ঢাকা শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


জিএম কাদরের দল পরিচালনা নিয়ে সন্তুষ্ট নন রওশনপন্থীরা


২৪ জুলাই ২০১৯ ১৯:১৩

ছবি সংগৃহিত

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদরের দল পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদপন্থীরা। এ কারণে তাকে দলের চেয়ারম্যান হিসেব মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। দলের মধ্যে কোনও বিভাজন সৃষ্টি না করে সবার মতামত নিয়ে দল পরিচালনা করলে তাকে মেনে নিতে কোনও আপত্তি নেই রওশনপন্থীদের।

বিবৃতি দেওয়া রওশনপন্থী একাধিক নেতা বলেন, ‘জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মানতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর ১০ দিনও পার হয়নি। এখনও সবাই শোকের মধ্যে আছেন। এরই মধ্যে তিনি নিজের অনুগতদের নিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার মধ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে একটা খারাপ বার্তা চলে গেছে যে- এরশাদের শোকের চাইতে পার্টিতে পদ-পদবি বড়। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং না ডেকে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমাদের অপমান করা হয়েছে। বোঝানো হয়েছে, পার্টিতে আমাদের মতামতের দরকার নেই। এ ক্ষোভের জায়গা থেকে তাকে চেয়ারম্যান মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছি। এরশাদের মৃত্যুর ৪০ দিন পর কুলখানি শেষে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং ডেকে সবার মতামত নিলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কারণ আমরা দলের মধ্যে কোনও বিভক্তি কিংবা বিভাজন চাই না।’

প্রসঙ্গত, ২২ জুলাই রাতে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়- যথাযথ ফোরামে আলোচনা না করেই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দলের সব নেতাকর্মীকে গঠনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন দলটির ১০ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ ১২ জন এমপি। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘দলে তো এতোদিন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন। তার উপস্থিতিতে ১০ থেকে ১২টি কাউন্সিল হয়েছে। কাউন্সিলে আমরা তাকে সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে দিতাম। তিনি ক্ষমতাবলে জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে গেছেন। আমরা এটা মেনে নিয়েছি। এখন চেয়ারম্যান হতে হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হবেন এটাই নিয়ম। আমরা যে তাকে মানি না বিষয়টি এমন নয়। তিনি চেয়ারম্যান হতে চাইলে দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু সেটার ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন বলে আমরা বিবৃতি দিয়েছি।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘জিএম কাদেরের উচিত এটা করার আগে কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং ডাকা। সেখানে আমরা সিনিয়ররা আলাপ-আলোচনা করে পদটা তাকে দিয়ে দিতাম। তিনি কাউকে না জানিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়ে দিলেন। এটা কি ঠিক হলো? এখানেই আমাদের ক্ষোভ। আমরা তো তার বিরুদ্ধে নই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘জিএম কাদের তো আর রাজনীতিবিদ নন, আমলা মানুষ, সরল বিশ্বাসের মানুষ। তাকে কেউ বুদ্ধি দিয়ে এই কাজটি করিয়েছে। তিনি হয়তো বুঝে করেন নাই। এখন রওশন এরশাদের মতামত নিয়ে দলের সিনিয়রদের নিয়ে মিটিং করে এটা পাস করিয়ে নিলেই সমাধান হয়ে যাবে। আমরা তো আর দলের চেয়ারম্যান হবো না। এরশাদের পার্টির চেয়ারম্যান হতে হলে তারই রক্তের লোক লাগবে।’ রাজনীতি করতে হলে প্রতিপক্ষতে ম্যানেজ করার ক্ষমতা লাগবে উল্লেখ করে দলটির এই নেতা বলেন, ‘প্রতিপক্ষকে ম্যানেজ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে জিএম কাদেরকে। তাহলে তিনি রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবেন।’