ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২


১৪ বছর পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়


৯ অক্টোবর ২০১৮ ২১:০২

ফাইল ফটো

বুধবার (১০ অক্টোবর) ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা ২টি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে । ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ ও নারকীয় এই হামলার রায় ঘোষণার মাধ্যমে দেশবাসী আরও একটি কলঙ্ক থেকে মুক্ত হবে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন
মামলাটি রায় ঘোষনা করবেন বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন। আগামীকাল বুধবার সকাল ১১টার দিকে রায় ঘোষণা হতে পারে আদালত সূত্র জানায়।

উল্লেখ্য, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে সামান্যর জন্য প্রানে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ওই হামলায় প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী নিহত হন। মারাত্বকভাবে আহত হয় আরও ৩ শতাধিক নেতাকর্মী। আহতদের অনেককে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। এখনো গ্রেনেডের স্পিন্ট বহন করে চলছে অনেকেই।

এ হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানা পুলিশ হত্যা মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় বিষ্ফোরকদ্রব্য আইনেও আরেকটি মামলা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালের ৯ জুন সাবেক উপমন্ত্রী পিন্টু ও জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হয়। গ্রেনেডের উৎস এবং হামলার পরিকল্পনার পেছনে কারা জড়িত, তা উদ্ঘাটন না করেই তড়িঘড়ি করে চার্জশিট দেওয়া হয়। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুনঃরায় তদন্ত হয়। ২০০৯ সালে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত এবং ২০১১ সালে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

এ দুই মামলায় তারেক রহমান ও বাবর ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ৩০ জনকে নতুন আসামি করা হয়। মামলার আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২। বর্তমানে সংখ্যাটি ৪৯। মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল ইসলাম বিপুল ও আলী আহসান মুজাহিদের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ৩১ জন কারাগারে, ১৮ জন পলাতক রয়েছেন।

ঘটনার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালানো হয়। তবে সেসময় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান শেখ হাসিনা। তখন বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সমাবেশে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীরা মানব ঢাল তৈরী করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন। প্রাণে বেঁচে গেলেও শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে শেখ হাসিনার শ্রবণশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক দিন চিকিৎসাধীনও থাকতে হয় তাকে।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, তৎকালিন বিএনপি সরকারের খাজনা ঘর হিসেবে পরিচিত হাওয়া ভবনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার পরিকল্পনা করা হয়। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী, এমপি, তৎকালিন কিছু সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তারার সরাসরি সহযোগিতায় দুর্বিত্তরা এ হামলা পরিচালনা করে।

ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই রায়ের মাধ্যমে বর্বরতম হামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হতে যাচ্ছে। আসামিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে বলে আমরা আশা করি।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২১ আগস্টের এই হামলা করে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) সদস্যরা। হাওয়া ভবন ও চারদলীয় সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমণ্ডির বাসায় বসে এ হামলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। মামলার সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তৎকালীন জোট সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তারা।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি সমাপ্ত হলে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন রায় ঘোষণার তারিখ ১০ অক্টোবর নির্ধারণ করেন।

এসএমএন/ আইএমটি