ঢাকা শনিবার, ১১ই মে ২০২৪, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩১


দলীয় কোন্দলে আওয়ামী লীগ, বাদ পড়ছেন ৩৭ এমপি


১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:১৭

জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ততই প্রকাশ্য এবং সহিংস হয়ে উঠছে। এ পর্যন্ত নিজ নিজ এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৩৭ জন সাংসদকে। বিভিন্ন ঘটনায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, দিনে দিনে এই তালিকা আরও বড় হবে।

অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নিজ সংসদীয় এলাকায় জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করার অভিযোগ এনে দিনাজপুর-১ আসনের এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপালকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বীরগঞ্জ-কাহারোল আওয়ামী লীগ ঐক্য পরিষদ।

বরগুনা-১ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনীতির অপব্যবহারের অভিযোগ এনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

এছাড়া রাজশাহী- ৫ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারাকেও নিজে এলাকা পুঠিয়া-দুর্গাপুরের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, শুধু এই তিন এমপিই নয়, গতকাল সোমবার বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধেও ‘নির্যাতন-সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মাদক প্রতিরোধ কমিটি’র ব্যানারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।

এছাড়া বগুড়ার এক এমপিকেও বহিষ্কার করার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ কমিটি প্রস্তাব করেছে। রাজশাহীতেও এক এমপিকে বহিষ্কার করার দাবি উঠেছে বলে শোনা যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী আমেজের মধ্যেই এখন পর্যন্ত ৩৭টি জেলায় আওয়ামী লীগের এমপিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ওই এমপিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া আরও ৬৫ টি নির্বাচনী এলাকা রয়েছে যেখানে বর্তমান এমপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কমিটির বিরোধ এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরোধ প্রকাশ্য। এসব ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন গোলযোগে ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনী দ্বন্দ্ব, নির্বাচনী মনোনয়নের জন্য প্রতিযোগিতা তার কদর্যরূপ প্রকাশ করছে, আওয়ামী লীগের কয়েকজন রাজনীতিবিদের কার্যক্রমের মাধ্যমে। এর ফলে জনগণের সামনে প্রকাশিত হয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি।

দলীয় বিভক্তির এমন প্রদর্শনী আওয়ামী লীগকে উদ্বিগ্ন করেছে। নির্বাচনী বছরে এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় অবাঞ্ছিত হওয়ার খবরে উদ্বিগ্ন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিষয়টি সুরাহা করতে এবং এলাকায় কেন তাদের এই অবস্থা জানতে দিনাজপুরের এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল, রাজশাহীর এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও বরগুনার এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ মোট ১৪ জনকে শোকজ করেছে দলটি।

এছাড়া সিলেট সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল উঠে আসায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহউদ্দিন সিরাজ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন কামরানকেও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

এ তালিকায় আরও আছেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, সিলেট নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দীন, রাজশাহী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক মামুন, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট হামিদুল ইসলাম, রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বীরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা, সিলেট মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন।

তবে এসব পদক্ষেপ নিয়েও তেমন কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। দিনে দিনে বেড়েই চলেছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

এমএ