ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


হাইকোর্টকে কি হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন?


২৪ মে ২০১৯ ০০:৩১

৫২ খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও জব্দ করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিলো তা বাস্তবায়ন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। কেন তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করা হবে না তা জানতে চেয়ে আগামী ১৬ জুন সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। ৫২ পণ্য প্রত্যাহার ও জব্দ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক শুনানিতে এ আদেশ দেওয়া হয়।

শুনানির সময়ে আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, 'পণ্য জব্দ ও প্রত্যাহার করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। আপনারা একটি মসলার প্যাকেটও জব্দ করতে পারেননি। ভদ্রতার একটি সীমা আছে। ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করবেন না। আপনারা চিঠি দিয়েছেন, অনুরোধ করেছেন, কিন্তু পণ্য জব্দ বা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেননি। ইস্কাটনের অফিসের পাশে ১৭ জন (মোট জনবল) ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ মিলে একটি পণ্যও জব্দ করতে পারলেন না? আপনাদের অফিস রাখার দরকার কী? ভয় পাচ্ছেন? বড় বড় ব্যবসায়ী (পণ্য উৎপাদনকারী) কী করে ফেলেন বা কী করবেন। এমনটি হলে চাকরি করার দরকার কী?'

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত আরও বলেন, 'ঘরে গিয়ে রান্নাবান্নার কাজ শুরু করে দেন। নতুবা ব্যাংকে গিয়ে কেরানির চাকরি করতে বলেন। বসে বসে টাকা গুনবেন, টাকার হিসাব রাখবেন।'

আজ ধার্য তারিখে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ও ভোক্তা অধিকারের পক্ষে আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দাখিল করা প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

আদালত এও বলেছেন, 'হাইকোর্টকে কি হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন? আমরা এগুলো বুঝি। বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সোজা না বলে বাঁকাভাবে বলছেন।' নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী জানান, তিনি রাতে নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ক প্রতিবেদন পেয়েছেন। এই আইনজীবীকে আদালত বলেন, ‘আরেকটা অজুহাত দিলেন।’ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আদালত বলেছেন, 'আমরা আশা করব বছর জুড়ে প্রতিষ্ঠানটি এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।'

ভোক্তা অধিকারের আইনজীবী দেশের বিভিন্ন জেলায় মানহীন ওই সব পণ্য জব্দ ও প্রত্যাহার ও জরিমানা করার তথ্যাদি আদালতে তুলে ধরেন।

৩ ও ৪ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি নিম্নমানের ও ভেজাল পণ্য রয়েছে। এর আগে ২ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিএসটিআই। ৫২টি পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার বা জব্দ চেয়ে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটির (সিসিএস) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান জনস্বার্থে ৯ মে এ রিট দায়ের করেন।


নতুনসময়/এনএইচ