ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২


বিনা ভোটের লড়াই চায় না আওয়ামী লীগ


২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৫:৫৮

ছবি ফাইল ফটো

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর মত আর কোন নির্বাচন চায় না আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর পাশপাশি জাতীয় পার্টিসহ আরো কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক জোটকে ভোটের মাঠে আনতে কাজ করছে ক্ষমতাসীনরা। ওই নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা না এলেও বিনা ভোটে ক্ষমতায় যাওয়ার বদনাম এড়াতে ৩০০ আসনেই যেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকে—এমন প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে লড়বে বলে এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এছাড়া ১৪ দলের শরিক দলগুলো ওই নির্বাচনে এককভাবে লড়তে পারে। বিষয়টি আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের আসন সমঝোতা হবে। ‘ডামি’ প্রার্থী দিয়ে জয়ী করে আনা হবে শরিক দলগুলোর নেতাদের। অনুরূপভাবে বাম সংগঠন ও ইসলামী দলগুলোর ছোট ছোট জোটকেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আনার চেষ্টা রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদনাম এড়াতে ইতিমধ্যেই সারা দেশে সভা-সমাবেশসহ নানা প্রচারণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী আমেজ তৈরিতে মাঠে নেমে পড়েছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি-জেপি। নির্বাচন পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সোমবার সকালে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই এ বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। দলটির একাধিক সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট সিলেট সফরের মধ্য দিয়ে ১৪ দলের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এ সফরে অংশ নেন। এরপর চলতি মাসে রেলপথে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালান দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।


শনিবার সড়কপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় গেছেন আওয়ামী লীগের র্শীষ নেতারা। বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা ও দলীয় কোন্দল নিরসনের চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। মাঠের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এ ধরনের নানা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

১৪ দলের শরিক দলগুলোও সারা দেশে ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। গত তিন দিনে জাসদ উত্তরবঙ্গের রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করে। জনসভাগুলো থেকে সংসদ নির্বাচনে জাসদের স্থানীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় জনসভা শেষে দেশের অন্যান্য বিভাগেও এ নির্বাচনী প্রচারণার কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে জাসদ।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, বিএনপি নির্বাচনে না এলেও এবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হবে না। গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদে পড়ে সরকারের অনেক বদনাম হয়েছে। জাতীয় পার্টি, ১৪ দলের একাধিক শরিক ও বাম দলগুলোর অংশগ্রহণে নির্বাচন মোটামুটি উৎসবের আমেজেই অনুষ্ঠিত হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা রাজপথে আছি, থাকব। আজ (শনিবার) ফেনীতে জনসভা করলাম। এতে লক্ষাধিক জনতা উপস্থিত ছিল। এ উপস্থিতি প্রমাণ করে জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। এই জনগণই বিএনপিকে মোকাবেলা করবে।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সাতক্ষীরায় আমাদের কর্মসূচি পালন হয়েছে। এরপর আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক নাটোর, বগুড়া, গাইবান্ধায় যাবেন। নির্বাচনের আগে নানা মেরুকরণ হচ্ছে। উত্তর দক্ষিণ মিলে গেছে। কামাল হোসেনের ঐক্য প্রক্রিয়ায় এক-এগারোর মঈনুল হোসেন ও বিএনপি মিলে গেছে। আমরা চাই এরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। আমরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন চাই না।’

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘অক্টোবরের মধ্যেই সারা দেশে প্রথম পর্যায়ে আমাদের নির্বাচনী প্রচারণার জনসভাগুলো শেষ হবে। আমরা বিভিন্ন এলাকায় জনসভা করে আমাদের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। আমরা মনে করি এবারে বিএনপি নির্বাচনে আসবে। তবে না এলেও এবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হবে না।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ইতিমধ্যেই সাতক্ষীরায় সমাবেশ করে এসেছেন। দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন কিছুদিন আগে পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় ঢাকার বাইরে খুব বেশি কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারছেন না। এর পরও শিগগিরই বরিশাল ও যশোরে ওয়ার্কার্স পার্টির সমাবেশে অংশ নেবেন মেনন।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার এ মিটিং। জামায়াতের বিরোধিতার কথা বলে জড়ো হলেও এর মূল নিয়ামক শক্তি জামায়াত। আমরা জনগণকে নিয়ে এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডকে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত আছি।’

তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী ইতিমধ্যেই সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে এ সপ্তাহে ঢাকায় কয়েকটি বৈঠক করবে দলটি।
আরকেএইচ