সরকার ও নাগরিক সমাজের জন্য ৭টি প্রস্তাবনা

জঙ্গীদমন মোকাবেলা করতে সরকার ও নাগরিক সমাজের জন্য ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
রবিবার (২৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে 'বাংলাদেশে আইএস-এর নতুন হুমকি ও কার্যক্রম : সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবনা গুলো তুলে ধরেন ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত সন্ত্রাসী সংগঠন 'আইএস' ও 'আল কায়েদা' ইরাক ও সিরিয়ায় জিহাদ করতে গিয়ে পর্যুদস্ত হওয়ার পর ২০১৭ সালেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাদের পরবর্তী তৎপরতার কেন্দ্র হবে আরব মানচিত্রের হিন্দুস্তান বর্তমান কালের পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। ২০১৬ সাল থেকে তারা হাদিসের কিছু প্রক্ষিপ্ত উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে কেয়ামতের আগে শেষ জিহাদ হবে হিন্দুস্তানের জমিনে, যেটি তাদের ভাষায় 'গাজওয়ায়ে হিন্দ', এবং এর প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে, প্রতিপক্ষকে কীভাবে ধ্বংস করতে হবে তার উল্লেখ আইএস ও আল কায়েদার প্রকাশনাসমূহ এবং তাদের নেতৃবৃন্দ সহ এদেশীয় সহযোগীদের বিভিন্ন ওয়াজ ও জলসার বক্তৃতায় আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালের জুলাই-এ ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গীদমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য প্রদর্শন করেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত কয়েক বছরে জঙ্গীদের বহু আস্তানা ধ্বংস করেছে, তাদের বহু হামলার চক্রান্ত ও উদ্যোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে, বহু জঙ্গী ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে এবং অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'শূন্য সহিষ্ণুতা'র ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়েছে। তবে এ কথা আমরা বার বার বলছি জঙ্গীদমনই যথেষ্ট নয়, জঙ্গীদের আদর্শ ও রাজনীতি যাকে আমরা 'মওদুদিবাদ' ও 'ওয়াহাবিবাদ' বলি, তাকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে নির্মূলনের কোন সমন্বিত কার্যক্রম কোথাও দেখছি না।
তিনি সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, দেশে যেহেতু শক্তিশালী কোনও বিরোধী দল নেই। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ এবং সরকার ও গণপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন উদ্যোগকে আরও সক্রিয় ভাবে পালন করতে হবে।
প্রস্তাবনা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—
সংবিধানের ৩৮ ধারা অনুযায়ী ধর্মের নামে রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা, ওয়াজ ও খুৎবার নামে যারা শান্তি ও সহমর্মিতার ধর্ম ইসলামকে অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা ও সন্ত্রাসের সমার্থক বানাবার অপচেষ্টায় লিপ্ত, সেসব ব্যক্তিকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা, ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে অবিলম্বে সকল ঘৃণা-বিদ্বেষ ও উন্মদনা সৃষ্টিকারী প্রচারণা বন্ধ করা এবং প্রচারকদের শাস্তির আওতায় আনা, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন, গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের আহব্বান জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের সকল কার্যক্রমের উপর প্রখর নজরদারি রাখুন এবং মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন, মওদুদিবাদী মোল্লাদের আপত্তির কারণে ১লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের সময়সূচি নিয়ন্ত্রণ কিংবা চিরায়ত গ্রামীণ মেলার শান্তিপূর্ণ আয়োজনের উপর বিধিনিষেধ জারি কোনওভাবে কাম্য নয়। প্রশাসনের এ ধরনের কার্যক্রম সমাজে অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও উগ্রতা সৃষ্টির পক্ষে সহায়ক যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষাকে মানবিক ও যুগোপযোগী করার পাশাপাশি সকল শিক্ষা মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করা সহ মাধ্যমিক পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বাধ্যতামূলক করা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল প্রমুখ।
নতুনসময়/আইআর