ঢাকা সোমবার, ১৮ই আগস্ট ২০২৫, ৪ঠা ভাদ্র ১৪৩২


কোনো আদালতে প্রশ্ন নয়


১৭ আগস্ট ২০২৫ ০৭:৫৯

সংগৃহীত

বহু কাঙ্ক্ষিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর সমন্বিত খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে। খসড়ার অঙ্গীকারে জুলাই সনদকে সর্বোচ্চ আইনি ভিত্তি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসাবে গণ্য হবে। ফলে এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যাসংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে। সনদের কপি শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। দলগুলোকে ২০ আগস্ট বুধবার বিকাল ৪টার মধ্যে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের আলোকে এটি চূড়ান্ত হবে। সনদের খসড়ায় তিনটি অংশ আছে। প্রথম অংশে সনদের পটভূমিতে ৫টি প্রস্তাবনা, দ্বিতীয় অংশে ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি সিদ্ধান্ত এবং তৃতীয় অংশে ৮টি অঙ্গীকার রয়েছে। আবার ঐকমত্য হওয়া ৮৪টির মধ্যে ১৩টি নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) রয়েছে। এর মধ্যে ৯টিতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। যার মধ্যে রয়েছে-প্রধানমন্ত্রী হলে দলীয় পদে থাকা যাবে না।

 

অঙ্গীকারনামা : সনদের সমন্বিত খসড়ায় অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কার্যত কোনো সংবিধান ছিল না। এরপরও ওই সময়ের সব কার্যক্রম মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সন্নিবেশিত করে আইনি ও সাংবিধানিক বৈধতা দেওয়া হয়। একইভাবে যেহেতু ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানোত্তর সময়ে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করে উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথগ্রহণ, অতঃপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব গ্রহণ এবং পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়াসংক্রান্ত কোনো আইনি কাঠামো না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর রূপরেখা ও অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ওই ধরনের কার‌্যাবলিকে বৈধতা দিয়ে পরবর্তী সংসদ গণ-অভ্যুত্থানে প্রদত্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সাংবিধানিক কনভেনশন এবং গণতন্ত্রকে সংহত করে;’ খসড়ায় আরও বলা হয়, ‘উল্লিখিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সাংবিধানিক কনভেনশন বজায় রেখে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ এই মর্মে অঙ্গীকার করছি-১) জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল হিসাবে জাতীয় সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করব। ২) রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। তাদের অভিপ্রায় সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দল সম্মিলিতভাবে জুলাই সনদ প্রণয়ন করেছি। তাই সনদের সব বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করব। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সেই ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে। ৩) সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যাসংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে। ৪) প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসাবে গণ্য হবে। ফলে এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। ৫) সনদে উল্লিখিত দেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করব। ৬) গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত; ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে। ৭) সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করছি, রাষ্ট্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। ৮) এই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।