ঢাকা শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপরীত মেরুতে বিএনপি, অংশ নিচ্ছে জামায়াত


৩১ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৬

সংগৃহীত

আগামী ৮ মে থেকে দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু করার তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। মোট চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন। যশোরের আট উপজেলার নির্বাচন হবে তিন ধাপে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের তারিখ ২৩ মে। দ্বিতীয় ধাপে হবে শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলা পরষিদের নির্বাচন।

তবে, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী ভিন্ন কথা বলছে। বিএনপি বলছে, তারা এখনই নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ভাবছে না।

আর জামায়াত ইসলামী বলছে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে। সেই লক্ষে প্রস্তুুতিও নিচ্ছে জোরেসোরে।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তুুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বসে নেই বিরোধী শিবিরের দলও। যশোরে ইতিমধ্যে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী উপজেলা নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেবল প্রস্তুতি নিচ্ছে না, প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেবে বলে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন।

অপরদিকে, দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতারা এখনো পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে সিরিয়াসলি কিছু ভাবেননি। নেতারা নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ নিয়ে এখনো সন্দিহান।

জেলা পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে তাদের এখনো পর্যন্ত কিছুই বলা হয়নি। এ কারণে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তারা এখনই মন্তব্য করতে ইচ্ছুক না। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসলে তখন সিদ্ধান্ত নেবেন’।

যশোরের শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্তে নির্বাচনের সমীকরণ বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘিরে নতুন বলয়ে প্রার্থীরা শক্রিয় হচ্ছেন। বর্তমান চেয়ারম্যানরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। দলীয় প্রতিপক্ষের কঠোর বিরোধিতার মুখে তাদের পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন করতে চায় সরকার। নির্বাচনকে প্রবাহিত

করতে এমপি মন্ত্রী কারোই হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতায় আছে বলে করবে এটা কোনো অবস্থায় হবে না। যে উদ্দেশ্যে নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত করা যাবে না।

উপজেলা নির্বাচনকে সম্পূর্ণভাবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন করতে চাই আওয়ামী লীগ। এ ঘোষনার পর স্থানীয় সংসদ সদস্যরা নির্বাচনকে সামনে রেখে কাকে সমর্থন দেবেন সেটাই দেখার বিষয়।

সর্বশেষ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে যশোরের শার্শায় সিরাজুল হক মঞ্জু ও ঝিকরগাছার মনিরুল ইসলাম নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাদের প্রত্যেককে এবার দলীয় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে।

অনেকের বিজয়ী হওয়া আরও কঠিন হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার-ফেস্টুন ও গণসংযোগের মাধ্যমে আগাম জানান দিচ্ছেন।

শার্শা উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জুর বিরুদ্ধে লড়বেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, উপজেলা যুবলীগের নেতা অহিদুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব উদ্দিন, হাসান ফিরোজ টিংকু। তবে এখানে যারা প্রাথী সবাই স্থানীয় এমপির আস্তাভাজন। এমপি যাকে নির্বাচিত করবে তিনিই প্রার্থী চুড়ান্ত।

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামকে লড়তে হবে দলের শক্তিশালী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আলী রায়হান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল।

চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া উচিত নয়। মাঠ উন্মুক্ত থাকুক। যার জনপ্রিয়তা আছে, জনগণ তাকে নির্বাচিত করুক। জনপ্রিয় নেতাদের কাছে দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচন সহজ।

এদিকে শার্শা ও ঝিকরগাছায় জামায়াত ইসলামী তাদের প্রার্থী চুড়ান্ত করে রেখেছে। ঝিকরগাছায় দলীয় প্রার্থীর নাম প্রকাশ করলেও শার্শায় দলীয় প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করেনি। মনোনয়ন পত্র দাখিলের পর জানা যাবে কে কোন পদ নির্বাচন করছে এমনটি জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা।

শার্শা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুজ্জামান মধু বলেন, ‘কেন্দ্র চুড়ান্তভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমার জানা নেই।’

বিএনপির জোটভুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে শোনা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াত এখন আর আমাদের জোটভুক্ত না। তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদের মতো হবে’।

যে নির্বাচন জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনরায়ের প্রতিফলন ঘটবে না, যে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে না, সেই নির্বাচনী ব্যবস্থায় অন্ততঃ আমার কোনো আস্থা নেই।

এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষনার পর স্থানীয় নেতা কর্মীসহ ভোটররা উজ্জীবিত। কে নির্বাচনে এলো কে এলো না সেটা নিয়ে আমাদের কোন ভাবনা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। জনগণ যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন তিনিই চেয়ারম্যান। প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। দলীয় ভাবে বসে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে প্রার্থী দেওয়া হবে। তারপরও প্রার্থী হিসেবে যে কেউ অংশ নিতে কোন আপত্তি নেই।

নতুনসময়/এএম


উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, কমিশন, যশোর, ঝিকরগাছা উপজেলা, জামায়াত, বিএনপি