ঢাকা শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যেসব আশ্বাসে আন্দোলনে না যাওয়ার ঘোষণা শাজাহান খানের


২৪ নভেম্বর ২০১৯ ২২:৪৭

আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আন্দোলনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সংসদ সদস্য শাজাহান খান।

২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নতুন সড়ক পরিবহন আইনের ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেসসহ কয়েকটি বিষয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করবে পুলিশ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন আশ্বাসের পরই আন্দোলনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন শাজাহান খান।

শনিবার রাতে রাজধানীর ধানমণ্ডির নিজ বাসভবনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও শাহজাহান খান পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তারা কিছু কিছু আইন পুনর্বিবেচনার জন্য আমাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন। সেসব দাবি আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। দাবি অনুযায়ী নতুন আইনের সেসব ধারা সংশোধন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এসব বিষয় নিয়ে আমরা শাহজাহান খানের নেতৃত্বে পরিবহন নেতাদের নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেসসহ কয়েকটি বিষয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করবে পুলিশ।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়ে যে যেভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন, তারা সেভাবেই চালাবেন। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে তারা নতুন করে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাইসেন্স হালনাগাদ করার সুযোগ পাবেন। বিআরটিএ এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। তবে কারও কাছে ভুয়া লাইসেন্স পেলে সঙ্গে সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হবে।

গাড়ির ফিটনেসবিষয়ক আইন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করেননি তারা শুধু সরকারি ফি জমা দিয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট পেতে জরিমানা মওকুফ চেয়েছেন। আমরা তাদের যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করতে বলেছি, তাদের জরিমানা মাফের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত ডিজাইনের বাইরে বাড়তি ডিজাইন করা কনটেইনার ট্রাকের বিষয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি করা হবে।

এর পর আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পরিবহন মালিকরা সেই কমিটির সঙ্গে বসে বিষয়টি সুরাহা করবেন বলে জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন আইন প্রয়োগ নিয়ে আর কোনো বাধাই রইল না। ইতোমধ্যে তা চালু হয়ে গেছে। তবে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেসের মতো কয়েকটি ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া বাকি ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বিআরটিএ লাইসেন্স বিষয়ে সব সমাধান করতে পারবে কিনা, এ প্রশ্নে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, হ্যাঁ, সেবার মান বাড়াতে হাইওয়ে পুলিশ এবং বিআরটিএর লোকবল বাড়ানোর সুপারিশের কথা আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন তা হলে সেভাবে ব্যবস্থা নেবেন।

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, পরিবহন নেতা ও শ্রমিকরা কখনই নতুন আইনের বিরোধিতা করেননি। নতুন আইনে কিছু বিষয়ে অসংগিত রয়েছে দাবি করে সেগুলোর সংশোধনের জন্য আন্দোলনে গিয়েছিল শ্রমিকরা। বৈঠকে সেসব বিষয়ই স্পষ্ট করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।

অসংগতির বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, আইনে উল্লিখিত কারাদণ্ডের বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে যে পরিমাণ জরিমানা ধরা হয়েছে তা চালকরা কখনও দিতে পারবে না। তাই আগের আইনে যে জরিমানা ছিল, সেই টাকার অনুপাতে বর্তমানে যে টাকা দাঁড়ায় সে পরিমাণ জরিমানা নির্ধারণ করতে দাবি জানিয়েছি আমরা।

নতুন আইনের বিরোধিতা করে শ্রমিকদের দেশজুড়ে ধর্মঘটের বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। ধর্মঘট-আন্দোলন আমাদের পেশা নয়। বিপদ হলে আমরা কথা বলি, না শুনলে আন্দোলনে যেতে হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছেন, আমরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তার পর যদি আমাদের দাবি মানা না হয়, তখন আমরা কর্মসূচি দেব।

পরিবহন শ্রমিকদের দাবি ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে করেন শাহজাহান খান।

নতুনসময়/আইকে