ঢাকা মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১


এখনো আগুন সন্ত্রাস ছাড়তে পারেনি বিএনপি : কাদের


১৩ নভেম্বর ২০২০ ২০:১০

ফাইল ছবি

গতকাল হঠাৎ করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১০টি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘গতকালের ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে বিএনপি তাদের চিরাচরিত অভ্যাস থেকে সরতে পারেনি।’ এ ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।


রাজনৈতিক কোনো অস্থিরতা ছাড়াই গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ১০টি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বাদী হয়ে ছয় থানায় নয়টি মামলা করেছে। এসব মামলায় চার শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।

বাসের আগুনের ঘটনায় বিএনপি জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের সাধারণ মানুষ যখন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোটের মাধ্যমে প্রকাশ করেছিল। তখন ঢাকা-১৮ আসনের নির্বাচনী এলাকার তিনটি স্থানে, রাজধানী ঢাকার একাধিক স্থানে আগুন সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। সে পুরনো আগুন সংস্কৃতির পুনরাবৃত্তি এটা যারা আগে ঘটাতো তারা ঘটিয়েছেন।'

'এরই মধ্যে প্রচুর ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো পুলিশের কাছে আছে। সেখানে চেনা কিছু তরুণ কর্মীদের উপস্থিতি...চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। কৌশলটা ছিল এমন বাসের ভেতর যাত্রী হিসেবে পেছন সিটে বসে হঠাৎ আগুন..আগুন বলে আগুন লাগিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে নেমে যায়।'

কাদের বলেন, 'তাদের কৌশলই হচ্ছে তারা নির্বাচন নিয়ে খুব হইচই করবে। নির্বাচনের প্রচারণা করবে। কিন্তু নির্বাচনের দিন কোনো এজেন্ট দেবে না। এজেন্ট বের করে দিয়েছে এ অপবাদ দেয়ার জন্য। বিএনপি আগেই জানে, গণরায় তারা হেরে যাবে। সে কারণেই তাদের কৌশলটা হচ্ছে নির্বাচনকে বিতর্কিত করা। নির্বাচন করা তাদের লক্ষ্য কারণ তাদের লক্ষ্য নির্বাচনে জেতা না। তারা জানে জনগণের ভোটে তারা জিততে পারবে না। তারা গতকালকে যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কাজই হচ্ছে হম্বিতম্বি করবেন কিন্তু ভোটের দিন তাদের লোক নেই।'

'গতকালের নাশকতা প্রমাণ করেছে বিএনপি তাদের চিরাচরিত সন্ত্রাসী পরিহার করতে পারেনি। তাদের এই ধরনের সন্ত্রাসী এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণ বারবার তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।'

কাদের বলেন, 'আমরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, বিএনপি এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।' করোনাকালে বিশ্বের কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেনি বলেও দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।

বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমরা তাদের প্রতি আহ্বান জানাই ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসুন, সন্ত্রাসী এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিহার করুন। না হলে বাংলাদেশে জনগণকে সাথে নিয়ে আপনাদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।'

বিএনপির মহাসচিব এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন যে দুটি আসনে নির্বাচন হয়েছে এখান থেকে দৃষ্টি সরাতে আওয়ামী লীগ তাদের ক্যাডারদের দিয়ে সন্ত্রাসী হামলা করেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'এই মিথ্যাচারের রাজনীতি, অপরাজনীতি কবে তারা পদত্যাগ করবেন। আর যতদিন করবে না ততদিন তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও বেশি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। এরা তো সেই দল যারা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে তারপরে বলে, শেখ হাসিনা নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিল।'

‘করোনাভীতির কারণে ঢাকায় ভোটার উপস্থিতি কম’

গতকাল ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। একই সময়ে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫১ শতাংশ। রাজধানীতে করোনাভাইরাসের ভীতি বেশি থাকায় ভোটার উপস্থিত কম ছিল বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'ঢাকা শহরে করোনাকালীন একটি ভীতি কাজ করছে। অনেকেরই ভোটের বিষয়ে সমর্থন আছে। কিন্তু এ ধরনের নির্বাচনে জিতলে বা হারলে সরকার পরিবর্তন হচ্ছে না এজন্য অনেকে ইচ্ছে করেই হয়তো কেন্দ্রে যায় না। তবে সারা বাংলাদেশের চিত্র কিন্তু ভিন্ন।'

নির্বাচনে কারচুপি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, 'কোনো মিডিয়া বা কোনো পত্রিকায় বলেনি যে নির্বাচনে কোনো প্রকার জালিয়াতি হয়েছে, কারচুপি হয়েছে, অনিয়ম হয়েছে, দখলবাজি হয়েছে। এ ধরনের কোনো বক্তব্য এমনকি আমাদের যারা কঠোর সমালোচক যেসব পত্রপত্রিকা তারাও বলেছে যে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অথচ বিএনপি বলছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এই সরকার এই নির্বাচন কমিশন যতদিন থাকবে ততদিন কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আসলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে তখন যখন বিএনপিকে যে তার গ্যারান্টি দেয়া হবে।'

করোনাকালে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক কম উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'পৃথিবীর অন্য কোনো সরকার বা রাষ্ট্র যাওয়ার জন করতে পারেনি তার শেখ হাসিনা করেছে।' তিনি বলেন, 'শীতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ ইউরোপের দেশে দেশে দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত হানছে। প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত আমাদের নিয়মিতভাবে মাক্স পরিধান এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে।'

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাসিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেহের আফরোজ চুমকী, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, ঢাকা-১৮ আসনের নবনির্বাচিত এমপি হাবীব হাসান উপস্থিত ছিলেন।