যে কারণে তীব্র গ্যাস সংকট
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের দুটি ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ)। ফলে অর্ধেকে নেমেছে এলএনজি সরবরাহ, যার প্রভাব পড়েছে জাতীয় গ্রিডে। ফলে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তীব্র আকার ধারণ করেছে গ্যাস সংকট। এ অবস্থা চলবে আরো অন্তত সপ্তাহ দুয়েক।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সতর্কতা অবলম্বন করলে এড়ানো যেত এলএনজি টার্মিনালের ক্ষতি; আর গ্রাহকদেরও পড়তে হতো না ভোগান্তিতে।
গ্যাস নিতে সিএনজি স্টেশনে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করতে। এটা মেনে নিয়েছেন চালক ও মালিকরা। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার সব স্টেশনে দেখা যায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। এতে সড়কে তৈরি হচ্ছে যানবাহনের চাপ; বাড়ছে যানজট।
গ্যাসের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি যেন দেশের সংকটময় জ্বালানি খাতের প্রতীকী রূপ। আর গ্যাসের এই সংকটের কারণে টান পড়ছে অনেকের রুটিরুজিতেও।
শুধু যানবাহনগুলোই যে গ্যাস সংকটে পড়েছে তেমন নয়, আবাসিকেও চলছে সংকটের তীব্রতা। বাধ্য হয়েই অনেককে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে এলপি গ্যাসের পেছনে।
দেশে বর্তমানে প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের যোগান দিতেই হিমশিম খাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। আর গত এক মাস ধরে সরবরাহ নেমে গেছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। আর এর মূল কারণ ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় ক্ষতিগ্রস্ত সামিটের এলএনজি টার্মিনাল গত ২৭ মে থেকে বন্ধ থাকা।
শুরুতে তিন সপ্তাহ পর স্বাভাবিক উৎপাদনে ফেরার কথা বলা হলেও এখন পেরিয়ে গেছে পাঁচ সপ্তাহেরও বেশি সময়। জ্বালানি বিভাগ এখন যে আভাস দিচ্ছে, তা তীব্র এ সংকট সইতে হবে আরো দুই সপ্তাহের বেশি সময়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় একমাস ধরে কাজ চলছে। আগামী ১৫-১৬ তারিখের দিকে যে গ্যাস সংকট থাকবে না।
আর এলএনজি টার্মিনালের মতো স্পর্শকাতর স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্তের পেছনে অসতর্কতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সালেক সুফি বলেন, ঝড়ের সময় যখন আমরা বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তা বাড়ালাম, সেই অবস্থায় একটা ভেসেল এসে আমাদের কেপিআইকে (তেল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি স্থাপনা) আঘাত করেছে। এটা দেখা উচিত কারও গাফলতির কারণে হয়েছে কি না। এর জন্য বড় মূল্য দিতে হচ্ছে।
এছাড়া, বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজস্ব গ্যাসের বাইরে আমদানিনির্ভরতাও ক্রমই ঝুঁকিপূর্ণ করছে জ্বালানি খাতকে।