দূর থেকে মাদক-বিস্ফোরক শনাক্ত করবে কে-নাইন

সাধারণ, ভিআইপি কিংবা ভিভিআইপি যাত্রীদের লাগেজের দূর থেকেই গন্ধ শুঁকে মাদক বা বিস্ফোরক চিহ্নিত করে দেবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডগ স্কোয়াড কে-নাইন। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তত্ত্বাবধানের কে-নাইন ইউনিটের কুকুরগুলোকে এভাবেই গড়ে তোলা হচ্ছে। ১৩টি কুকুর নিয়ে গড়ে তোলা কে-নাইন ডগ স্কোয়াড শাহজালালের নিরাপত্তাকে আরো শক্তিশালী করবে।
গতকাল মঙ্গলবার এই ডগ স্কোয়াড পরিদর্শন করেন আমেরিকান দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এর আগে তারা এই ডগ স্কোয়াডকে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। আরো অধিকতর প্রশিক্ষণের জন্য তাদের এই পরিদর্শন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, ইংল্যান্ড থেকে ডগ স্কোয়াড সদস্যদের আনার পর আমেরিকান অ্যাম্বেসির পক্ষ থেকে সেগুলোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। তারা এসব কুকুরের আবাসস্থল, খাবারসহ অন্যান্য বিষয় সরেজমিন দেখে গেছেন। দ্রুতই এ প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত ২০১০ সালের ১৩ এপ্রিল দশম গোয়েন্দা সমন্বয় সভায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার এবং বিমানবন্দরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ও দৃশ্যমান নিরাপত্তাব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে আর্মড পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১ জুন হতে বিমানবন্দরে এপিবিএন মোতায়েন করা হয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়োজিত হওয়ার পর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যদের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনের কলাকৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আপৎকালীন দ্রুত মোতায়েন হয়ে সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো ও কার্যকর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম ২৪ সদস্যের সমন্বয়ে ‘ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি)’ গঠন করা হয়। পরে এদের ডিএমপির সোয়াট টিমের আদলে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
নাশকাতমূলক কার্যক্রম নিবারণে প্রো-অ্যাকটিভ পুলিশিং প্রবর্তন করা হয়। বিমানবন্দরে আগত যাত্রী, দর্শনার্থী ও কর্মরত ব্যক্তিদের বেশে সম্ভাব্য অপরাধীদের শনাক্ত করার লক্ষ্যে চেকিং, গার্ডিং ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিরন্তর বিবিধ পুলিশি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
মানব, মাদক, অস্ত্র, অবৈধ মুদ্রা পাচার ও স্মাগলিংয়ের মতো রাষ্ট্রের নিরাপত্তার হুমকিস্বরূপ অপরাধ বন্ধের জন্য বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা/গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিমানবন্দরের আগমন ও বহির্গমন পথে নিরাপত্তা বেষ্টনী, ভিআইপি ও ভিভিআইপি টার্মিনালসহ সব স্থাপনায় আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ফলে বিমানবন্দরে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি ও বস্তুর প্রবেশ ও নির্গমন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিবিধ স্থাপনা, মালামাল এবং অবস্থানরত বিমানসমূহ আর্মড পুলিশের কঠোর নজরদারিতে থাকায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা অনেকটা সংহত হয়েছে বলে অনুমিত হয়।
সূত্রমতে, ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় এবার যুক্ত হয় আট সদস্যের ডগ স্কোয়াড। ২০১৬ সালের শেষের দিকে ইংল্যান্ড থেকে আটটি কুকুর আনে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। বর্তমানে এর সংখ্যা ১৩।
জানা যায়, বিশেষভাবে ট্রেনিং করানো এই কুকুরগুলো বিমানবন্দরের প্রবেশ-বের হওয়ার পথে তল্লাশি ছাড়াও মাদক-বিস্ফোরক শনাক্তে বিশেষভাবে কাজ করবে। আমেরিকান দূতাবাসের সহযোগিতায় দীর্ঘ দেড় বছর ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ডগ স্কোয়াডের টিমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে আর্মড পুলিশের ১৮ সদস্যকে। যাদের বলা হয় ‘ডগ হ্যান্ডলার’। কুকুরগুলোকে বিস্ফোরক ও মাদকের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা সফলও হয়েছে।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, বর্তমান সময়ের সঙ্গে তালমিলিয়ে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে। পূর্বে আমাদের ডগ স্কোয়াড না থাকার বিভিন্ন ইউনিট থেকে আনা হতো। কিন্তু বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের নিজস্ব ডগ স্কোয়াড থাকার কারণে আমদের এখন আর কারো কাছ থেকে আনতে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, উন্নত মানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিরাপত্তা যে বলয় সেটি আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে। ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা আরো সুরক্ষিত করা হয়েছে। দূর থেকে ডগ স্কোয়াডগুলো গন্ধ শোঁকার মাধ্যমে মাদক বিস্ফোরকের তথ্য দিতে পারবে।
আলমগীর হোসেন আরো বলেন, এর বাইরে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বিমানবন্দরের আমদানি এবং রপ্তানি কার্গোতে আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারি। সেখানেও কোনো ধরনের বিপজ্জনক পণ্য আনা হচ্ছে কি না সেটিও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় দুই বছর আগে থেকে কুকুরগুলোর প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আমরা বাচ্চা ডগ এনেছিলাম। এগুলো এনে দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে ট্রেনিং করানো হয়েছে। আমেরিকান দূতাবাস বিশেষভাবে আমাদের সহায়তা করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ২০১০ সালের ১ জুন থেকে বিমানবন্দরে কাজ করছি। তখন জনবলের সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। বর্তমানে এক হাজারের মতো জনবল আছে। থার্ড টার্মিনাল হলে আরো ৫০০ জনবল লাগবে। সেগুলো হলে নিরাপত্তা দিতে আমরা আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারব।’
প্রসঙ্গত, নিরাপত্তার স্বার্থে সম্প্রতি দেশের সব বিমানবন্দরে ডগ স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য একটি প্রকল্পও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প ২০১৯ সালের ১৮ মে একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ডগ স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দেন।