গ্রাহকের অর্থ লোপাট: সম্পদ বাজেয়াপ্ত হতে পারে মশিউর সিকিউরিটিজের মালিকের

শের আলী, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। মশিউর সিকিউরিটিজে বিও হিসাব খোলেন প্রায় ১৫ বছর আগে। দুই দফায় বিনিয়োগ করেন ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু তাকে না জানিয়েই তার বিও হিসাবে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেয় মশিউর সিকিউরিটিজ কর্তৃপক্ষ। সেই টাকা ফিরে পেতে দেড় বছর ধরে ঘুরছেন তিনি।
শের আলী বলছিলেন, ‘চাকরি করি, মাস শেষে একটা বেতন পাই সেটা দিয়ে আমার সংসার চলে। আর বাড়তি যদি এর সাথে কিছু করতে পারি, সন্তানদের ভবিষ্যৎ আছে সেই চিন্তা থেকে বিনিয়োগ করা। সেটা করতে গিয়ে আমি সর্বস্বই হারিয়েছি।’
একই ধরনের প্রতারণা শিকার হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা শাহজাহান আলী। চাকরি জীবনে জমানো টাকার পাশাপাশি পেনশনের টাকাও বিনিয়োগ করেছিলেন মশিউর সিকিউরিটেজর মাধ্যমে। সব মিলিয়ে তার বিনিয়োগ ছিল ৬০ লাখের উপরে। পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছে মশিউর সিকিউরিটিজের মালিকপক্ষ।
প্রকৌশলী শাহজাহান আলী বলেন, আমি অবসরে গিয়েছি, তখন কিছু পেনশনের টাকা ছিল, সেগুলো বিনিয়োগ করেছিলাম। ওরা যে বিক্রি করে দিলো, ধরেন ৯০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিছে, ১০০ টাকার শেয়ারের মধ্যে যদি ৯০ টাকা বেঁচে নিয়ে যায় তাহলে আমার আছে আর ১০ টাকা, তাহলে কেমনে কী?
শের আলী ও শাহজাহানের মতো প্রতারণার শিকার হয়েছে মশিউর সিকিউরিটিজের আরও শত শত বিনিয়োগকারী। অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদের অনেকে। হারানো টাকা ফিরে পেতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থায় ঘুরছেন তারা।
মশিউর সিকিউরিটিজ বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত হিসাব থেকে সাড়ে ৬৮ কোটি টাকা এবং বিও হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রি ৯২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বিকল্প সফটওয়্যার তৈরি করে গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করে মশিউর সিকিউরিটিজ। যা জানাজানি হয় গত বছরের সেপ্টম্বরে। এরপর থেকেই বন্ধ তাদের প্রধান কার্যালয়সহ প্রতিটি শাখা।
ব্রোকারেজ হাউস বন্ধ থাকায় মশিউর সিকিউরিটেজর কারও সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ফোনেও সাড়া মেলেনি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশিউর সিকিউরিটিজের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরো পুঁজিবাজার। আস্থা নষ্ট হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থায় এখন যে ক্ষতি হয়ে গেলো সে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য চিন্তাভাবনা করতে হবে।বাংলাদেশ ভ্রমণ
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, বিনিয়োগকারীদের পাওনা পরিশোধে সবধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মালিকপক্ষের সম্পদ বাজেয়াপ্তের আইনি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিএসইসি মুখপাত্র আবুল কালাম বললেন, পরিপূর্ণভাবে যেন তাদের দাবি বা পাওনা পরিশোধ করা যায়, সেই বিষয়ে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিগুলো রয়েছে বিনিয়োগকারীর টাকা আদায় করার জন্য।
পুঁজিবাজারে প্রতারণা বন্ধে সব ব্রোকারেজ সমজাতীয় সফটওয়ার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে বিএসইসি। এর ফলে পোর্টফোলিওতে পরিবর্তনের সুযোগ বন্ধ হবে বলেও জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।