ঢাকা শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫, ১৩ই আষাঢ় ১৪৩২


অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন


২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৪

ছবি সংগৃহীত

অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফসহ দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে বুধবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন; যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেরও প্রসিকিউটর।

রিট আবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি শরীর প্রতিরোধ গড়ে তুললে সে অবস্থাকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।এই প্রবণতার কারণে প্রতিবছর বিশ্বে সাত লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াতে পারে এক কোটিতে।

পশুখাদ্য, মাছ এবং কৃষিতে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিপজ্জ্বনক অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিতে; যা দেশে ব্যবহৃত মোট অ্যান্টিবায়োটিকের প্রায় অর্ধেক।

ফলে খুব সহজেই কৃষি খাদ্যের মধ্য দিয়ে এই অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের শরীর ঢুকছে। এতে একদিকে যেমন অ্যান্টিবায়াটিকের কার্যকারিতা হারাচ্ছে, তেমনি শরীরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছে।

অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কারণে সামান্য জীবানু সংক্রমনও এখন ব্যবহারকারীর জীবনের জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

পরিবেশবাদি সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্বৃত করে রিটে বলা হয়েছে, কৃষিখাদ্যের মাধ্যমে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করায় রাজধানীর ৫৫.৭ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

রিটে আরও বলা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা যে নষ্ট করে বা হুমকী সৃষ্টি করে, সে বিষয়টি তুলে ধরতে জাতীয় ওষুধ নীতি ব্যর্থ হয়েছে।

অপরদিকে অ্যাটিবয়োটিকের অপ্যয়োজনীয় ব্যবহার মানুষের মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এই ফাঁদ থেকে মানুষকে রক্ষা করা।

স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জন প্রশাসন সচিব ও দেশের সকল জেলা প্রশাসকদের রিটে বিবাদি করা হয়েছে।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবার রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন আইনজীবী সুমন।

গত ২২ এপ্রিল দ্য টেলিগ্রাফ সুপারবাগস লিঙ্কড টু এইট আউট অব টেন ডেথস ইন বাংলাদেশ আইসিইউস শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ৮০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সুপারবাগ দায়ী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক সায়েদুর রহমানকে উদ্বৃত করে টেলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনে বলেছে, গত বছর হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন ৯০০ রোগী। তাদের মধ্যে ৪০০ জনই মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত ইনফেকশনকে দায়ী করা হয়েছে। মৃত রোগীর বেশিরভাগ আসে সরকারি আইসিইউ থেকে। তবে সেখানে এসব রোগী যথাযথ নজরদারিতে ছিল না।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই অবস্থা বেশি দেখা যায়। কারণ এসব দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পরামর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় না। আবার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজ থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়া এবং দোকান থেকে অবৈধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে রোগীরা ব্যবহার করে। আবার মানুষের ব্যবহৃত ওষুধ অধিক লাভের জন্য পশুর ওজন বাড়াতেও প্রয়োগ করা হয়।

অধ্যাপক সায়েদুর বলেছেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশে আরও কড়াকড়ি প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক দোকানে কেনাবেচা করার সুযোগ থাকা উচিত নয়। এসব ওষুধ শুধু হাসপাতাল থেকে বিতরণ করা যাবে- এমন ব্যবস্থা করা উচিত।

নতুনসময় / আইআর