মনোনয়ন নিয়ে শতভাগ আশাবাদী: বাহাউদ্দিন নাছিম

প্রগতির ঝাণ্ডা যখন সারা পৃথিবীতে উড়েছে তখন সমাজতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এগিয়ে এসেছে। আবার এখন মুক্ত বাজার অর্থনীতির পৃথিবীতে আওয়ামী লীগ সেই নীতিকে নিয়েই এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম.বাহাউদ্দিন নাছিম।
সম্প্রতি সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হয় নতুন সময়ের সাথে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন নতুন সময়ের প্রতিবেদক শেখ হারুন অর রশিদ।
নতুন সময়ঃ এ বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ কি শুরু হয়েছে ?
আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ শুরু হয়েছে। গত মিটিংয়ে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। আরো আগে থেকে আমাদের কিছু কিছু কাজ শুরু হয়েছে। এগুলো আলোচনা পর্যালোচনা করা, সংশোধন করা, গবেষক-বিশ্লেষকদের কাছ থেকে মতামত নেয়া, সব মিলিয়ে একটু সময় লাগবে। তবে নির্বাচনের আগে যথাসময়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। তফসিল, নির্বাচনের সাথে সমন্বয় থাকবে।
নতুন সময়ঃ একাদশ নির্বাচনে দেশের তরুন বা নতুন ভোটাদের সমর্থন নিতে আওয়ামী লীগ বেশ তৎপর। এই ভোটারদের কাছে টানতে কি কি থাকছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে?
আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: ইতিমধ্যে আমরা রাজনৈতিক ভাবে পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, তরুন প্রজম্মের কর্মসংস্থানের বাংলাদেশ, তরুনদের মেধাকে দেশের উন্নয়নের মূল ধারার সাথে সম্পৃক্ত করা এগুলো আওয়ামী লীগ আরো দশ বছর আগে থেকে শুরু করেছে। নির্বাচনী ইশতেহারে এগুলো নতুন করে আসার পাশাপাশি আরো এ্যাড করা হবে।
আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে তরুণরাই হলো দেশের মূল শক্তি। যে দেশে তরুন ভোটারের সংখ্যাধিক্য থাকে, সে দেশে উন্নয়ন অগ্রগতি সব সময় বেশি হয়। এটা একটা জরিপের ফলাফল। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে ভালো সময় চলছে। সুতরাং এই সময়ে তরুনদের সাথে না থাকলে তরুনরা আমাদের সঙ্গে থাকবে না। তরুণরা আওয়ামী লীগের সাথে না থাকলে নির্বাচনের ট্রেন মিস করবো। আমরা ট্রেন মিস করা দল না।
নতুন সময়ঃ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রতাশীরা বলেছেন তারা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন এবং একই আসন থেকে একাধিক ব্যক্তি দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন বলে প্রচার করছেন। আসলেই কি মনোনয়ন ঠিক করা হয়েছে?
আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: এই ধরণের কথার কোন ভিত্তি নেই। এটা এক ধরণের প্রচার। এটাও নির্বাচনী প্রচারণার এক ধরণের অংশ। তবে বিশ্লেষণ করা, প্রার্থী যাচাই বাছাই করা, জনমত জরিপ এগুলো চলছে। এগুলো তিন মাস পর পর হয়। এখন শেষ বারের মত চলছে। এগুলো পার্লামেন্টারি বোর্ড চুড়ান্ত করবে। মনোনয়ন ঘোষনার আগে কোন কিছুই চুড়ান্ত বলা যাবে না।
নতুন সময়ঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীকে মাঠে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। ফলে একই আসনের নিজ দলের মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরণের স্নায়ু যুদ্ধ চলছে। এটা অনেক জায়গায় দলীয় কোন্দলে রূপ নিয়ে জটিল অবস্থার সৃষ্টি করছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগ কিভাবে দেখছে?
আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: এটিকে আমরা দলীয় কোন্দল হিসেবে দেখি না। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন নিতে প্রতিযোগিতা মাত্র। উপমহাদেশের বড় রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে তরুণ, নবীন প্রবীন সব বয়সের মানুষেরাই এই দলের সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমান বাংলাদেশে ৩০ বছরের তরুণদের আধিক্য সব চাইতে বেশি। বিশ্বে এটা বলা হয়ে থাকে যে দেশে তরুণ সমাজের সংখ্যাধিক্য থাকে সেই দেশ উন্নয়ন অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী হয়। এবং সেই অবস্থা বাংলাদেশে বিরাজমান। সেই জায়গা থেকে তরুণরা যেন আমাদের দলের দিকে ঝুঁকে এটা আমরা চাই, আমাদের দল সেই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের সাথে কাজ করছে। আমরা ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়াও পেয়েছি। তরুণদের আমাদের আওয়ামী লীগের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কাজ করা এবং অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে কাজ করার আগ্রহ বেশি। সেই অংশকে সম্পৃক্ত করেই আমরা আগামী নির্বাচনের বৈতরনী পার হওয়ার চেষ্টা করছি। সেই জায়গা থেকে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব যারা করবেন তারা একটা গুরুত্ব পাবেন।
নতুন সময়ঃ মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে?
আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: তৃণমূল আওয়ামী লীগে যাদের সম্পক্ততা আছে, জনগণের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা আছে, দলের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা আছে, মানুষের জনপ্রিয়তার বিচার যাচাইয়ে যারা অগ্রগামী থাকবে, সেই সব কিছুকে নিয়ে সততা, নিষ্ঠা, কমিটমেন্ট, আস্থা সব মিলিয়েই কিন্তু মনোনয়ন। এগুলোকে কোন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমি মনে করি না। কারণ অতীতেও একটি আসন থেকে ৫ জন, ১০জন, ১২ জন প্রার্থী হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করে একজনকে দেয়া হয়। সেইভাবে তো ইলেকশন করে আসছি। এতে তো অতীতে কখনো সংকট হয়নি আওয়ামী লীগে। এটাকে প্রতিযোগিতা হিসেবেই আমরা দেখি এবং সেভাবে আমরা নেই। প্রতিযোগিতামুলক কর্মকাণ্ড না থাকলে দল ভালোভাবে বিকশিত হয় না। মুসলিম লীগও একটি পুরাতন রাজনৈতিক দল। তাদের আদর্শের সাথে ও বাস্তবতার সাথে কোন মিল না থাকার কারণে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার কারণে তারা হারিয়ে গেছে। প্রগতির ঝাণ্ডা যখন সারা পৃথিবীতে উড়েছে তখন সমাজতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এগিয়ে এসেছে। আবার এখন মুক্ত বাজার অর্থনীতির পুথিবীতে আওয়ামী লীগ সেই নীতিকে নিয়েই এগোচ্ছে।
নতুন সময়: জাতীয় নির্বচান পরিচালনা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের ৮টি বিভাগীয় সাংগঠনিক কিমিটি করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর এসেছে। কামিটি করার অগ্রগতি কতদূর এগিয়েছে?
আ.ফ.ম.বাহাউদ্দিন নাছিম: বিভাগীয় সংগঠনিক কোন কমিটি করা হবে না। এটা আমাদের সংগঠনের গঠনতন্ত্রের কোন জায়গায় নেই। সেই আলোকে এইভাবে কোন কমিটি করা হবে না। এটা আলোচনা করে বাদ দেয়া হয়েছে।
নতুন সময়: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আসতে কেমন টার্গেটা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ?
আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: নির্বাচনের মূল টার্গেট আমাদরে জনগণ। সেক্ষেত্রে তরুণ সমাজের উপর প্রধান্য থাকবে। নতুন ভোটার, নতুন সদস্য।
নতুন সময়: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীকদল নিয়ে আপনারা কি ভাবছেন এবং মহাজোটের পরিধি বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে কিনা?
আ.ফ.ম.বাহাউদ্দিন নাছিম: শরীকদলগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে। আমাদের সাথে যারা নির্বাচনী জোটে রয়েছে সবাইকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। আমাদের নির্বাচনী জোট হচ্ছে মহাজোট। এই মহাজোটের পরিধি আরো বাড়তে পারে।
নতুন সময়ঃ জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় একটি শক্তি হিসাবে জাতীয় ঐক্য গঠন করা হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির সমর্থনকে কিভাবে দেখছেন আপনারা ?
আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: বিএনপি জাতীয় ঐক্য নাকি সমর্থন করে। তাদের সমর্থন করার ভিত্তিটা কি? জনমত? সেটা তো ভোটের ভিত্তিতে হবে। নির্বাচন ছাড়া তো আর কোন পথ নেই। আমাদের নেত্রী বলেছেন উত্তর পাড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। তারা ওখান থেকে এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না।
নতুন সময়: আগামী একাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীন জনপদ, সামাজিক, অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতি সাধনে যথা সাধ্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার এলাকায় সব কাজ হয়েছে সেটি বলবো না, বাদ পড়ার সংখ্যা খুবই কম। এগুলো সম্পন্ন হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। আমার এলাকায় ১২৫ টির উপরে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর ৬০-৭০ শতাংশ স্কুলের নতুন ভবন করতে সক্ষম হয়েছি। বাকিগুলোও আগামী ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। আমার এলাকায় বিদ্যুতে বিপ্লব ঘটেছে। গত চল্লিশ বছরে যে কাজ হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারীর পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত তার চেয়ে বেশি কাজ হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে আমার এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়িত হবে বলে আশাবাদি। আমার নির্বাচনী এলাকায় নিজেদের চাহিদা মোটানোর পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয়। মাদারীপুর-৩ আসনে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিকটন খাদ্য সারপ্লাস হচ্ছে। সরকারী উদ্যোগের কারণে এটা বাড়ছে। আর কৃষিবিদ হিসেবে আমার এলাকার মানুষ কৃষিতে একটু বেশি সুযোগ পায়। এছাড়া খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির ও অনান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে সর্বোচ্চ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মনোনয়ন নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদি। দৃঢ় মনোবল ও আস্থা নিয়েই এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। অনেকে মিটিং মিছিল করছে আর আমি আমার এলাকায় এখন কেন্দ্র কমিটি করছি।
সাবেক ছাত্রনেতা, বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিমের জন্ম ১৯৬১ সালের ১১ নভেম্বর। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের মাধ্যমে তার রাজনীতিতে হাতে খড়ি। তিনি ১৯৮১ সালে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হন। পরবর্তীতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালন করেছন মাদারীপুর– ৩ আসনের এই সংসদ সদস্য।
আইএমটি