন মতাদর্শীদের কাফের, মুতাদ, তাগুত বলে অভিহিত করা।
এছাড়া আশপাশের নতুন ভাড়াটিয়ার ব্যাপারে ডিএমপি যেসব বিষয়ে নজর রাখতে বলেছে তা হল, নতুন ভাড়াটিয়া সবসময় দরজা, জানালা বন্ধ করে রাখে কিনা, প্রতিবেশীর সাথে মেলামেশা করে না, বাসায় সল্প ফার্নিচার রাখে, টেলিভিশনসহ বিনোদনের কোন মাধ্যম বাসায় রাখে না, কাজের লোক ব্যবহার করে না, পার্শ্ববর্তী দোকানে না গিয়ে দূরবর্তী দোকানে বাজার সওদা করে, বাসা থেকে বাহির হওয়া বা প্রবেশ করার জন্য স্বাভাবিক সময় ব্যবহার করে না, পাশের মসজিদে নামাজ না পড়ে দূরবর্তী কোন মসজিদে নামাজ পড়ে।
এসব বিষয় লক্ষ্য করলে, নিকটস্থ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।