ঢাকা শুক্রবার, ২৭শে জুন ২০২৫, ১৩ই আষাঢ় ১৪৩২


ওয়াসার এমডিকে খাওয়ানো হলো না শরবত, প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন জুরাইনবাসী


২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫১

‘ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়’ গত শনিবার (২০ এপ্রিল) সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানায় পুরান ঢাকার জুরাইনবাসী। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার কারওয়ানবাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনের সামনে ‘ওয়াসার পানির শরবত’ বানিয়ে এমডিকে খাওয়াতে আসেন জুরাইনবাসী। তবে এমডি না থাকায় শরবত না খাওয়ায়েই প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরে গেছেন তারা।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে তাদেরকে প্রথমে ওয়াসা ভবনে প্রবেশে বাধা দেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাধা পেয়ে ঢাকা ওয়াসা ভবনের প্রধান ফটকে জুরাইন এলাকাবাসীর পক্ষে মিজানুর রহমানসহ ৩/৪ জন অবস্থান নেন। অপেক্ষা করতে থাকেন এমডির জন্য। তাদের অবস্থানে আশেপাশের উৎসুক মানুষের জটলা তৈরি হয়। জুরাইনবাসীরা ততক্ষণে ওয়াসার পানি ও লেবু-চিনি দিয়ে শরবত তৈরি করেন।

এর এক পর্যায়ে তাদের ওয়াসা ভবনে ঢোকার অনুমতি মেলে। তবে ওয়াসার এমডি উপস্থিত না থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলেন ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন। পরিচালকের রুমেই জুরাইনবাসীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে মিজানুর রহমানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস ও নিশ্চয়তা দেন সহিদ উদ্দিন।

বৈঠকে জুরাইনবাসীদের নিয়ে আসা পানি দিয়ে বানানো শরবত পানের আহ্বান জানালে সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আজ শরবত খাব না। ঐ এলাকার পানির সমস্যার সমাধান করে সেই পানি দিয়ে শরবত খাব।’

ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়; ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসকিম এ খাতের বক্তব্যকে সমর্থন করে ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন জানান, ওয়াটার অ্যান্ড সুয়ারেজ অথরিটি (ওয়াসা) পানি খেয়ে কেউ অসুস্থ হলে তার দায় দায়িত্ব নেবে ওয়াসা।

সহিদ উদ্দিন বলেন, এমডির বক্তব্য শতভাগ সঠিক। কারণ, আমাদের যে গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করি সেই পানি শতভাগ নিরাপদ। এছাড়াও পানি উৎপন্ন স্থল, রিজার্ভে দেয়ার আগে ও পরে তিন দফা পরীক্ষা করা হয়। পানিতে মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিছু পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ক্লোরিন দিয়ে তা বিশুদ্ধ করা হয়।

বৈঠক শেষে মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ওয়াসার এমডির সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলাম। আমরা তার পদত্যাগ চাই। যাই হোক, ওনারা আমাদের অভিযোগ শুনেছেন। দ্রুত সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা দেখব তারা কী করেন। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে জুরাইনসহ রাজধানীবাসীদের সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।

এর আগে সকালে ওয়াসা ভবনের সামনে ‘শরবত’ নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকার ওয়াসার পানি ড্রেনের পানির মতো অপরিষ্কার। পান করা তো দূরের কথা, গন্ধে হাতে নেয়াই যায় না। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডি কিভাবে বলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়, বিশুদ্ধ?

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ২০১২ সালে জুরাইনের সাড়ে ৩ হাজার বাসিন্দার গণস্বাক্ষর নিয়ে ওয়াসার এমডি বরাবর একটি অভিযোগ করেছিলাম। সেই অভিযোগে কোনো কাজ হয়নি। এখনো প্রতিদিন ময়লা পানি আসে। কয়েক বছর ধরে ওয়াসার পানি শুধুমাত্র গোসল, কাপড় ও বাসন ধোয়ার জন্য ব্যবহার করছি। খাওয়ার জন্য মসজিদের টিউবওয়েলের পানি কিনে খাচ্ছি। প্রতি ১০ লিটার পানির জন্য ২ টাকা দিতে হয়।

নতুনসময়/এনএইচ