ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩২


ছাড় দিতে রাজি তারেক


২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:৫৭

দেশি-বিদেশি চাপ এবং একটি গ্রহনযোগ্য আন্দোলনের ব্যাপারে তারেক জিয়ার উপস্থিতি নিয়ে নানা আপত্তির মুখে পড়েছে তারেক জিয়া। তাই অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি হয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দলটির গুলশান কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঐক্যের বৃহত্তর স্বার্থে তারেক জিয়া সাময়িকভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব ছাড়তে রাজি আছেন। তিনি জামাতকে এই যে ঐক্য হচ্ছে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করতে বলেন।’

তবে এই জাতীয় ঐক্যে যে বিএনপি যাবে, তা ২০ দলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। ২০ দল বিলুপ্ত হওয়ারও সম্ভাবনা নেই এমনটা নিশ্চিত করেন ফখরুল।

বিএনপির এক সূত্র বলছে, জামাতের ব্যাপারে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলের আপত্তি। তার চেয়েও বেশি আপত্তি হলো তারেক জিয়ার নেতৃত্বের ব্যাপারে। বিশেষ করে যে জাতীয় ঐক্যে হচ্ছে সে ঐক্যের অন্যতম অঙ্গীকার হলো সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গঠন, যদি তারা ক্ষমতায় আসে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী মামলায় দন্ডিত হয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন। তার দেশে আসার সম্ভাবনা নেই। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল বিএনপির স্পষ্ট মনোভাব জানতে চেয়েছিল। এ নিয়ে তারেকের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের অনেক কথোপকথন হয়। একসময়ে তারেক জিয়া সম্মত হন।

তিনি পেছন থেকে দলটিকে নেতৃ্ত্ব দিবেন। দলের সবকিছু দেখভাল করবেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি দলের নেতৃত্বে থাকবেন না। দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্য থেকে একজনকে নেতৃত্ব দেয়া হবে। তবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী নন। এমন একজনকে তারেক নেতৃত্ব (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) দিতে চান যিনি তার আজ্ঞাবহ হবেন, তার সমস্ত কথা শুনবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরি ইতিমধ্যেই লন্ডনে পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে বৈঠক করেই তারেক চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির একটি সূত্র।

তবে সংশ্লিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তারেক জিয়ার সবচেয়ে পছন্দের ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। কারণ ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার তারেক জিয়ার কথার বাইরে যাবেন না। এমন প্রমাণ তিনি আগেও দিয়েছেন। বিশেষ করে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি থেকে সরানোর পর যে রাজনৈতিক টানাপোড়ন হয়, সে সময় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে জমির উদ্দিন সরকার ছিলেন। বিএনপি মনে করে, ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে রাষ্ট্রপতি করা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। তার বদলে জমির উদ্দিন সরকারের মতো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রপতি হতেন, তাহলে বিএনপির এমন ওয়ান ইলেভেনের মতো দু:সময়ের মুখোমুখি হতে হতো না। সেই বিবেচনা থেকেই জমির উদ্দিন সরকারকে তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে সামনে রাখতে চায়।

যেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হোক না কেন নির্বাচনের মনোনয়ন ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদিতে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেপথ্যে তারেক জিয়ার মতেই হবে। তারেক জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়বে যাতে ঐক্য প্রক্রিয়াটা ত্বরান্বিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিএনপির গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হয়। ভারত বিএনপির কাছে যে তিনটি শর্ত দিয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো তারেক জিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তাহলেই অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনে যেন বিএনপি অংশগ্রহন করতে পারে, সে ব্যাপারে তারা সরকারকে অনুরোধ করবে। সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করবে। অবশেষে বিএনপি সকল কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্তে যাচ্ছে।

তারেকের পদত্যাগের ব্যাপারে গতকালের বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছে। আগামী ২৯ তারিখের পরে যে কোন দিন এ ব্যাপারে বিএনপির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।

এমএ