ঢাকা মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


আরএমপি'র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ!


৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫০

ফাইল ফটো

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম (হেমায়েত) এর বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগরীর দুইজন ব্যবসায়ীকে নাশকতার মিথ্যা মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে । এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী রাজশাহী মহানগরীর ইটভাটার মালিক ঐ দুই ব্যবসায়ী আলমগীর কবীর এবং আনোয়ার হোসেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েতের বিরুদ্ধে পুলিশের আইজি, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েত নিজে এবং তার দেহরক্ষী ও গাড়ি চালক এর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে কল করে তাদের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এর অফিসে দেখা করতে বলেন। দেখা করার পর অতিরিক্ত কমিশনার হেমায়েত তাদের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের ছাত্রদের আন্দোলনে এবং বিএনপি ও জামায়াতকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতার অভিযোগ এনে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। অনাদায়ে নাশকতার মামলায় আসামি করা হবে এমনকি ক্রসফায়ারও দেওয়া হতে পারে বলেও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।

নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আলমগীর কবীর ও আনোয়ার হোসেন গত ২৫ জুলাই থেকে ৩০ শে জুলাই পর্যন্ত ৫ দিনে ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা পুলিশ কর্মকর্তা হেমায়েতকে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। ব্যবসায়ী আলমগীরের ভাষ্যমতে তিনি নিজে ১ লাখ ৫০হাজার টাকা সেই দিন ( যে দিন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েত এর অফিসে যান) দিয়েছেন এবং পরবর্তী ৩দিনে তিনি মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং তার মামা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন দিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। বাকি ১০ লাখ টাকা দেয়ার আগেই ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতন হওয়ার পর বাকি টাকা দেয়া থেকে তিনি রক্ষা পান। আলমগীর আরও বলেন, " ১লাখ ৫০ হাজার টাকা সরাসরি হেমায়েত স্যারের হাতে এবং বাকি টাকা তার ড্রাইভার ও বডিগার্ডের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।" অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েত এর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের শাস্তির দাবি করেন অপর ব্যবসায়ী ইট ভাটার মালিক আনোয়ার হোসেন। ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েতের পিএস তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েতুল ইসলামের অফিসে দেখা করতে বলেন। তিনি জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে দেখা করতে গেলে সেখানে তিনি আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অর্থ প্রদান সহ জুলাইয়ে চলমান ছাত্র আন্দোলনে অর্থ যোগান দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী আনোয়ার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েত কে জানান এই সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না তিনি কোনো রাজনৈতিক দলকে বা তাদের নেতাকর্মীদের বা কোনো আন্দোলনে অর্থ দিয়েছেন। এর পর তিনি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এর কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এর পিএস তার কাছে আসেন এবং বলেন , সবাই টাকা পয়সা দিচ্ছে এবং আপনাকেও দিতে হবে।" তিনি জানান বাধ্য হয়ে তিনি ঐদিন রাতে ২লাখ টাকা দেন এবং পরবর্তীতে তার ইটের ভাটায় গিয়ে তার ছেলের কাছ থেকে ৩লাখ টাকা নিয়ে এসেছে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েত। তিনি আরও বলেন যখন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এর পিএস তাকে চা খাওয়ার দাওয়াতের কথা বলে ডাকেন তখন তিনি মনে করেছিলেন সেটাকে নিছক চা খাওয়ার দাওয়াতই ভেবেছিলেন। তিনি ভাবতে পারেন নি এইভাবে চা খাওয়ার কথা বলে ডেকে তার কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবি করা হবে। তবে এই ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েতুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করে হলে তিনি ঘটনাটি মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, " আমি এই ধরনের কোনো কাজ করেছি তার সামান্যতম প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। এই অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও কাল্পনিক।" এদিকে উক্ত ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা পেলে বিষয়টি যথানিয়মে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি জানিয়েছেন, " এ সংক্রান্ত অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি যেটা পুলিশ হেডকোয়ার্টারে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ পেলে আমরা অনুসন্ধান করে রিপোর্ট দিব এবং সে ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।" 

উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী ঐ দুই ব্যবসায়ীর অভিযোগ সংক্রান্ত জবানবন্দির ভিডিও ফুটেজ ও অভিযুক্ত আরএমপি'র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েতুল ইসলামের বিরুদ্ধে পুলিশের উর্ধবতন মহলে করা লিখিত অভিযোগের কপি দৈনিক জবাবদিহি'র এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।