আমি জানি এ পথে আমার মৃত্যু

মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই পৌর ভবনের একটি কক্ষে অবস্থান নিয়েছেন পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা।
বুধবার সারা দিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোম্পানীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও পৌর ভবনে কয়েকশ অনুসারী-নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান নেন তিনি। ১৪৪ ধারা চলাকালে পাঁচজনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও পৌর ভবন ও চত্বরে কাদের মির্জার অনুসারী অনেক নেতাকর্মী অবস্থান করছিলেন। তাদের সরাতে বা ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে উপজেলা সদরজুড়ে অতিরিক্ত র্যাব, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টহল দেখা গেছে। এ অবস্থায় সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন কাদের মির্জা। এদিন দুপুরে যুগান্তরের সঙ্গে একান্তে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি জানি এ পথে আমার মৃত্যু হবে। তারপরও আমি দেখতে চাই ওরা কত খেলা খেলে। আমার কাছে অস্ত্র নেই। আমি অস্ত্রের রাজনীতি করি না। তারা দুটি লাশ ফেলল। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হোক।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কথা বলে প্রধানমন্ত্রীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন ওবায়দুল কাদের। আমার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক কথা বলেছেন। পরশু (সোমবার) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানতে চেয়েছিলেন ভাইয়ের সঙ্গে আমার কী হয়েছে? আমি বলেছি: আপা, আমার অনেক কথা আছে। আমি আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে বলতে চাই।’
আরেক প্রশ্নে কাদের মির্জা বলেন, ‘এদেশে ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা কঠিন। গত নির্বাচনে সরকারি কর্মকর্তা বলেছিলেন ২৫ শতাংশ ভোট কেটে নিতে হবে। ইউ ডু ইট। এটা আমি মেনে নিতে পারি না। শেখ হাসিনার অনেক অর্জন আছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা জনগণকে ভোটাধিকার দিতে পারিনি। আমার কোনো মোহ নেই। আমার যা পাওয়ার আমি পেয়ে গেছি।’
এভাবে স্রোতের বিরুদ্ধে কথা বলে কতক্ষণ টিকতে পারবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যতক্ষণ পারি ততক্ষণ টেকার চেষ্টা করব। আমি এখানে (পৌর ভবনের একটি কক্ষে) অবস্থান নিয়েছি। সমস্যার সমাধান ও দাবি পূরণ না-হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে আমি বাসায় যাব না। কত খেলা খেলে দেখি। আমি জানি এ পথে আমার মৃত্যু হবে। ইন্দিরা গান্ধী, মহাত্মা গান্ধী, সুবাস বসু, বঙ্গবন্ধু সত্য বলতে গিয়ে মারা গেছেন। আমারও মৃত্যু হবে। আমি বুঝে-শুনেই সব করছি। কারণ, এখানে যে লুটপাট চলছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমার কথা বলে যাব।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের আগের পজিশনে (অবস্থান) নেই। তার মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়। তার স্ত্রী তাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। একরাম ও নিজাম হাজারীর কাছ থেকেও সে মাসোহারা খায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে যারা সুযোগ-সুবিধা নেন, তারা একরাম চৌধুরী ও মন্ত্রীর স্ত্রীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আর যারা কোনো সুযোগ-সুবিধার মধ্যে নেই, তারা আমার সঙ্গে আছেন। আমি গরিবের পক্ষে কথা বলি। এখানে প্রশাসন গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়। আমি এর বিপক্ষে কথা বলি।’
মঙ্গলবারের গোলাগুলি প্রসঙ্গে কাদের মির্জা বলেন, ‘বাদল পরিকল্পিতভাবে ফেনী, দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও সুবর্ণচর এলাকা থেকে অস্ত্রধারীদের এনে হামলা চালিয়েছে। এখানকার ৫০-৬০ জনের অস্ত্র আছে।’