ঢাকা শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ২০শে বৈশাখ ১৪৩২


যে কারণে তারেকের যাবজ্জীবনে বিএনপিতে চাপা উল্লাস


১৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:১৮

ফাইল ছবি

বুধবার (১০ অক্টোবর) ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। ঐতিহাসিক এ রায়ে পুরোপুরি খুশি নয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অনেকেই মনে করছেন, এ রায় আওয়ামী লীগকে অস্বস্তি দিয়েছে। অন্যদিকে প্রকাশ্যে রায়ের সমালোচনা করলেও এই রায়ে বিএনপির চাপা উল্লাস লুকানো যায়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, এই রায় বিএনপিকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে নিয়ে যাবে না। এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি তেমন কোনো কর্মসূচিও দেয়নি।

নির্বাচনের আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ এই মামলায় তারেক জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করেছিল। ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, এই রায়ে তারেক জিয়ার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলে দলটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যেত। এর ফলে, তারেক জিয়াকে বিএনপির নেতৃত্বে রাখা কঠিন হয়ে পড়তো। আন্তর্জাতিকভাবেও ব্যাপক চাপে থাকতো বিএনপি।

একটি দলের অন্যতম প্রধান নেতার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ঐ দলটিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতো। বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবে তুলে ধরতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সহজ হতো। যদিও তারেক জিয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। কিন্তু এতে তারেক জিয়াকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরানো সম্ভব নাও হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। কারণ, তারেক ইতিমধ্যে দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন। নতুন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তারেক জিয়ার ব্যাপারে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি যা বলার চেষ্টা করছে যে এই রায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফসল- ‘যাবজ্জীবন’ কারাদণ্ড দেওয়ার ফলে এটা বলা তাদের জন্য আরও সহজ হলো। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মৃত্যুদণ্ডের আদেশ নিয়েই শঙ্কায় ছিলেন।

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, এরকম একটি রায় হলে আমাদের আন্দোলনে যেতেই হতো। সেই আন্দোলনে অন্যান্যরা নীতিগত কারণেই হয়তো দূরে থাকতো। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই রায়ে তারেক জিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়তো। আন্দোলন বা নির্বাচনে এর স্পষ্ট প্রভাব পড়তো। কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়তো। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় বিএনপি কর্মীরা বরং চাঙা। এর ঠিক বিপরীত চিত্র আওয়ামী লীগের কর্মীদের। এই মামলায় তারেক জিয়ার মৃত্যুদণ্ড হলে তুঙ্গ মনোবল নিয়েই আওয়ামী লীগের কর্মীরা নির্বাচনের মাঠে নামতো। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলছিলেন, ‘উজ্জীবিত কর্মীদের চেয়ে আর বড় শক্তি নেই। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক জিয়ার ফাঁসির আদেশ হলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা উজ্জীবিত হতো। এটা নির্বাচনে টনিকের মতো কাজ করতো।’

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন, মেয়াদের শেষ প্রান্তে এই রায় হিতে বিপরীত যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিচার হয়েছে এটিই বড় অর্জন। এটাকেই এগিয়ে নেয়াটা জরুরি। আর বিএনপি নেতৃবৃন্দ উল্লাস চেপে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, নির্বাচনের আগে এই রায় বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করবে। এই রায় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি কাউকেই পুরোপুরি সন্তুষ্ট বা পুরো অসন্তুষ্ট করেনি।

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার