কাদের মির্জার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিবাদমান বিরোধ, সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনায় সিএনজি চালক ও শ্রমিকলীগ কর্মী আলাউদ্দিন নিহতের ঘটনায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, তার ভাই শাহাদাত হোসেন ও ছেলে মির্জা মাসরুর কাদের তাসিককে।
আজ রোববার দুপুরে নিহতের ছোট ভাই মো. এমদাদ হোসেন বাদী হয়ে জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলা দায়ের করার সময় নিরাপত্তা জোরধার করতে আদালত প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ হাওলাদার এসব তথ্য জানান।
হারুনুর রশিদ জানান, নিহত আলাউদ্দিনের ভাই এমদাদ হোসেন বাদী হয়ে ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করে আমালী আদালত-২ এ একটি মামলা দিয়েছেন। আজ রোববার বিকেল ৩টায় মামলাটির শুনানি করবেন বিজ্ঞ বিচারক এস এম মোসলে উদ্দিন মিজান।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি মির্জা কাদেরের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা পিস্তল, শর্টগান, পাইপগান, রাম দা, লোহার রড নিয়ে অর্ধশতাধিক ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং প্রতিবাদ সভায় হামলা চালায়।
এ সময় মামলার চার নম্বর আসামি নাজিম উদ্দিন বাদল তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আলাউদ্দিনের পেটে গুলি করে মারাত্মক জখম করে। এরপর পাঁচ নম্বর আসামি নাজিম উদ্দিন মিকনসহ তাদের সমর্থকরা আলাউদ্দিনকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। পরে ছয় নম্বর আসামি মাঈন উদ্দিন কাঞ্চন তার হাতে থাকা লোহার রড আলাউদ্দিনের পেটের মধ্যে ডুকিয়ে দেয়। পরে হামলাকারীরা চলে গেলে আলাউদ্দিনকে উদ্ধার করে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন বাদী হয়ে ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে তা সংশোধন করতে হবে বলে অভিযোগটি রেকর্ডভুক্ত করেনি পুলিশ। পরদিন শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও থানায় ওসির দেখা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান এমদাদ।
এমদাদের অভিযোগ, মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, তার ভাই শাহাদাত হোসেন ও ছেলে মির্জা মাসরুর কাদের তাসিককে আসামি করায় তার মামলাটি নেয়নি পুলিশ। এ ছাড়া তাদের নাম ওই এজাহার থেকে বাদ দেওয়ার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জে চলমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরীর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংঘর্ষে নিহত শ্রমিক লীগ কর্মী আলা উদ্দিন হত্যার 'মাস্টার মাইন্ড' মেয়র কাদের মির্জাকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং গ্রেপ্তারকৃত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত দেড় মাস ধরে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের বিরোধ চলছে। এ নিয়ে উপজেলায় অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একাধিকবার দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গত মঙ্গলবার সিএনজি চালক ও শ্রমিক লীগ কর্মী আলা উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।