ঢাকা শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ২০শে বৈশাখ ১৪৩২


কাঠগড়ায় তারা


৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:১৩

বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একটি চিঠি দিয়েছেন কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাটিসিয়া স্কটল্যান্ড। চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়, সেজন্য এ নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণের জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্যাটিসিয়া লিখেছেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপিকে উৎসাহিত করছি। কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য।’

প্যাটিসিয়া যে চিঠি ফখরুলকে দিয়েছে, সেই চিঠিতে বিএনপির ৭ দফা দাবি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন নয় এমন কোনো কিছুর উল্লেখ নাই। এ কারণে এই চিঠি নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় চলছে।

গত ছয় মাস ধরে বিএনপি ব্লু স্টার নামে একটা মার্কিন কোম্পানিকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ করেছে। বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমির খসরু মাহমুদ, ব্যারিস্টার হুমায়ূন কবিরসহ একাধিক বিএনপির নেতা আন্তর্জাতিক লবিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একাধিক বিএনপি নেতা কয়েক দফা বিদেশে সফর করেছেন। তাদের মুল উদ্দেশ্য ছিল যে, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়, যেন নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তত কিছু দাবি দাওয়া মেনে নেওয়া হয়। অন্ততপক্ষে নির্বাচনে সময় একটা নিরপেক্ষ অবয়ব তৈরি হয়।

মির্জা ফখরুলও এজন্য জাতিসংঘ পর্যন্ত গিয়েছিলেন জাতি সংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতারেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম গুতারেসের সাক্ষাৎ পান নাই। তিনি একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের সাক্ষাৎ পেয়েছেন।

কমনওয়েলথ মহাসচিবের চিঠির মাধ্যমে প্রমাণ হলো, বিএনপির পক্ষ থেকে প্রায় শত কোটি টাকা যে কূটনৈতিক তৎপরতায় ব্যায় করা হলো তার সবই ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ কমনয়েলথ মহাসচিব শর্তহীনভাবে বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।

বিএনপি নেতারা প্রশ্ন করেছেন যে, আমাদের যারা কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিল, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে দফায় দফায় পাঁচ তারকা হোটেলে বৈঠক করলো, বার বার বিদেশ গেলো, তাঁরা কি অর্জন করল, তাঁরা কি বাংলাদেশের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝাতে পেরেছে?

জানা গেছে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও চিঠি পেয়ে হতবাগ হয়ে গেছেন। তিনি চিন্তাও করতে পারেন নি যে, নির্বাচনের আগে বিএনপি যখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন এই চিঠি বিএনপিকে অনেকটাই ব্যাকফুটে নিয়ে গেছে।

উল্লেখ্য বিএনপি গত দুই মাস ধরে নির্বাচনের জন্য ৭ দফা দাবি করে আসছে। বিএনপির ৭ দফা দাবির মধ্যে অন্যাতম দাবিগুলো হলো, খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি, জাতীয় সংসদ বাতিল করা, সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী নিয়োগ দেওয়া।

কমনওয়েলথ মহাসচিবের চিঠিতে বিএনপির উল্লেখিত দাবির কোন কিছুই উল্লেখ করা হয় নাই। এমনকি বিএনপি যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের যে প্রস্তাব দিয়ে আসছে, যেটা সরকার বারবার বলছে কোনো রকম আলাপ আলোচনার সুযোগ নাই। সেই আলাপ আলোচনার বিষয়েও কমনওয়েলথ মহাসচিব কিছুই বলেন নাই। বরং সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বলেছে বিএনপিকে। মনে করা হচ্ছে কমনওয়েলথ মহাসচিবের এই চিঠি বিএনপির একটা কূটনৈতিক পরাজয়, এবং আওয়ামী লীগের কূটনৈতিক জয়?

 

এমএ