ঢাকা শনিবার, ৩রা মে ২০২৫, ২১শে বৈশাখ ১৪৩২


শেখ হাসিনাকে চারবার হত্যার চেষ্টা করে হুজি


১১ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:৫৯

ছবি সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে চারবার হত্যার চেষ্টা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি)। কিন্তু হুজির ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের সব পরিকল্পনাই নস্যাৎ হয়। এছাড়া বিভিন্ন গোষ্ঠী আরো বেশ কয়েকবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে। তবে প্রতিটি হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

দূর্বৃত্তদের ধারণা শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিতে পারলেই নিজেদের রাজত্ব কায়েম করা করতে পারবে। তাই বার বার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার চেষ্টায় মরিয়া এই ঘৃণ্য গোষ্ঠিরা।

সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে হুজি। এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের কিছু মন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসন। হুজির নেতারা ওই হামলার সফলতা নিয়ে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। সেভাবেই তারা ছক কষে। শেখ হাসিনার ওপর হামলাও চালায় তারা। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় রক্ষা পান বর্তমানর প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কানের শ্রবণশক্তি হারান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

এর আগে ২০০০ সালের ২০ জুলাই প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালায় এই উগ্রগোষ্ঠি। সে সময় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা মঞ্চের পাশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। সমাবেশের আগেই পুলিশ সেই বোমাটি উদ্ধার করে। ফলে হুজির সেই পরিকল্পনাও নস্যাৎ হয়।

হরকাতুল জিহাদের (হুজি) একাংশের নেতা মুফতি হান্নান ধরা পড়ার পর ২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁর জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০০০ সালের জুলাই মাসে হুজির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখার আগে দূর নিয়ন্ত্রিত বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয় ফরিদপুরে এক পীরের মাহফিলে। ২০০০ সালের ১৩ জুলাইয়ে ওই বোমা হামলার ঘটনায় একজন নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরো সাতজন। মাহফিলে হামলা সফল হওয়ার পর সেখানকার চেয়েও কয়েক গুণ শক্তিশালী বোমা পোঁতা হয় কোটালীপাড়ার ওই সমাবেশে।

হুজির সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর ২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানকে হামলার লক্ষ্য করে হুজি। তিন দিন আগে ২৭ মে সেতুর কাছাকাছি দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে ১৫ জঙ্গি ধরা পড়ে যাওয়ায় এই পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়।

জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান বলেন, ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সিলেট শহরের আলিয়া মাদরাসা মাঠে আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে বোমা হামলার পরিকল্পনা করা হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে যান শেখ হাসিনা। তবে মাঠের অদূরে ফাজিল চিশতি এলাকার একটি বাড়িতে বোমা হামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে দুই বোমাবাজ নিহত হয়। আহত অবস্থায় হুজির সদস্য মাসুদ আহমেদ শাকিল (ঢাকা) ও আবু ওবায়দা ওরফে হারুন (ফেনী) গ্রেপ্তার হয়। ২০০১ সালেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে শাকিল ঘটনার বিবরণ দেয়।

২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে মুফতি হান্নানের গুরু মাওলানা আবু সাইদ ওরফে আবু জাফরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের মাসের ৫ তারিখে মাওলানা সাইদ সিলেট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করেন। জবানবন্দিতে বলা হয়, ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে যাওয়ার কথা ছিল। পরে তাঁরা খবর পান, শেখ হাসিনা হজরত শাহ পরান (রহ.)-এর মাজারে যাবেন। দুই মাজারে ওত পেতে থাকার পর সন্ধ্যায় জানতে পারেন, শেখ হাসিনা সরাসরি জনসভাস্থলে চলে যাবেন। এরপর জঙ্গিরা জনসভাস্থলের অদূরে তাঁদের ভাড়া করা মেসে গিয়ে ওঠেন। ওই মেসেই রাত ৮টার দিকে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরিত হয়। নস্যাৎ হয়ে যায় তৃতীয় পরিকল্পনাও।

আগেও হত্যার চেষ্টা : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে গেছে বিভিন্ন গোষ্ঠী। তাঁর ওপর প্রথম আঘাত আসে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে। লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাবেশে গুলি চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে সাতজন নিহত এবং তিন শতাধিক লোক আহত হয়। পরের বছর ১১ আগস্ট চালানো হয় দ্বিতীয় হামলাটি। এই হামলা হয় ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে। রাত ১২টার দিকে ফ্রিডম পার্টির একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা করে। এ সময় শেখ হাসিনা বাসায় ছিলেন। হামলাকারীরা সাত-আট মিনিট ধরে বঙ্গবন্ধু ভবন লক্ষ্য করে গুলি চালায় ও একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। কিন্তু সেটি বিস্ফোরিত হয়নি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা এখনো ঢাকার একটি আদালতে বিচারাধীন।

১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গ্রিন রোডে সন্ত্রাসীরা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গুলি ও বোমাবর্ষণ করে। ওই দিন গ্রিন রোডে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ভোটের পরিস্থিতি দেখতে গেলে তাঁর ওপর এ হামলা হয়।

১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদীতে রেলগাড়িতে সফরে ছিলেন শেখ হাসিনা। নাটোর স্টেশনে তাঁর সমাবেশে যোগদানের কথা ছিল। ওই সমাবেশ পণ্ড করতে দুর্বৃত্তরা বোমা হামলা চালায়। ওই হামলার টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা।

১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর রাসেল স্কয়ারের কাছে সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। পরের বছর ১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর অকস্মাত্ একটি মাইক্রোবাস থেকে সভামঞ্চ লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। নিক্ষেপ করা হয় বোমা। ২০ জন নেতাকর্মী আহত হলেও প্রাণে রক্ষা পান শেখ হাসিনা। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১৯ বার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

আরকেএইচ