ঢাকা মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২


ঢাকা সিটি নির্বাচন: প্রার্থীদের জয়ের জন্য যে কৌশল নিচ্ছে আ’লীগ


৫ জানুয়ারী ২০২০ ০৪:২২

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে সিটি কপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার নিজেদের প্রার্থীদের জয়ের জন্য কৌশল নিচ্ছে। মূলত তিনটি ইস্যুর ওপর ভর করে জয়ের অঙ্ক কষছে শাসক দল। প্রথমত, সরকারের উন্নয়ন কাজগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট টানা। দ্বিতীয়ত, দলের ঐক্যকে কাজে লাগানো এবং তৃতীয়ত, প্রার্থীদের ক্লিন ইমেজ ও সর্বমহলের গ্রহণযোগ্যতাকে পুঁজি করে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা।

এ নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু বড় বড় সভা-সমাবেশ না করে ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। এজন্য ঢাকার দুই অংশের জন্য আমির হোসেন আমু (দক্ষিণ) ও তোফায়েল আহমেদকে (উত্তর) সমন্বয়ক করে দুটি সমন্বয় কমিটির অনুমোদন দিয়ে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ করে পেশাজীবী ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে থানা ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করে দ্রুত ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব নির্দেশনা দেন। সমন্বয় কমিটিতে সদস্য কারা থাকছেন, তা আজ গণভবনে আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় চূড়ান্ত করা হবে। দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ৩০ জানুয়ারি দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি। পরের দিন ১০ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। ওই দিন থেকেই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু করতে পারবেন।

দলীয় সূত্র জানায়, মূলত সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা, দলীয় ঐক্য ও প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা এ তিন ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে জয়ের ছক কষা হচ্ছে। এজন্য দুই ও তিন নম্বর ইস্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার জন্য দক্ষিণে প্রার্থী বদলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ, দলের একটি বড় অংশ দক্ষিণের প্রার্থী পরিবর্তনের পক্ষে ছিল। তৃণমূলের ওই ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে ও নেতাকর্মীদের ঐক্য ধরে রাখার জন্য দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়।

মেয়রের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে একটা বড় অংশের সঙ্গে সাঈদ খোকনের দূরত্ব তৈরি হয়। সাঈদ খোকনকে মনোনয়ন দিলে তাদের মাঠে নামানো কঠিন হবে এমন খবর হাইকমান্ডের কাছে আগে থেকেই ছিল। আর সাঈদ খোকন প্রার্থী না থাকলে ডেঙ্গু ইস্যুকে খুব বেশি কাজে লাগাতে পারবেন না বিএনপি প্রার্থী এটাও একটা বড় কারণ। এছাড়া গেলবারের মতো এবারের ভোট মূলত নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে হবে এমনটা বিবেচনায় নিয়েই প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে বিএনপি দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে।

বাবা সাদের হোসেন খোকার জনপ্রিয়তা ও রাজনীতিতে নবীন ইশরাকের ইমেজ ক্লিন থাকার কারণে তার বিপরীতে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ওপর আস্থা রাখার অন্যতম কারণ হচ্ছে তার ব্যক্তি ইমেজ। রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজ ও সর্বমহলে, বিশেষ করে ঢাকা ১০ আসনে উন্নয়ন ও জনবান্ধব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাপস নিজেকে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করেন অনেকেই। বিএনপি যেন প্রার্থী ইশরাক হোসেনের ক্লিন ইমেজ বা বাবা সাদেক হোসেন খোকার আবেগকে খুব বেশি কাজে লাগাতে না পারে, সেজন্য সাঈদ খোকনের পরিবর্তে ফজলে নূর তাপসকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়। অন্যদিকে উত্তরে গেল এক বছর বড় ধরনের বিতর্ক ছাড়া সবাইকে নিয়ে কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এজন্য দলের মধ্যে তেমন কোনো বিরোধিতায় পড়তে হয়নি তাকে। আর তাবিথ আউয়াল এর আগেও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাই তাকে নিয়ে তেমন একটা দুশ্চিন্তা নেই।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। শুক্রবার আওয়ামী লীগের যৌথসভায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন আমাদের নেত্রী। তিনি দুটি সমন্বয় কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। একই সঙ্গে জয়ের লক্ষ্যে কাজ করতে কিছু দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। শিগগিরই নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ শুরু করব।’

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার বলেন, ‘প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক কিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। উত্তরে তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও দক্ষিণে আমাদের বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়েছে। বিশেষ করে প্রার্থীর ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু ইস্যুতে সাঈদ খোকনের ইমেজ অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। এ অল্প সময়ের মধ্যে তা কাটিয়ে ওঠাও কঠিন। আর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিও ফ্যাক্টর হয়েছে। কারণ, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ সাঈদ খোকনের বিরোধিতা করে আসছে। তাকে মনোনয়ন দিলে তাদের মাঠে নামানো কঠিন হতো।’

তিনি বলেন, ‘তার ওপর সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন রাজনীতি নবীন হলেও তার বাবার ইমেজ ও তার ক্লিন ইমেজ ভোটের রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হতে পারে। এজন্য তার বিপরীতে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী নির্ধারণ করাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তার সবচেয়ে ভালো অপশনটাকেই কাজে লাগিয়েছে। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস শুধু ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ নয়, সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যও।’

নতুনসময়/আইকে