ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


এরশাদকে ঘিরে ‘ষড়যন্ত্র’ ফাঁস করলেন বিদিশা


৬ মে ২০১৯ ১২:০০

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ যে কারনে নিজের ছোট ভাই ও দলের কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন।

শনিবার (৪ মে) রাজধানীর বারিধারায় প্রেসিডেন্ট পার্কে রাত ১১টায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ ঘোষণা দেন এরশাদ।

এ সময় এরশাদ জানান, আমার অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান থাকবেন জিএম কাদের। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কাদের।

এদিকে এরশাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ।

তার স্ট্যাটাসে এরশাদের সঙ্গে দলীয় নেতা ও আত্মীয়দের আচরণের বিভিন্ন দিক উঠে আসে। যাকে তিনি ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তাদের ছেলে এরিকের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি। পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

"শাব মেহের"এর শবের উপর কোন মহাজন নাচতেছে- আমার আব্বা কবি আবু বকর সিদ্দিক এর লেখা বিখ্যাত গানের প্রথম দুই লাইন। "শাব মেহের" আমাদের উত্তরবংঙ্গের একজন অবহেলিত নারীর জীবনের বাস্তব ঘটনা। আমাদের সমাজের দুর্বিষহ কিছু যন্ত্রণায় তার মৃত্যু হয়। শাব মেহেরের মৃত্যুর পর তার লাশ নিয়ে আবার অনেকে সিনেমা তৈরি করেছিল, রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেছিলেন, কবি তাঁর গানের মাধ্যমে এই কথাটি ফুটিয়ে তুলেছেন।

আমাদের সমাজে এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে যদিও এই ঘটনা গুলোকে আমরা সামাজিক ব্যাধি হিসেবে মনে করি। অতিসম্প্রতি রাজনীতির উপরের মহলে একজন ব্যাক্তির জীবিত অবস্থায় কিছু ঘটনা দেশের মানুষের বিবেককে কিছুটা নাড়া দিয়েছে। আমি সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ-এর কথা বলছি। একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট কতটা অসহায় হলে থানায় ডায়েরি করতে যেতে হয়, তার সম্পদের উত্তরাধিকার ঠিক করতে হয়, স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাত হয়, জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে থানায় মামলা করতে হয়। হাসপাতালে ঘুমাতে হয়। অনেক কিছু থেকেও কিছুই নেই আজ। মৃত্যু শয্যায় আজ পাশে আপন কেউ নেই, কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্ত তাকে আজকের এই পর্যায়ে একা পরিবার বিহীন করেছে। আমার ছোট শিশু এরিক-ই উনার শেষ ভরসা। এরিক কতটুকুই বা বুঝে, বয়স্ই বা কত, তাছাড়া এরিক কিছুটা শারীরিকভাবে স্পেশাল চাইল্ড। ভালভাবে হাটতে ওর কষ্ট হয়। এই অবস্থায় প্রতিদিন ওর ড্যাডি ঘুমিয়ে গেলে সবথেকে বেশি টেনশন হয় ওর। ছোট্ট হাত দিয়ে ড্যাডির নাকের কাছে শ্বাস-প্রশ্বাস চেক করে দেখে। হাত পায়ের আঙুল টেনে ধরে জিজ্ঞেস করে ড্যাডি ঠিক আছো তো? তোমার শরীরের অবস্থা কি? হসপিটাল যাবে কি? সারাক্ষণ ড্যাডির মৃত্যু ভয় ওকে তাড়া করে বেরায়। জাতীয় পার্টি মামা, আংকেল এমপিরাও আর ঘন ঘন বাসায় আসেন না। কেউ আর আগের মতো ডিনারও পাঠায় না। কত যন্ত্রণা নিয়ে সময় কাটে আমার এরিকের। আজকাল স্কুলে গেলেও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে হয়। আমি এরিক এর মা, একজন মা হিসাবে এই কষ্ট আমাকে কতটুকু নাড়া দেয় শুধু মা জাতি বুঝতে পারবে। এই অবস্থায় বাপ-বেটার জন্য অনুশোচনা বোধ থাকলেও আমারই কি'বা করার আছে?

আগে দেখতাম অনেকে এরশাদ সাহেব এর কাছে পদ-পদবীর জন্য আসতো বা ভিড় জমাতো এখন শুনি পত্র-পত্রিকায় দেখি ব্যাতিক্রম কিছু মানুষ ছাড়া সম্পদের ভাগবাটোয়ারা, দলীয় ক্ষমতা কিভাবে কাকে ডিঙিয়ে কে নিবে তা নিয়ে সবাই ব্যাস্ত। উনাকে মানসিকভাবে এত দুর্বল করা হয়েছে যে মরার আগেই উনি যেনো মৃত! আজ নিজের কবরের জায়গাও নিজেকে কিনতে হচ্ছে। বিষয়টি এখন এমন পর্যায়ে গিয়েছে। উনার কোন দূর্ঘটনা ঘটলে মনে হয় অনেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে , ক্ষুধার্ত শকুনেরা যেন খাদ্যের জন্য অপেক্ষায় আছে।
বাড়ি, গাড়ি, ট্রাস্ট কোনকিছুই দরকার নেই এরিক এর। মায়ের যা আছে তা দিয়ে ডাল, ভাত খেয়ে বড় হতে পারবে অনায়াসে। আজ শুধু প্রয়োজন ছিল পিতা মাতার দুইজনের সঙ্গ।

ষড়যন্ত্রকারীদের কারনে এরিক আজ মায়ের আদর থেকেও বঞ্চিত।

এখনই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে এরশাদ সাহেব এর অবর্তমানে এরিক এর অবস্থা নিয়ে আমি শংকিত।

অবস্থাদৃষ্টে এখন মনে হল সেই বিখ্যাত উক্তি, 'শাব মেহের এর শবের উপর কোন মহাজন নাচতেছে।


নতুনসময়/এনএইচ